যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

জুমার দিন যাদের জন্য কল্যাণময়

ইয়াওমুল জুমা, গরিবের হজের দিন। মুসলমানের খুশির দিনও। ঈমানদারের ঈমান বৃদ্ধি দিন। তাই ছোট বড় সবার জন্য আনন্দ-উৎসবের সঙ্গেই জুমার দিন অতিবাহিত করা জরুরি। আগে আগে মসজিদে যাওয়া জরুরি। দিনটি অনেক পুরস্কার ও কল্যাণে ভরপুর। এ দিনটির রয়েছে অনেক সুখবর ও পুরস্কারের ঘোষণা। কী সেসব পুরস্কার ও কল্যাণ?

জুমার দিন পরিবারের বড়দের হাত ধরে ছোট সদস্যরাও মসজিদে নামাজ পড়তে আসে। এ এক অন্যরকম দৃশ্য। যে দৃশ্য মহান আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত থাকে। কেননা এ দৃশ্যের অবতারণা করতে আল্লাহ তাআলা নিজেই ঘোষণা করেন-

হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ধাবিত হও। আর বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পার। (সুরা জুমা আয়াত ৯)

আল্লাহর নির্দেশ মেনে যারা জুমার নামাজ আদায় করে তাদের জন্য হাদিসে ঘোষিত চমকপ্রদ পুরস্কারও রয়েছে। তাহলো-

১. দোয়া কবুল

জুমার দিনে একটি মুহূর্ত রয়েছে যে মুহূর্তে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন। তবে মুহূর্তটিকে অজ্ঞাত করে রাখা হয়েছে। যাতে মানুষ পুরো জুমার দিনটিকে গুরুত্বসহকারে অনুসন্ধান করতে থাকে। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো বান্দাহ ঐ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে তবে আল্লাহ তাআলা তা অবশ্যই দেবেন। (বুখারি ও মুসলিম)

এ সময়টি কখন

জুমার দিনের এ বিশেষ সময়ের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। তবে হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য দুটি মত রয়েছে। তাহলো-

ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত সময় হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ করা পর্যন্ত। (মুসলিম ইবনু খুজাইমা বয়হাকি) যাদুল মাআ`দ-এ বর্ণিত আছে- মুহূর্তটি হচ্ছে জুমার দিন আসরের নামাজ আদায়ের পর।

২. সাদকা করার দিন

সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনা জুমার দিন সাদকা করা ঐ রকম উত্তম, যেমন সারা বছর সাদকা করার চেয়ে রমজান মাসে সাদকা করা উত্তম। হজরত কা`ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, জুমার দিনই সাদকা করা অন্যান্য দিন সাদকা করার তুলনায় অধিক সাওয়াব ও গুরুত্বপূর্ণ। (মুসলিম)

৩. আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের দিন

 জুমার দিন জান্নাতিদের সঙ্গে আল্লাহ তাআলা সাক্ষাৎ করবেন। তাফসিরে এসেছে- আল্লাহ তাআলা প্রতি জুমা`র দিন জান্নাতিদের সাক্ষাতের জন্য প্রকাশ্যে আসেন।

৪. সাপ্তাহিক ঈদের দিন

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এটি ঈদের দিন। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি জুমার নামাজে উপস্থিত হয়, সে যেন অজু করে উপস্থিত হয়। (ইবনু মাজাহ)

৫. ক্ষমা পাওয়ার দিন

এদিন আল্লাহ বান্দার গোনাহ ক্ষমা করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোলস করল, যথাযথ পবিত্রতা অর্জন করল, তেল লাগাল এবং ঘর থেকে আতর খুশবু লাগিয়ে বের হল, দুই ব্যক্তির মাঝে ফাঁক করে সামনে গেল না। অতপর তার তকদিরে যত নামাজ পড়া নির্ধারিত ছিল তা পড়ল, ইমামরে খুতবার সময় চুপ থাকল, তাহলে তার এ জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সংঘটিত গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারি)

৬. বছরজুড়ে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব পাওয়ার দিন

জুমার দিনের প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে সাওয়াবের ভাণ্ডার। যারা যথাযথ আদব রক্ষা করে জুমার নামাজ আদায় করে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তাদের জন্য পুরো এক বছরের রোজা পালন এবং রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সাওয়াব লেখা হয়। হাদিসে এসেছে-

হজরত ইবনে আউস আস সাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমাআর দিন যে ব্যাক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরজ গোসল করে এবং) নিজেও ফরজ গোসল করে, আগে আগে মসজিদে যায় এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোন কিছুতে আরোহণ করে নয়), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, কোনো কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে না; সে ব্যাক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সাওয়াব। (মুসনাদে আহমাদ)

৭. জাহান্নামের আগুন বন্ধ থাকার দিন

যাদুল মাআদে এসেছে- সপ্তাহের প্রতিদিন জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়। জুমার দিনের সম্মানে এদিনটিতে জাহান্নামের আগুনকে প্রজ্জলিত বা উত্তপ্ত করা হয় না।

৮. জুমার দিন বা রাতে কল্যাণের

জুমার দিন বা রাতে মৃত্যুবরণ করা উত্তম পরিণতির লক্ষণ। কারণ এ দিন বা রাত যে ব্যক্তি মারা যায় সে ব্যক্তি কবরের আজাব বা মুনকার নকিরের প্রশ্ন থেকে বেঁচে যায়। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কোনো মুসলিম জুমার দিন বা জুমার রাতে মারা গেল; আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে কবরের আজাব থেকে রেহাই দেবেন। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)

মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার দিন ও রাতের সময়গুলোকে কাজে লাগানো। কোনো সমস্যা না থাকলে যথাযথভাবে জুমার নামাজ আদায় করা। হাদিসে ঘোষিত জুমার ফজিলত ও মর্যাদাগুলো নিজেদের করে নেয়া।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনের বিশেষ আমলগুলো করার মাধ্যমে ঘোষিত পুরস্কার ও প্রতিদান পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।