যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

 ঘুষের ভয়াবহতা ও তা থেকে উত্তরণের উপায়

ঘুষ একটি সামাজিক ব্যাধি। ঘুষ হচ্ছে স্বাভাবিক ও বৈধ উপায়ে যা কিছু পাওয়া যায় তার উপর অবৈধ পন্থায় অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করা। কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী তার দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়মিত বেতন/ভাতা পাওয়া সত্ত্বেও যদি বাড়তি কিছু অবৈধ পন্থায় গ্রহণ করে তাহলে তা ঘুষ হিসাবে বিবেচিত। অনেক সময় স্বীয় অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ঘুষ দেওয়া হয়। আবার অনেক সময় টাকা-পয়সা ছাড়াও উপহারের নামে নানা সমগ্রী প্রদান করা হয়। সুতরাং যেভাবেই হোক, আর যে নামেই হোক তা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
ঘুষ প্রদানকারী ও গ্রহণকারী উভয়ের উপরই আল্লাহর লানত।

সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল পদে থেকে হারাম অর্থ গ্রহণই হচ্ছে ঘুষ। এই ঘুষ যারা দেয় তারাও সমান অপরাধী। বেআইনী ফায়দা হাসিলের জন্য যারা কর্তাব্যক্তিদেরকে বিভিন্ন সুবিধা বা টাকা পয়সা দিয়ে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করে তারাই এই গুনাহ সংঘটনের অন্যতম শরীক। যারা ঘুষকে একটি অঘোষিত ব্যবস্থা হিসেবে প্রশ্রয় দেয় তারাই অপরাধী। দেখা যায় মাঝে মধ্যে বেড়াই ক্ষেত খায়, রক্ষকই হয় ভক্ষক। ন্যায়কে যাদের লালন করার কথা তারাই অন্যায়কে ধারণ করছে। এভাবে দুর্নীতির ডালপালা সারা দেশে বিস্তার লাভ করে।

ঘুষ বা উৎকোচ আসে নজরানার রূপ ধরে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবীকে কর্মচারী নিয়োগ করে যাকাত আদায়ের জন্য পাঠালেন। সে ফিরে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, এটা যাকাতের মাল আর এটা আমাকে উপঢৌকনস্বরূপ দেওয়া হয়েছে। এতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন- সরকারী কর্মচারীর কি হলো! আমরা যখন তাকে কোনো দায়িত্ব দিয়ে কোথায়ও প্রেরণ করি তখন সে ফিরে এসে বলে এই মাল আপনাদের (সরকারের) এবং এটা আমাকে প্রদত্ত উপহার। সে তার বাড়িতে বসে থেকে দেখুক তাকে উপহার দেওয়া হয় কি-না।

একবার এক সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে কিছু উপহার দিলেন। উপহারগুলো দেখে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন- তুমি যে বললে এগুলো বায়তুলমালের আর এগুলো আমার উপহার! তুমি এই পদ ছেড়ে বাপের ঘরে বসে থাক, দেখ তো কে তোমার জন্য উপহার নিয়ে আসে। সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করার এই জ্ঞান ও সাহসের জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আল-ফারুক উপাধি দিয়েছিলেন। কবি ফররুখ বলেছেন-
আজকে উমর পন্থী পথিক দিকে দিকে প্রয়োজন
পিঠে বোঝা নিয়ে পাড়ি দেবে যারা প্রান্তর প্রাণপণ।
কিন্তু হায়! এখন মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের এই সমাজের চিত্র দেখলে প্রশ্ন জাগে ইসলামের সেই মহান শিক্ষার প্রতিফলন কোথায়? এ জন্যেই কবি নজরুল বলেছেন:
ইসলাম সে তো পরশ মানিক তারে কে পেরেছে খুঁজি,
পরশে তাহার ধন্য যারা তাদেরই আমরা বুঝি।

ইসলামের পরশ আমাদের কলবে পৌঁছেনি বলেই আজ আমরা ঘুষকে উপহার ভাবি। অফিসের ফাইল ঘুষ না পেলে সামনে চলে না। যার ফলে দেশ ও জাতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয় না। কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে মেধাহীনদের রাজত্ব চলে। ঘুষ দিয়ে যে চাকুরী পেতে হয় সেই চাকুরীকে সেবা মনে করার কোনো কারণ নেই। আর তাই ঘুষ দিয়ে শিক্ষকের চাকুরী পাওয়া লোকটির কাছ থেকে তার ছাত্ররা কতটুকু এলেমদার হবে তা নিয়ে মনে অনেক সংশয় থেকে যায়।

এই ঘুষের জামানায় পাকা দড়িবাজরা তরতর করে উপরে উঠে যাচ্ছে দেখে আল্লাহর নেক বান্দারা মাঝে মাঝে ভাবে, যে কি নেক নিয়তের কি কোনো দাম নেই? এটা কি বোকামি? কিন্তু তিতা ফলের চারা লাগিয়ে যেমন সুমিষ্ট ফলের আশা করা যায় না তেমনি দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে উঠা ব্যবস্থাপনার কাছে কোনো কল্যাণ আশা করা যায় না। তাই ঘুষ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:

এরপর যালিমরা বদলে দিল যা তাদের বলা হয়েছিল। তার পরিবর্তে অন্য কথা। এ কারণে যারা যুলুম করল তাদের উপর নাযিল করলাম আকাশ হতে এক মহাশাস্তি। কারণ, তারা অধর্ম-অন্যায় কাজ করেছিলো। (আল-কুরআন, ২:৫৯)
এ আয়াতে সত্যকে বদলে দেওয়ার শাস্তির উল্লেখ আছে। ঘুষও সত্যকে বদলে দেয়। পাসকে ফেল দেখিয়ে দেয়। একজন হকদারের হক বদলে দিয়ে অন্যকে অন্যায়ভাবে দেওয়া হয়।

অতীত যামানায় যারা ঘুষ গ্রহণ করত, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ধর্মের বাণীতে জালিয়াতি করত তাদের সম্পর্কে আল-কুরআনে বলা হয়েছে:
সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্য প্রাপ্তির জন্য বলে- এটি আল্লাহর নিকট হতে এসেছে। তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য শাস্তি তাদের এবং যা তরা উপার্জন করে তার জন্যও শাস্তি তাদের। (আল-কুরআন, ২:৭৯)
ঘুষ হচ্ছে একটি হারাম জিনিস। যদিও ঘুষখোর এটাকে হারাম মনে করে না। আয়াতে ঘুষ খেয়ে ধর্মের বাণী বদলে দেওয়ার কথা বলা হলেও সকল জালিয়াতির জন্যই শাস্তি প্রযোজ্য।

ঘুষ সব সময় টাকা-পয়সা হয় না। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানান বস্তু ও বিষয় হতে পারে। এ জন্যই হাদীসের ভাষায় এটিকে বলে রিশওয়াহ বা দড়ি। দড়ি দিয়ে কুপের ভেতর থেকে বালতি টেনে উঠাবার মত ঘুষ অন্যের হক নিজের ঘরে নিয়ে আসে। এজন্য এই প্রক্রিয়ায় তিনটি পক্ষ থাকে।
১. রাশী راشى যে ঘুষ প্রদান করে,
২. মুরতাশী مرتشى যে ঘুষ গ্রহণ করে এবং
৩. রায়েশ رائش যে অনুঘটক হয়ে কাজ করে। আল্লামা সান‘আনী তার বিখ্যাত গ্রন্থ সুবুলুস সালাম শারহু বুলুগিল মারাম গ্রন্থে বলেন- রায়েশ বা ঘুষের ঘটক হচ্ছে্ ওই ব্যক্তি যে ঘুষখোর ও ঘুষদাতার মধ্যে যোগাযোগ ঘটিয়ে থাকে।
তবে মূলপক্ষ হচ্ছে দুটি: যে ঘুষ দেয় ও যে ঘুষ খায়।
আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের ওপর আল্লাহর লানত।
ইমাম তাবারানী তার আল-মুজামুস সগীর গ্রন্থে একটি হাদীস সংকলন করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
রিশওয়াহ বিচারের ক্ষেত্রে কুফরি। লোকেরা নিজেদের মধ্যে এ কাজ করা সুহত।
আগেই বলা হয়েছে রিশওয়াহ অর্থ ঘুষ। তাহলে সুহত অর্থ কি? এ প্রশ্নের উত্তর পাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি হাদীসে:

যে গোশত উদগত হয়েছে সুহত থেকে, তার জন্য জাহান্নামের আগুনই বেশি উপযোগী। একজন জিজ্ঞেস করলো, সুহত কী? তিনি বললেন, বিচার বা শাসনকার্যে ঘুষ গ্রহণ।
তাহলে দেখা যায় যে, ঘুষের অর্থে যে নিজে পানাহার করে এবং তার পোষ্যদের পানাহার করায় সকলের জন্যই তা খুবই মন্দ কাজ। এই ঘুষ-লালিত দেহের ইবাদত আল্লাহ কবুল তো করবেনই না বরং তাদের জন্য লাঞ্ছনা, আখিরাতের আগুণ অপেক্ষা করছে।
ইয়াহূদীদের দুর্গতির কারণ হিসেবে আল্লাহ তাআলা বলেন:

তারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ (ঘুষ) ভক্ষণে অত্যন্ত আসক্ত। (আল-কুরআন, ৫:৪২)
অপর একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন:

হে নবী! আপনি (আহলে কিতাবদের) অনেককেই দেখবেন পাপে, সীমালঙ্ঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে (ঘুষ খাওয়াতে) তৎপর। তারা যা করে নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট। (আল-কুরআন, ৫:৬২)
আয়াতে অবৈধ ভক্ষণ তরজমা করা হলেও হাদীসে এই সুহত বা অবৈধ আয়কে ঘুষ হিসেবে তাফসীর করে দেওয়া হয়েছে। তবে সকল প্রকার দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত আয়ও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

এই ঘুষের বিষয়টি পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতে স্পষ্টতই এসেছে। বিচারের রায়কে প্রভাবিত করা এবং প্রশাসকদেরকে নিরপেক্ষতা ও ন্যায়নিষ্ঠতা থেকে আলাদা করাই যে ঘুষের মূখ্য উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তা প্রতিফলিত হয়েছে এই আয়াতে:

তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকদের বা প্রশাসকদের কাছে পেশ করো না। (আল-কুরআন, ২: ১৮৮)
এ আয়াতে হুক্কাম অর্থ শাসকগণ, প্রশাসনগণ, বিচারকগণ হতে পারে। আরবী ভাষায় হাকিম বা বহুবচনে হুক্কাম শব্দটি এইসব অর্থে সমানভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কথা বুঝানো হয়েছে যাদের সিদ্ধান্তে একজনের সম্পদে অন্য কেউ অন্যায়ভাবে ভাগ বসাতে পারবে। উপর্যুক্ত আয়াতে وتدلوا بها শব্দটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এর অর্থ হচ্ছে বালতি কুপে ফেলে তা টেনে উঠানো। ঠিক তেমনি ঘুষের রশিতে নিজের প্রত্যাশিত বস্তু টেনে আনা হয়। এটি রুপক অর্থে এসেছে।
এজন্যই আল্লামা আলুসী তার তাফসীর রুহুল মাআনীতে বলেন: তোমাদের সম্পদের কিছু অংশ অসাধু বিচারক বা প্রশাসকদেরকে ঘুষ হিসেবে দিও না।
তাফসীরে মাদারেকেও এ আয়াতের বাতেল শব্দ দ্বারা ঘুষ বা রিশওয়াহ বুঝানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[6] এতে প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র কুরআনে ঘুষের বিরুদ্ধে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

আজ আমাদের দেশ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তালিকার প্রথম দিকে রয়েছে। এই দুর্নীতির নানা রকমের রয়েছে। তবে ঘুষ হচ্ছে প্রধান ও সবচেয়ে ব্যাপক দুর্নীতি। ঘুষের এই ব্যাপকতা কেবল আখিরাতের জন্যই ভয়াবহ নয়; বরং আমাদের এই সামাজিক জীবনেও দুর্ভোগের কারণ।

ঘুষের বিষয়টি এখন আর লুকোছাপা নেই; তা এখন সবারই জানা। বাসে, লঞ্চে, পথে-ঘাটে মানুষ ঘুষের আলাপ করছে। আমাদের আশপাশের লোকজন তা শুনেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। এ রকম অবস্থার কারণেই আমরা জাতি হিসেবে ক্রমশ বোধহীন হয়ে পড়েছি এবং ভবিষ্যতের অজানা লা‘নত অথবা দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি অথবা সন্ত্রাসের আরও প্রকোপ দেখে এক বিরাট ভয় আমাদেরকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু ধর্মের বাণী আজ আমাদের জীবনে বাস্তব রূপ ধরে আসলেও আল্লাহর হুকুম পালন করার প্রতি আমাদের আগ্রহ নেই, যা দুঃখজনক হলেও সত্য। এ হচ্ছে এক ভয়াবহ অবস্থা।

ঘুষ আমাদের জাতীয় উন্নয়নকে ব্যাহত করছে। ঘুষের কারণে মানুষ যোগ্যতার মূল্যায়ণ পাচ্ছে না। ঘুষের চিন্তায় যখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাথা ঘুরতে থাকে তখন হাতের কলম সিরাতুল মুস্তাকীমে চলে না। ঘুষ হচ্ছে সমাজদেহে নীরব মরণ ব্যাধি। সকল নীতি-নৈতিকতা, সমস্ত আইন-কানুন, বিধি-বিধানকে বিধ্বস্ত করে দেওয়ার জন্য ঘুষ নামক এই নমরুদই দায়ী। এ হচ্ছে এক মরণ ভাইরাস যা আমাদের সমাজের সকল ব্যবস্থাপনাকে নাজেহাল করে দিচ্ছে। এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে না পারলে আমাদের উপর আল্লাহর রহমত নাযিল হবে না এবং আমরাও একটি সময় অতীতের নমরূদ, ফিরাউনদের ন্যায় অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হব ও আল্লাহর গজবে ধ্বংস হয়ে যাব। কালব- এর পরিশুদ্ধির জন্য দেহ পরিশুদ্ধ থাকতে হয়। হালাল রুজি বা সৎ উপার্জনকারী আল্লাহর বন্ধু বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন। পক্ষান্তরে অসৎ উপার্জন করে অতি তাড়াতাড়ি সুখের সন্ধান করা আসলে বৃথা। অনেকেই অর্থ উপার্জনে সুবিধাজনক বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করেই তার পেশায় এমনভাবে মগ্ন হয় যেন সে পারে তো দু দিনেই বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়ে যায়। লোকের সেবা করা এবং এজন্য ত্যাগী মনোভাব নিয়ে কাজ করার কোনো লক্ষণই দেখা যায় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে এই তাড়াহুড়া করে অসৎভাবে উপার্জন করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন:

কোনো প্রাণী তার রিযিক পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কখনও মরবে না। সাবধান! আল্লাহকে ভয় করো এবং আবেদনে সৌন্দর্য বজায় রাখো। তোমার রিযিক ধীরগতিতে আসার কারণে তা আল্লাহর নাফরমানির মাধ্যমে চেয়ো না। কারণ তাঁর নিকট যা আছে তা লাভ করতে হলে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমেই করতে হবে। (বাযযার, ইবন মাসউদ রা. হতে)
তবে কেউ যদি অন্যের সম্পদ গ্রাস করে তবে তার পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:

যারা ইয়াহূদী ছিল, তাদের যুলুমের কারণে আমরা তাদের ওপর এমন সব পবিত্র বস্তু হারাম করে দিয়েছি, যা ছিল তাদের জন্য হালাল। এছাড়াও আল্লাহর পথে অনেক বাধা দেওয়ার জন্য তা করেছিলাম এবং তারা সুদ গ্রহণের কারণে- যা তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে লোকের ধনসম্পদ গ্রাস করার জন্য। কাফিরদের মর্মন্তুদ শান্তি প্রস্তুত রেখেছি। (আল-কুরআন, ৪:১৬০-১৬১)
এমনিভাবে অসৎ উপার্জন করে গাড়ি-বাড়ি, বিত্ত-বৈভব, প্রভাব-প্রতিপত্তি লাভ করার যে তীব্র আকাঙ্খা মানুষের মনে জাগে এবং শয়তান এইসব অপকর্মকে আকর্ষণীয় ও লোভনীয় করে সামনে তুলে ধরে, এর পরিণতি দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়াবহ!
ইসলামে ঘুষ সম্পূর্ণরূপে হারাম। ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহিতা উভয়ে জাহান্নামী।