যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

জান্নাত ও জাহান্নাম এর সংবাদপ্রাপ্ত নারী-পুরুষগণ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়াতে যে সব নারী ও পুরুষদের জান্নাতি বা জাহান্নামী বলে ঘোষণা করেছেন বা যারা দুনিয়াতে জীবিত থাকতেই জান্নাতলাভের সু-সংবাদ অথবা জাহান্নামের দুঃসংবাদ পেয়েছেন এ নিবন্ধে আমরা তাদের নাম দলিল-প্রমাণ সহকারে উল্লেখ করতে চেষ্টা করব। একটি হাদিসে একত্রে দশজন সাহাবীর কথা উল্লেখ করে তাদের জান্নাতি বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিয়েছেন। অনেকে মনে করেন, দুনিয়াতে কেবল এ দশজন সাহাবীকেই জান্নাতের সু-সংবাদ দেয়া হয়েছে আর কাউকে জান্নাতের সু-সংবাদ দেয়া হয়নি। কিন্তু না, এ দশজনের বাহিরেও আরও কতক পুরুষ ও নারী সাহাবী আছেন, যাদের আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন না কোন কারণে দুনিয়াতে জান্নাতের সু-সংবাদ দিয়েছেন। তিনি তাদের কাউকে জান্নাতি, জান্নাতের সরদার, জান্নাতের বয়স্ক লোকদের সরদার ইত্যাদি বলে ঘোষণা করছেন। নিম্নে আমরা দুনিয়াতে যাদেরকে জান্নাতের সু-সংবাদ এবং জাহান্নামের দুঃসংবাদ দেয়া হয়েছে, এমন পুরুষ ও নারীদের  বিষয়ে একটি আলোচনা দলীল-প্রমাণ সহকারে তুলে ধরার চেষ্টা করব। আল্লাহই তাওফিক দাতা।

এখানে একটি বিষয় খুবই জরুরী যে, যাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতী বলে ঘোষণা করেছেন, তাদের মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কোনো সিফাত, কুরবানী ও গুরুত্বপূর্ণ আমল প্রত্যক্ষ্য করেছেন বলেই তাদের বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন প্রেক্ষপটে এ ধরনের ঘোষণা দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আমল, কুরবানী ও ত্যাগের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বলেছেন যে লোকটি জান্নাতী। এ ধরনের ঘোষণা প্রেক্ষাপটে আমাদের করনীয় হল, যে গুণ, আমল, কুরবানী ও ত্যাগের কারণে লোকটি জান্নাতী হল বা রাসূল তাকে জান্নাতী বলে সু-সংবাদ ও ঘোষণা দিলেন, সে আমল, কুরবানী ও গুণে গুণান্বিত হয়ে আমিও রাসূলের সু-সংবাদের আওতাভুক্ত হতে পারি। আমার জন্যও জান্নাত অবধারিত হতে পারে। কারণ, আমল করার কারণে একজন জান্নাতী হয়, সে আমল যদি উম্মতের কোন লোক করে থাকে তাহলে অবশ্যই সেও জান্নাতী হবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন:
সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করা হবে। তার পূর্বে আর কারও জন্য জান্নাতের দরজা খোলা হবে না। প্রমাণ-

“আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন, কিয়ামতের দিন আমি (সর্বপ্রথম) জান্নাতের দরজার সামনে আসব এবং তা খুলতে বলব, দ্বাররক্ষী (ফেরেশতা) বলবে কে তুমি? আমি বলব: মুহাম্মদ, তখন সে বলবে আমাকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আপনার পূর্বে আর কারো জন্য দরজা না খুলতে।[1]”
আরও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

“আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশি উম্মত আমার হবে। আর আমি সর্ব প্রথম জান্নাতের দরজায় করাঘাত করব।[2]”

আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা জান্নাতি বয়স্কদের সরদার:
আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমাঐ সমস্ত জান্নাতিদের সরদার হবেন, যারা বয়স্ক বয়সে ইন্তেকাল করেছেন। প্রমাণ-

“আলী ইবন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সাথে ছিলাম হঠাৎ করে আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমাও চলে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবললেন, তারা উভয়ে বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুবরণকারী মুসলিমদের সরদার হবে- তারা পূর্ববর্তী উম্মতের লোক হোক আর পরবর্তী উম্মতের। তবে নবী রাসূলগণ ব্যতীত। হে আলী, তুমি এ সংবাদ তাদেরকে দিও না।[3]”

হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা জান্নাতি যুবকদের সরদার:
হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমাজান্নাতে ঐ সমস্ত লোকদের সরদার হবে যারা যৌবনকালে মৃত্যুবরণ করেছে। প্রমাণ-

“আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: হাসান হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমাজান্নাতি যুবকদের সরদার হবে।[4]

দশজন জান্নাতি সাহাবী যাদের রাসূল সা. জান্নাতি বলে ঘোষণা দেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামদশজন সাহাবীকে নাম উল্লেখপূর্বক দুনিয়াতেই জান্নাতি হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন। তাদেরকে আশারা মুবাশ্শারা বলা হয়। প্রমাণ-

“আব্দুর রহমান ইবন আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: আবুবকর জান্নাতি, ওমর জান্নাতি, ওসমান জান্নাতি, আলী জান্নাতি, তালহা জান্নাতি, যুবাইর জান্নাতি, আবদুর রহমান ইবন আওফ জান্নাতি, সা‘দ ইবন আবূ ওক্কাস জান্নাতি, সাঈদ ইবন যায়েদ জান্নাতি, আবু ওবাইদা ইবনুল জাররাহ জান্নাতি।[5]

ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জান্নাতে একটি প্রাসাদের সু-সংবাদ প্রদান:
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামজান্নাতে একটি ঘরের সুসংবাদ দিয়েছেন এবং তিনিজান্নাতে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু’র প্রাসাদ ও ঠিকানা দেখে এসেছেন।

“আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমরা একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর নিকট ছিলাম তখন তিনি বললেন: আমি ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলাম হঠাৎ করে আমি আমাকে জান্নাতে দেখতে পেলাম? আমি একটি অট্টালিকার পাশে এক মহিলাকে ওজু করতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম যে, এ অট্টালিকাটি কার? তারা বলল: এটা ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু’র। আমি তখন তার আত্মমর্যাদা বোধের কথা চিন্তা করলাম।