যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

নবী-রাসুলরা ছিলেন সর্বাধিক মানবদরদি

মানবসেবা নবী-রাসুলদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নবী-রাসুলরা ছিলেন সর্বাধিক মানবদরদি। আল্লাহ তাআলার নির্দেশে তাঁরা স্রষ্টা ও সৃষ্টির মেলবন্ধন তৈরি করতেন। অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসতেন।  তাঁরা শুধু মানবজাতির পরকালীন কল্যাণের কথাই ভাবেননি, বরং তাদের জাগতিক কল্যাণের কথাও ভাবতেন। নিম্নে এ বিষয়ে কয়েকটি উপমা পেশ করা হলো—

১. ইউসুফ (আ.) মিসররাজের খাদ্য বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘ইউসুফ বলল, আপনি আমাকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্বে নিয়োজিত করুন। নিশ্চয়ই আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও (এ বিষয়ে) বিজ্ঞ। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৫৫)

তাঁর এই দায়িত্ব গ্রহণের ফলে মানুষের জাগতিক অনেক উপকার হয়েছিল। দুর্ভিক্ষের বছরগুলোতে যখন আশপাশের দেশগুলো দুর্ভিক্ষকবলিত, তখন তাঁর সুদক্ষ কর্মপন্থায় মিসরীয়রা দুর্ভিক্ষ থেকে রেহাই পায়।

২. মুসা (আ.) যখন মিসর থেকে মাদিয়ান গমন করেন, তখন তিনি একদল লোককে তাদের পশুপালের পানি পান করাতে দেখতে পান। সেখানে দুজন কিশোরী ছিল, যারা তাদের বয়সের স্বল্পতাজনিত কারণে তাদের পশুগুলোকে পানি পান করাতে পারছিল না। তিনি কুয়ার মুখ থেকে পাথরের ঢাকনা সরিয়ে তাদের ছাগলগুলোর পানি পানের ব্যবস্থা করে দেন। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শায়বাহ, হাদিস : ৩১৮৪২)

এ ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন সে মাদিয়ানের কূপের কাছে পৌঁছল, দেখল, একদল লোক তাদের পশুগুলোকে পানি পান করাচ্ছে। আর তাদের পেছনে দুজন নারী তাদের পশুগুলোকে আগলে রেখেছে। মুসা বলল, তোমাদের কী ব্যাপার! তারা বলল, আমরা আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করাতে পারি না, যতক্ষণ রাখালেরা তাদের পশুগুলো নিয়ে সরে না যায়। আমাদের পিতা অতিবৃদ্ধ। ’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ২৩)

আয়াতে বর্ণিত নারীদের সেবায় মুসা (আ.) কালবিলম্ব না করে এগিয়ে আসেন।

৩. মহানবী (সা.)-এর পরোপকারিতার গুণ সুবিদিত। তাঁর প্রথম নবী হওয়ার দিন খাদিজা (রা.) বলেছিলেন, কখনো নয়, আল্লাহর কসম! আল্লাহ কখনো আপনাকে অপদস্থ করবেন না। কারণ আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখেন, অসহায় পরিবারের দায় বহন করেন, নিঃস্ব মানুষের আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করে দেন, মেহমানদের আপ্যায়ন করেন এবং সত্যের পথে চলতে গিয়ে বিপদে পতিতদের সাহায্য করেন। (বুখারি, হাদিস : ৩)

এই একই পথের পথিক ছিলেন সাহাবায়ে কিরাম ও নেককার লোকেরা। আবু বকর (রা.) আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতেন এবং অভাবী লোকদের সাহায্য করতেন। এ কারণে যখন তাঁর জাতি তাঁকে মক্কা থেকে বের করে দিতে চাইছিল তখন ইবনুদ দাগিন্নাহ নামক জনৈক মুশরিক বলেছিলেন, আপনার মতো মানুষ তো নিজ থেকে দেশ ছাড়তে পারে না, আর আপনাকে দেশছাড়া করাও যেতে পারে না। আপনি তো নিঃস্ব মানুষের আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করে দেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখেন, অসহায় পরিবারের দায় বহন করেন, মেহমানদের সেবাযত্ন করেন এবং সত্যের পথে চলতে গিয়ে বিপদে পতিতদের সাহায্য করেন। (বুখারি, হাদিস : ২২৯৭, ৩৯০৫)

ওমর (রা.) বিধবাদের খোঁজখবর নিতেন এবং রাতে সময় করে তাদের পানি জোগান দিতেন। এভাবেই যুগে যুগে নবী-রাসুল এবং নেককার লোকেরা যখনই মানবকল্যাণের সুযোগ পেয়েছেন তখনই তাঁরা সে সুযোগ লুফে নিয়েছেন।