Islamic News BD - The Lesson of Peace
রাগ নিয়ন্ত্রণের সর্বোত্তম আমলগুলো কী?
বুধবার, ০২ নভেম্বর ২০২২ ১৭:৩৫ অপরাহ্ন
Islamic News BD - The Lesson of Peace

Islamic News BD - The Lesson of Peace

হজরত ওসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাগ নিযন্ত্রণের সর্বোত্তম চিকিৎসা হলো চুপ হয়ে যাওয়া। এটি রাগ নিয়ন্ত্রণের সর্বোত্তম আমলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। এ ছাড়াও রাগ নিয়ন্ত্রণের অনেক উপায় আছে্। কী সেই সব উপায়?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন সে প্রকৃত বীর নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয় বরং সে-ই প্রকৃত বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। (বুখারি)

মানুষের রাগ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এ রাগ দমন করা অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু রাগ যখন সব কিছু ধ্বংসের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখনই একটি জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। রাগের কারণে অন্যের ক্ষতি করা হয়। রাগ ও ঝগড়া থেমে গেলে বোঝা যায় রাগের কারণে কতটা ক্ষতি হয়ে গেছে।

রাগ যেহেতু দমন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আর যে ব্যক্তি তা করতে সক্ষম হবে সেই দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম। রাগ দমনকারীদের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন-

وَ الۡکٰظِمِیۡنَ الۡغَیۡظَ وَ الۡعَافِیۡنَ عَنِ النَّاسِ ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, (তারাই মহসিন বা সৎকর্মশীল) বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরই ভালোবাসেন। (সুরা ইমরান : আয়াত ১৩৪)

 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

কোরআন এবং হাদিস আলোকে কিছু দোয়া এবং উপায় প্রয়োগে রাগ নিয়ন্ত্রণ হয়। তাহলো-

১. তাআউজ পড়া শয়তানের কলা-কৌশল দূর করার জন্য সবচেয়ে ধারাালো তরবারী হলো তাআউহ পড়া। যেমনটি আল্লাহ তাআলা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শিক্ষা দিয়েছেন। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের বর্ণনায় এসেছে-

 

وَ قُلۡ رَّبِّ اَعُوۡذُ بِکَ مِنۡ هَمَزٰتِ الشَّیٰطِیۡنِ

বল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্র্থনা করি শয়তানের প্ররোচনা থেকে। (সুরা মুমিনুন : আয়াত ৯৭)

 

২. অজু করা

রাগ হলে মানুষের শরীরে একটা উত্তাপ সৃষ্টি হয়। শিরা-উপশিরা ফুলে ওঠে। উত্তপ্ততা অগ্নিরই একটি রূপের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আর আগুন পানি দ্বারা নির্বাপিত হয়। অতএব, কারো রাগ সৃষ্টি হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা নিবারণের জন্য সাথে-সাথে অজু করার নির্দেশ দিতেন। তাই অতিরিক্ত রাগ এলে ঠান্ডা পানি পান করা, অজু বা গোসল করা। হাদিসে পাকে সুস্পষ্টভাবে এসেছে-

হজরত আতিয়্যাহ ইবনে উরওয়াহ সাদি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে এবং শয়তানকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আগুন পানি দ্বারা নেভানো যায়। সুতরাং যখন তোমাদের কারো রাগ আসে তবে সে যেন অজু করে।(আবু দাউদ ২/৬৬০) ৩. রাগী ব্যক্তির বসে কিংবা শুয়ে পড়া

রাগের সময় দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসে যাওয়া কিংবা শুয়ে পড়ার নির্দেশ দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, শয়তানের প্ররোচনা বা স্বভাবগত প্রতিক্রিয়া হলো, গর্ব-অহংকার সৃষ্টি করা। আর বসা কিংবা শোয়ার মধ্যে ইঙ্গিত হলো, মাটির সঙ্গে মিশে নিজেকে বিনয়ের সাথে মাটি করে ফেলা এবং সঙ্গে সঙ্গে মনের মধ্যে এ ধারণা সৃষ্টি করা যে, আমি তো মাটিরই তৈরি। মাটির স্বভাব তো নিম্নগামী। কাজেই রাগ-ক্রোধ যা শয়তানের স্বভাবগত প্রক্রিয়া সেটি আমার মাঝে রাখা উচিত নয়। তাই রাগী দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে বসে পড়বে, আর বসা থাকলে শুয়ে পড়বে। যেমনটি হাদিসে এভাবে এসেছে-

হজরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যখন তোমাদের কারো রাগ বা ক্রোধ হয়, তখন সে যেন বসে পড়ে। তাও যদি রাগ না কমে তবে সে যেন চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে।(আবু দাউদ ২/৬৫৯)

৬. রাগ অবস্থায় চুপ থাকা। যাতে করে রাগ বিজয়ী হতে না পারে। অন্যথায় মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব রইলো কোথায়? এবং সর্বদা রাগ দমনকারীর পুরস্কারের কথা স্মরণ করা। তাছাড়া এক হাদিসে এসেছে, যখন তুমি রাগান্বিত হবে তখন চুপ থাকবে।(আল-আদাবুল মুফরাদ ১৩২০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রাগ থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।