যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

ফজরের নামাজ কখন পড়বেন?

নির্ধারিত সময়ে নামাজ পড়ার দিকনির্দেশনা এসেছে কোরআনে। ফজর নামাজ দিয়েই দিনের শুরু হয়। কিন্তু ফজরের নামাজের নির্ধারিত সময় কখন? ফজরের ওয়াক্ত সম্পর্কে হাদিসের দিকনির্দেশনাগুলোই বা কী?

সময় মতো নামাজ পড়ার দিকনির্দেশনা দিয়ে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
فَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا <অতঃপর নামাজ ঠিক করে পড়। নিশ্চয়ই নামাজ মুসলমানদের উপর ফরজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। (সুরা নিসা : আয়াত ১০৩)

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আল্লাহ তাআলা যখনই কোনো ফরজ (নামাজ) তার বান্দাদের উপর অবধারিত করেন; তখনই তার একটা (সময়) সীমাও নির্ধারণ করে দেন। তারপর (একান্তই) যারা সেটা করতে সক্ষম হবে না তাদের ভিন্ন পথ বাতলে দিয়েছেন। এর ব্যতিক্রম হচ্ছে- আল্লাহর জিকির। এই জিকিরের ব্যাপারে যতক্ষণ কেউ সুস্থ বিবেকসম্পন্ন থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তাআলা কাউকে ওজর আপত্তি পেশ করার সুযোগ দেননি। সর্বাবস্থায় তাকে জিকির করতে হবে। রাত-দিন, জলস্থল, চালিয়ে যেতে হবে। এ আয়াতের এটাই ভাষ্য। (তাফসিরে তাবারি)তাই কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব ও ইশার নামাজ নির্ধারিত সময়ই আদায় করতে হবে। ফজরের নামাজ কখন আদায় করতে হবে। এর সময়সীমা কতক্ষণ? হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নামাজেরর প্রথম ও শেষ সময় রয়েছে। জোহরের নামাজের প্রথম সময় হচ্ছে যখন সূর্য হেলে যাবে। আর শেষ সময় হচ্ছে, আসরের ওয়াক্ত প্রবেশ করা পর্যন্ত। অনুরূপভাবে আসরের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন এর ওয়াক্ত হবে। আর তার শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত। তদ্রুপ মাগরিবের প্রথম সময় হচ্ছে যখন সূর্য ডুবে যায়। তার শেষ সময় হচ্ছে, যখন দিগন্ত রেখা চলে যায়। আর ইশার প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন দিগন্ত রেখা চলে যায়। আর শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে, মধ্য রাত পর্যন্ত। ফজরের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন সুবহে সাদিক উদিত হয়। আর শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন সূর্য উদিত হয়।& (তিরমিজি)

ফজরের ওয়াক্ত সম্পর্কে হাদিনের নির্দেশনা সুবহে সাদেক থেকে ফজরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। রোজাদারের জন্য পানাহার নিষিদ্ধের সময়ও এটি। আর সুবহে সাদেক বলা হয় সেই সময়কে, যে সময়ে ভোরের আভা পূর্ব আকাশে উত্তর-দক্ষিণে বিস্থির্ণ অবস্থায় দেখা যায়। আর এর শেষ সময় হল সূর্যোদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত।

হাদিসের একাধিক বর্ণনায় ফজরের নামাজের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই নামাজ প্রথম ওয়াক্তে গালাসে (একটু অন্ধকার অন্ধকার ভাব সময়ে) পড়া উত্তম। হাদিসে এসেছে-
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাজ পড়তেন। অতঃপর মহিলারা তাদের চাদর জড়িয়েই নিজ নিজ বাসায় ফিরে যেতেন। কিন্তু অন্ধকারের জন্য তাদেরকে চেনা যেত না। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

২. হজরতআবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাজ পড়লেন, যখন কেউ তার পাশ্ববর্তী সঙ্গীর চেহারা চিনতে পারত না অথবা তার পাশে কে রয়েছে তা জানতে পারত না। (আবূ দাউদ)

৩. হজরত আবু মাসউদ আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি (রাসুলুল্লাহ) একবার ফজরের নামাজ অন্ধকারে (খুব ভোরে) পড়লেন। অতঃপর দ্বিতীয় বার ফর্সা করে পড়লেন। এরপর তাঁর ফজরের নামাজ অন্ধকারেই হত। আর তাঁর ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত কোনো দিন পুনরায় (ফজরের নামাজ) ফর্সা করে পড়েননি। (আবু দাউদ)

তবে এতো ভোরে ফজর পড়া যাবে না; যে সময় ফজরের ওয়াক্ত হয়নি। এ কারণেই অন্য হাদিসে এসেছে-
৪. আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা ফজরের নামাজ ফর্সা করে পড়। কারণ, তাতে সাওয়াব অধিক। (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ, মিশকাত)

অর্থাৎ ফজরের সময় নিশ্চিত হতে হবে। নিশ্চিতরূপে ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার বিষয়টি না জেনে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। অথবা তোমরা ফজরের নামাজ লম্বা ক্বিরাআতে ফর্সা করে পড়। এতে অধিক সাওয়াব লাভ হবে।কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এই নামাজে (কখনো কখনো) ৬০ থেকে ১০০ আয়াত পর্যন্ত পড়তেন এবং যখন নামাজ শেষ করতেন, তখন প্রত্যেকে তার পাশের সাথীকে চিনতে পারত। (বুখারি)

হাদিস বিশারদদের বর্ণনায় বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, যেহেতু তাঁর আমল মৃত্যু পর্যন্ত ফজরের নামাজ ফর্সা করে ছিল না, বরং এ নামাজ তিনি একটু অন্ধকার থাকতেই শুরু করতেন, তাই অন্ধকার ও ফর্সায় ফজর পড়ায় কোনো বৈষম্য নেই। বরং ফজর সুবহে সাদেকে অন্ধকার থাকতেই শুরু করা যুক্তিযুক্ত। আর নামাজ শেষ করতে করতে অনেক সময় আকাশ ফর্সা হয়ে যেত।

তাহলে ফজরের ওয়াক্তের সময়গুলো হলো- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাজ আদায় করলেন, যখন ভোর বিদ্যুতের মত আলোকিত হল এবং যে সময় রোজাদারের ওপর পানাহার হারাম হয়।
ফজরের নামাজ আদায় করলেন, যখন জমিন আলোকিত হয়ে গেল। অতঃপর জিবরিল আলাইহিস সালাম আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হে মুহাম্মদ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটাই হলো আপনার আগে আগমনকারী নবিদের (নামাজের) ওয়াক্ত বা সময়। নামাজের ওয়াক্ত এ দুই সীমার মাঝে সীমাবদ্ধ। (তিরমিজি, আবু দাউদ, মিশকাত) এ হাদিসটি হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ আরো অনেকে বর্ণনা করেছেন।
ফজরের নামাজের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে যখন ভোর শুরু হয় এবং তার ওয়াক্ত শেষ হয় যখন সূর্য ওঠা শুরু হয়। (তিরমিজি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ফজরের নামাজ সুবহে সাদেকের পর সঠিক ওয়াক্ত নিশ্চিত হয়ে পড়া। নির্ধারিত সময়ে নামাজ পড়ে কুরআনের নির্দেশ বাস্তবায়ন করা।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফজরের নামাজ যথাসময়ে পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।