মুসলমানদের বৈধ উপায়ে অর্জিত ধন-সম্পদ ও নেক সন্তান-সন্তুতি মানুষের দুনিয়া ও পরকালে কাজে আসে কিন্তু অমুসলিম-অবিশ্বাসীদের কোনো ধন-সম্পদ কিংবা সন্তান-সন্ততি তাদের মৃত্যুর পর তাদের আল্লাহর সামনে কোনো কাজে আসবে না। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ এমনটিই ঘোষণা করেছেন-
اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَنۡ تُغۡنِیَ عَنۡهُمۡ اَمۡوَالُهُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُهُمۡ مِّنَ اللّٰهِ شَیۡـًٔا ؕ وَ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ নিশ্চয়ই যারা কুফরি করে, আল্লাহর সামনে তাদের ধন-সম্পদ কোনো কাজে আসবে না আর তাদের সন্তান-সন্ততিও কোনো কাজে আসবে না। আর তারাই (জাহান্নামের) আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১১৬)
مَثَلُ مَا یُنۡفِقُوۡنَ فِیۡ هٰذِهِ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا کَمَثَلِ رِیۡحٍ فِیۡهَا صِرٌّ اَصَابَتۡ حَرۡثَ قَوۡمٍ ظَلَمُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ فَاَهۡلَکَتۡهُ ؕ وَ مَا ظَلَمَهُمُ اللّٰهُ وَ لٰکِنۡ اَنۡفُسَهُمۡ یَظۡلِمُوۡنَ
তারা দুনিয়ার জীবনে যা ব্যয় করে, তার উপমা সেই বাতাসের ন্যায়, যাতে রয়েছে প্রচন্ড ঠান্ডা, যা পৌঁছে এমন কওমের শস্যক্ষেতে, যারা নিজদের উপর জুলুম করেছিল। অতঃপর তা শস্যক্ষেতকে ধ্বংস করে দেয়। আর আল্লাহ তাদের উপর জুলুম করেননি, বরং তারা নিজেরাই নিজদের উপর জুলুম করে। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১১৭)
আয়াতের ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ
নিশ্চয়ই যারা অবিশ্বাসী হয়েছে, তাদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি আল্লাহর শাস্তির মোকাবেলায় বিন্দুমাত্রও ফলপ্রদ হবে না। তারা জাহান্নামের আগুনের অধিবাসী। তাতে তারা সর্বদা অবস্থান করবে কখনও মুক্তি পাবে না। তারা দুনিয়ার জীবনে যা ব্যয় করে, তার দৃষ্টান্ত নিষ্ফল ও বরবাদ হওয়ার ব্যাপারে ঐ বাতাসের মতো; যাতে প্রবল শৈত্য তুষার থাকে। বাতাসটি ঐ সব লোকের শস্য ভূমিতে লাগে যারা নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছে। এরপর বাতাসটি শস্যভূমিকে ধ্বংস করে দেয়। এমনিভাবে তাদের ব্যয় করা ধন-সম্পদও পরকালে ধ্বংস হয়ে যাবে। এ ধ্বংস করার ব্যাপারে মহান আল্লাহ অবিশ্বাসীদের প্রতি কোনো অন্যায় করেননি বরং তারা স্বয়ং কুফর করে নিজেদের ক্ষতি করেছে। যে কারণে তা কবুল হয় না। যদি তারা আল্লাহর সঙ্গে কুফর না করতো তবে তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় নিষ্ফল হতো না।
প্রসঙ্গিক আলোচনা
কেয়ামতের দিন কাফেরদের ধন-সম্পদ না কোনো উপকারে আসবে, না তাদের সন্তান-সন্তুতি; এমন কি বাহ্যিকভাবে জন-সাধারণের কল্যাণ ও মঙ্গলের কাজে যে সব অর্থ ব্যয় করে, তাও ব্যর্থ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টি সম্পর্কে তাদের পরিণতিসহ সুরার শুরুতেও তুলে ধরেছেন এভাবে-
اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَنۡ تُغۡنِیَ عَنۡهُمۡ اَمۡوَالُهُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُهُمۡ مِّنَ اللّٰهِ شَیۡئًا ؕ وَ اُولٰٓئِکَ هُمۡ وَقُوۡدُ النَّارِ নিশ্চয়ই যারা কুফরি করে তাদের মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর আজাব থেকে কখনও কোনো কাজে আসবে না এবং তারাই আগুনের জ্বালানি। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০)
পরবর্তী আয়াতে তাদের সম্পদ ব্যয়ের তুলনা এভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে, এগুলো সেই প্রচন্ড ঠান্ডা অথবা গরম প্রবল ঝড়ো হাওয়ার মতো, যা সবুজ-শ্যামল শস্যভূমিকে ধ্বংস করে দেয়। অত্যাচারী তো এই ভূমি দেখে বড়ই আনন্দবোধ করে এবং তার লাভের প্রতি চরম আশাবাদী থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে তার সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা মাটিতে মিশে যায়। এ থেকে জানা গেল যে, কল্যাণ ও মঙ্গলের কাজে অর্থ ব্যয়কারীদের দুনিয়াতে যতই প্রশংসাই করা হোক না কেন, ঈমান না আনা পর্যন্ত আখেরাতে তারা এ সব কাজের কোনোই প্রতিদান পাবে না। সেখানে আছে তাদের জন্য জাহান্নামের চিরন্তন শাস্তি।
আল্লাহ তাআলার এ বিষয়টি জুলুম নয়। তা এভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে, তারা যা কিছু পার্থিব জীবনে ব্যয় করে, তার দৃষ্টান্ত হিম-শীতল ঝঞ্জা বায়ুর মতো। যা যে জাতি নিজেদের প্রতি অত্যাচার করেছে, তাদের শস্যভূমিকে আঘাত করে ও তা বিনষ্ট করে দেয়। বস্তুত মহান আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুম করেন না, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করে থাকে।
এ সবই মুমিন মুসলমানের জন্য দৃষ্টান্ত ও অনুপ্রেরণা। ঈমানদার ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে আয় করা সম্পদ ও নেক সন্তান-সন্ততিই মহান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য। এ ছাড়া বাকি সবই বিফল। সুতরাং এ আয়াত দুইটি মুসলিম উম্মাহর জন্য সতর্কবার্তা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের সতর্কতা নিজেদের জীবনে গ্রহণ করে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। কোরআনের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।