নামাজ ইসলামের প্রধান ইবাদত। আবার কুরআন তেলাওয়াতও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। আর নামাজে কুরআন তেলাওয়াত করা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নামাজে কুরআন পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলতের বিষয়টি হাদিসের একাধিক বর্ণনায় ওঠে এসেছে।
এমনিতে শুধু কুরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। হাদিসে পাকে এসেছে-
১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব (কুরআন) থেকে একটি অক্ষর পড়বে, সে একটি কল্যাণ লাভ করবে। আর এ কল্যাণ ১০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত হয়। আমি বলছি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি অক্ষর; বরং আফিল- একটি অক্ষর; লাম- একটি অক্ষর; মীম- একটি অক্ষর। (তিরমিজি)
২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কুরআন যার নিত্যসঙ্গী; তাকে (কুরআনের এ সহচরকে) বলা হবে- (কুরআন) পাঠ কর আর ওপরে ওঠো। ধীরস্থিরভাবে পাঠ কর, যেভাবে ধীরস্থিরভাবে দুনিয়াতে পাঠ করতে; তুমি সর্বশেষ যে আয়াতটি পাঠ করবে; সেটিই হবে তোমার আবাস। (আবু দাউদ)
তবে নামাজে কুরআন পাঠের ফজিলত কী? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসের একাধিক বর্ণনায় নামাজে কুরআন পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করেছেন। তাহলো-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ কি পছন্দ করে যে, সে তার পরিবারের কাছে ফিরে এসে দেখবে- তার তিনটি বড় আকারের নাদুস-নুদুস গর্ভবর্তী (অতি মূল্যবান মরুভূমির জাহাজখ্যাত) উষ্ট্রী আছে? আমরা বলি- হ্যাঁ আমরা দেখতে চাই। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাহলে তোমাদের কেউ যদি নামাজে তিনটি (কুরআনের) আয়াত পাঠ করে; তবে তা হবে তার জন্য তিনটি বড় আকারের নাদুস-নুদুস গর্ভবর্তী উষ্ট্রীর চেয়েও উত্তম। (মুসলিম)
২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এ ফরজ নামাজগুলো সঠিকভাবে আদায় করবে; গাফেলদের তালিকায় তার নাম লেখা হবে না। আর যে ব্যক্তি এক রাতে ১০০ (একশ) আয়াত পাঠ করবে; গাফেলদের তালিকায় তার নাম লেখা হবে না অথবা তার নাম লেখা হবে বিনয়ী লোকদের তালিকায়। (ইবনে খুজায়মা,মুসতাদরেকে হাকেম)
৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি (রাতের) নামাজে দাঁড়িয়ে ১০ আয়াত পাঠ করবে; গাফেলদের তালিকায় তার নাম লেখা হবে না। আর যে ব্যক্তি (রাতের) নামাজে দাঁড়িয়ে ১০০ আয়াত পাঠ করবে; তার নাম লেখা হবে বিনয়ী লোকদের তালিকায়। আর যে ব্যক্তি (রাতের) নামাজে দাঁড়িয়ে ১ হাজার আয়াত পড়বে; তার নাম লেখা হবে বিপুল সাওয়াবের অধিকারী লোকদের তালিকায়। (আবু দাউদ)
৪. হজরত তামিম দারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এক রাকাআতে (কুরআনের) একশ আয়াত পাঠ করবে; তার আমল নামাজ এক রাত আল্লাহর সামনে বিনীত থাকার সাওয়াব লেখা হবে। (মুসনাদে আহমাদ)
নামাজে কুরআন তেলাওয়াত আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের কার্যকারী আমল। যে আমলের কারণে বান্দা আল্লাহর দফতরে বিনয়ীর মর্যাদা পায়।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নামাজে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা। দীর্ঘ বা লম্বা কেরাতে নামাজ পড়া। বিশেষ করে রাতের নফল নামাজে কুরআনুল কারিমের বেশি বেশি আয়াত তেলাওয়াত করা। এর বিনিময়ে হাদিসে ঘোষিত ফজিলত পাওয়ার চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফরজ কিংবা নফল নামাজে বেশি বেশি আয়াত তেলাওয়াত করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।