যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

মানুষের জীবনে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র গুরুত্ব ও মর্যাদা

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা। মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর প্রভাব, গুরুত্ব, মর্যাদা এবং ফজিলত অনেক বেশি। মুসলিম উম্মাহ তাদের আজান, ইকামাত, বক্তৃতা-বিবৃতি এবং আলোচনা-সভা-সমাবেশে বলিষ্ঠ কণ্ঠে এ সত্য ঘোষণা দেন- আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।তাওহিদের ঘোষণটি শুধু এ যুগের মানুষের জন্যই নয় বরং আসমান-জমিনসহ সমগ্র মাখলুকত সৃষ্টি হয়েছে এ কালেমার জন্য। এর প্রচার-প্রসারে যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রাসুল আগমন করেছেন। মানুষের জীবনে এ কালেমার রয়েছে অসংখ্য প্রভাব। কে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর অনুসারি আর কে এর বিরোধিতাকারী এসব নির্ধারণে আল্লাহ তাআলা নাজিল করেছেন আসমানি কিতাব, দিয়েছেন অসংখ্য বিধান।এ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর জন্যই পরকালের মিজান, হাশর, পুলসিরাত ও কেয়ামতের দিনের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব অনুষ্ঠিত হবে। তাওহিদের কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লায় হবে জান্নাত এবং জাহান্নামের চূড়ান্ত ফয়সালা।লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সেই কালেমা; যার স্বীকার আর অস্বীকারের মাধ্যমে ঈমানদার আর কুফরে পাথর্ক্য হবে মানুষ। সৃষ্টি জগতের প্রতিটি মানুষের জীবনে এ কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর একচ্ছত্র প্রভাবই বেশি। এর উপরই নির্ভর করে সব পুরস্কার ও তিরস্কার।এ কালেমার ভিত্তিতেই মানুষ পাবে সওয়াব ও শাস্তি। এ ঘোষণা প্রতিষ্ঠার উপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয় মুসলমানদের কেবলা। এ কালেমার আহ্বানেই মুসলমানের হাতে শোভা পায় খাপ থেকে বের হয়ে আসা খোলা তরবারি। এ কালেমাই হবে মানুষের সব প্রাপ্তি ও বিসর্জনের কারণ। এ কালেমার ব্যাপারে শুরু থেকে শেষ সব নবি-রাসুল ও অনুসারীরা আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসিত হবে। যারা এর সঠিক জিম্মাদারি পালন করতে পেরেছেন এবং পারবেন তারাই হবে সফল। আর যারা এর জিম্মাদারিতে দূরে তারা হবেন চরম লাঞ্ছিত ও অপমানিত।

লা ইলাহা ইল্লাল্লার স্বীকৃতির জিজ্ঞাসাবাদ

চিন্তার বিষয়, আল্লাহ কেয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকেই জিজ্ঞাসা করবেন- তুমি কার ইবাদত করেছ? নবি-রাসুলদের আহ্বানে কতটুকু সাড়া দিয়েছ? এ প্রশ্নের উত্তর সব ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলক দিতেই হবে।প্রথম প্রশ্নের সঠিক উত্তর হলো- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহকে (لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ) ভালোভাবে জেনে এর স্বীকৃতি দেওয়া এবং কালেমা দাবি অনুযায়ী কাজ করা।দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হলো- মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসুল হিসাবে মেনে তাঁর নির্দেশের আনুগত্য করা।

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের নসিহত

যুগে যুগে এ কালেমার স্বীকৃতি ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন অসংখ্য নবি-রাসুলগণ। এ কালেমাই রেখে গেলেন গেছেন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। কোরআনে এসেছে-

وَ جَعَلَهَا کَلِمَۃًۢ بَاقِیَۃً فِیۡ عَقِبِهٖ لَعَلَّهُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ

;এ ঘোষণাকে সে চিরন্তন বাণীরূপে তার পরবর্তীদের জন্য রেখে গেছে; যাতে ওরা (সৎপথে) প্রত্যাবর্তন করে।(সুরা যুখরুফ : আয়াত ২৮)

আল্লাহ ও ফেরেশতা কর্তৃক কালেমার সাক্ষ্য

এই সেই কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ যার সাক্ষ্য দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নিজে, ফেরেশতা এবং জ্ঞানীগণও দিয়েছেন-

شَهِدَ اللّٰهُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۙ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ وَ اُولُوا الۡعِلۡمِ قَآئِمًۢا بِالۡقِسۡطِ ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ

আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই, আর ফেরেশতা ও জ্ঞানীগণও। তিনি ন্যায় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮)

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর প্রচার

এই কালেমা প্রচারের জন্যই আল্লাহ তাআলা সব রাসুল এবং আসমানি কিতাবসমূহ পাঠিয়েছেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে কোরআনে এ কথাটি এভাবে বলেছেন-

وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا نُوۡحِیۡۤ اِلَیۡهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدُوۡنِ আর আপনার আগে এমন কোনো রাসুল আমি পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই অহি নাজিল করিনি যেআমি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই সুতরাং তোমরা আমার ইবাদাত করো। (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ২৫)

আল্লাহ তাআলা অন্যত আরো বলেন-

یُنَزِّلُ الۡمَلٰٓئِکَۃَ بِالرُّوۡحِ مِنۡ اَمۡرِهٖ عَلٰی مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖۤ اَنۡ اَنۡذِرُوۡۤا اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاتَّقُوۡنِ

;তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় নির্দেশে অহিসহ (প্রত্যাদেশ) ফেরেশতা নাজিল করেন, এই মর্মে সতর্ক করার জন্য যে- আমি ছাড়া কোনো (সত্য) উপাস্য নেই সুতরাং তোমরা আমাকে ভয় করো। (সুরা নাহল : আয়াত ২)