কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

তাওবাহ-ইস্তিগফারের সুফল

প্রতিটি মানবসন্তান পাপ-পুণ্যের স্বভাব নিয়েই দুনিয়াতে আগমন করে। তাই নবী-রাসূল ব্যতীত প্রত্যেক মানুষই কোনো না কোনো পাপে জড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের গুনাহ করে ফেলে। পাপ-পঙ্কিলতার এই পৃথিবীতে কেউ নিজেকে ধোয়া তুলসী পাতা বলে দাবি করতে পারে না। দাবি করলে তা হবে একান্তই মিথ্যা ও অযৌক্তিক। এমনকি বড় মুত্তাকি, পরহেজগার ও পুণ্যবান ব্যক্তিও এ স্বভাব থেকে মুক্ত নয়। সহজাত প্রবণতার কারণে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তার থেকেও পাপের প্রকাশ ঘটতে পারে। হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণিত- নবী সা : ইরশাদ করেন, ‘সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! যদি তোমাদের মধ্যে পাপের স্বভাব না থাকত, আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে (তোমাদের পরিবর্তে) এমন এক জাতি আনয়ন করতেন, যারা পাপ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করত, আর আল্লাহও তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন। (সহিহ মুসলিম-২৭৪৯) হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘প্রতিটি আদম সন্তান গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম তারা যারা তাওবাহ করে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ-৪২৫১)
তাওবাহকারীদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হন : প্রবৃত্তির তাড়নায় কিংবা শয়তানের কুমন্ত্রণায় কখনো কোনো গুনাহ হয়ে গেলে বান্দার উচিত, লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে সাথে সাথে আল্লাহর কাছে তাওবাহ-ইস্তিগফার করা। এতে আল্লাহ তায়ালা বড় খুশি হন। আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তাওবাহ করে তখন আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তির চেয়ে বেশি খুশি হন, যে মরুভূমির বুকে একটি উটের পিঠে সওয়ার ছিল। কিন্তু উটটি তাকে ফেলে তার সব খাদ্য-পানীয় নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। লোকটি উট খোঁজাখুঁজি করে একপর্যায়ে নিরাশ হয়ে একটি গাছের কাছে এলো এবং নিরাশ মনে গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ল। হঠাৎ চোখ মেলে দেখল, হারিয়ে যাওয়া উটটি তার কাছেই দাঁড়ানো। তখন সে উটের লাগাম ধরে আনন্দের আতিশয্যে মুখ ফসকে বলে ফেলল, তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার রব।’ (মুসলিম-২৭৪৭)
পরম ভালোবাসা লাভ হয় : যারা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি তাওবাহ করে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবাহকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন পূর্ণাঙ্গরূপে পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২২২)
পাপ মোচন হয়ে যায় : বান্দার তাওবাহ-ইস্তিগফারে আল্লাহ সব পাপ মোচন করে দেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ; আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনিই তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা জুমার-৫৩) অন্যত্র বলেন- ‘অবশ্য যারা এর পরও তাওবাহ করবে ও নিজেদেরকে সংশোধন করবে, (তাদের জন্য) আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সূরা আলে ইমরান-৮৯)
পাপ পুণ্যে পরিবর্তিত হয় : সত্যিকারের তাওবাহ হলে পাপ মোচনের সাথে সাথে তার পরিবর্তে পুণ্যও লিখে দেয়া হয় উদারতা ও অকৃপণতার সাথে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তবে যে তাওবাহ করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুণাহগুলো নেকি দিয়ে পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা ফুরকান-৭০)
সুন্দর ও সুখময় জীবনপ্রাপ্তি : পার্থিবভাবেও এই সুন্দর ও সুখময় জীবনেরও নিশ্চয়তা রয়েছে তাওবাহ-ইস্তিগফারের মধ্যে। কায়মনোবাক্যে যে যত তাওবাহ-ইস্তিগফার করবে সে তত আবিলতামুক্ত সুন্দর জীবন লাভ করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গুনাহের পঙ্কিলতায় ডুবে থাকবে এবং তাওবাহ-ইস্তিগফার থেকেও বিমুখ থাকবে তার জীবন হবে সঙ্কীর্ণ ও অসুন্দর। সে জীবনের স্বাদ খুঁজে পাবে না। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ইস্তিগফার করো এবং তাওবাহ করো তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তিনি তোমাদেরকে সুন্দর জীবনোপকরণ দান করবেন। আর যদি তা থেকে বিমুখতা প্রদর্শন করো তাহলে আমি তোমাদের ব্যাপারে আশঙ্কা বোধ করি এক মহা দিবসের শাস্তির।’ (সূরা হুদ-৩)
দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন লাভ হয় : দুনিয়া দুঃখ, পেরেশানি ও দুশ্চিন্তার জায়গা। জীবনের স্বাদকে ফিকে করে দেয়া পেরেশানি থেকে বাঁচারও অন্যতম উপায় হচ্ছে- গুনাহ ছেড়ে আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়া এবং নিবিষ্ট চিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকা। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইস্তিগফারকে আঁকড়ে ধরবে আল্লাহ তায়ালা তাকে সব সঙ্কট থেকে বের হওয়ার পথ এবং সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় বের করে দেবেন আর তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দেবেন যে, সে কল্পনাও করতে পারবে না।’ (সুনানে আবু দাউদ-১২৯৭)
সম্পদ ও সন্তানে বরকত হয় : পার্থিব ধনসম্পদ, বাগবাগিচা ও সন্তান-সন্ততিতে বরকত লাভেরও বড় মাধ্যম বানিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা তাওবাহ-ইস্তিগফারকে। পাপের পঙ্কে আকণ্ঠ নিমজ্জিত অবাধ্য সম্প্রদায়কে হজরত নূহ আ: বারবার দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন এবং গুনাহ ছেড়ে আল্লাহর দিকে রুজু করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন, পাশাপাশি তার উপকারিতাও তুলে ধরেছেন সুস্পষ্টভাবে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে তাঁর আহ্বানকে এভাবে তুলে ধরেছেন- ‘হে আমার কওম! নিজেদের প্রতিপালকের কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতঃপর তারই দিকে রুজু হও। তিনি তোমাদের প্রতি আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের বর্তমান শক্তির সাথে বাড়তি আরো শক্তি জোগাবেন। সুতরাং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।’ (সূরা হুদ-৫২)
এক কথায়, দুনিয়া ও আখিরাতের সুফল ও সফলতা লাভের শ্রেষ্ঠতম উপায় হচ্ছে তাওবাহ-ইস্তিগফার। সুতরাং প্রকৃত সাফল্য প্রাপ্তির জন্য অবশ্যই তাওবাহ-ইস্তিগফারকে সার্বক্ষণিক বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং জীবনকে পূতপবিত্র রাখার চেষ্টা করতে হবে।