উবাই বিন কাব (রা.) বলেছেন, ‘আদম (আ.)-এর মৃত্যু ঘনিয়ে এলে তিনি সন্তানদের বললেন, হে আমার সন্তানরা, আমার জান্নাতের ফল খেতে ইচ্ছা করছে। তারা ফলের সন্ধানে বের হয়। এমন সময় তাদের সঙ্গে ফেরেশতাদের দেখা হয়। তাদের সঙ্গে ছিল কাফন, সুগন্ধি, কুড়াল ও বেলচা।
ফেরেশতারা বলল, হে আদমের সন্তানরা, তোমরা কোথায় যাচ্ছ? কী উদ্দেশ্যে যাচ্ছ? তারা বলল, আমাদের পিতা অসুস্থ। তিনি জান্নাতের ফল খেতে চেয়েছেন। তখন ফেরেশতারা বলল, তোমরা ফিরে যাও। তোমাদের পিতার মৃত্যু হয়েছে। এদিকে হাওয়া (আ.) ফেরেশতাদের দেখে চিনে ফেলেন। তিনি বলেন, তোমরা আমার কাছ থেকে দূরে যাও। আগে আমি তোমাদের মাধ্যমে বিপদে পড়েছিলাম। আমার রবের ফেরেশতা ও আমাদের মধ্যে জায়গা প্রশস্ত করে দাও।
অতঃপর ফেরেশতারা আদম (আ.)-এর রুহ কবজ করে। তারা তাকে গোসল করায়, কাফন পরায় ও সুগন্ধি লাগায়। এরপর তার জন্য লাহদ পদ্ধতিতে কবর খোঁড়া হয়। তারা তার জানাজার নামাজ পড়িয়ে তাকে কবরে রাখে। কবরে মৃতদেহের ওপর কাঁচা ইট রেখে তারা কবর থেকে বেরিয়ে পড়ে। এরপর কবরের ওপর মাটি ছিটিয়ে দেয়। অতঃপর ফেরেশতারা বলে, হে আদম (আ.)-এর সন্তান, এটি তোমাদের সুন্নত। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১২৪০)
আদম (আ.)-এর মৃত্যুর এক বছর পর হাওয়া (আ.)-এর ইন্তেকাল হয়। তবে আদম (আ.)-কে কোথায় দাফন করা হয় তা নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। প্রসিদ্ধ তিনটি মত হলো—ক. ভারতবর্ষের যে পাহাড়ে তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল, খ. মক্কার জাবালে আবু কুবাইস, গ. বায়তুল মুকাদ্দাস। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর এক বর্ণনায় এসেছে মৃত্যুকালে আদম (আ.)-এর বয়স হয়েছিল এক হাজার বছর। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ১/১২৬-১২৯)
উল্লিখিত হাদিসে আদম (আ.)-এর ইন্তেকালের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। মৃত্যুর সময় জান্নাতের ফল খাওয়ার ইচ্ছা করা থেকে বোঝা যায়, তিনি জান্নাত ভালোবাসতেন এবং সেখানে ফিরতে চাইতেন। আদম (আ.) রুহ কবজ করার পর তার জানাজা, কাফন, দাফনসহ পুরো কাজ ফেরেশতারা আঞ্জাম দিয়েছেন। আর পরবর্তীদের জন্য শিক্ষণীয় করে রাখতে ফেরেশতারা আদমসন্তানদের তা অনুসরণ করতে বলেন। অতএব, এ থেকে বোঝা যায়, আদম (আ.)-এর যুগ থেকেই মানুষ মারা গেলে কাফন ও দাফনের ব্যবস্থা ছিল।