যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

স্ত্রী-সন্তান-পরিবারের জন্য ব্যয় করা ইবাদত

ফার্সি গল্পের একটি চমৎকার ঘটনা। প্রতিদিন এক ব্যক্তি ছয়টা রুটি কিনতেন। একদিন দোকানির কৌতুহল হলো কেন তিনি প্রতিদিন ৬টি রুটি কিনেন? খরিদদারকে জিজ্ঞাসা করায় তার থেকে চমৎকার শিক্ষামূলক বক্তব্য বেরিয়ে আসে। কী সেই শিক্ষামূলক বক্তব্য?

খরিদদার বলেন, দুটো দিয়ে দেনা শোধ দিই, দু টো ধার দিই, একটা ফেলে দিই, আরেকটি নিজে খাই। দোকানী যারপরনাই কৌতুহলী হয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন দেনা শোধ দিই মানে বাবা-মাকে খাওয়াই, তারা একসময় আমাকে খাইয়েছে; ধার দিই মানে ছেলে-মেয়েকে খাওয়াই, ওরা বৃদ্ধ বয়সে ফেরত দেবে; ফেলে দিই মানে ওটা বৌকে খাওয়াই, সে আমাকে কোনো দিন খাওয়ায়নি আর কোনো দিন খাওয়াবেও না, আরেকটি তো নিজে খাই।

কেবল আমল করা আর আল্লাহর জন্য আমল করার মধ্যে অনেক তফাত আছে। যেমন ধরুন পরিবারের সদস্যদের ব্যয়ভার বহন করা একটি কাজ। এটি কিন্তু ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই করে থাকে। আপনিও করেন। কিন্তু কেন করেন? উত্তর হতে পারে আরে ভাই এটা কোনো প্রশ্ন হলো না কি, আমার পরিবারের ব্যায়ভার আমি বহন করবে না তো কে করবে? কিংবা উত্তর হতে পারে উল্লিখিত গল্পের ব্যক্তির মতো। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবু মাসউদ আল-বদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন নিঃসন্দেহে কোনো মুসলিম যখন তার পরিবারের জন্য খরচ করে তা সাদাকা হিসেবে গন্য হবে যদি সে তাকে (ইবাদাত) মনে করে। বুখারি ও মুসলিম)

কেনা-কাটায় পকেটের পয়সা সবারই যাবে, এতে কিন্তু কারোরই মাফ নেই। কিন্তু কারোটা নিছক খরচ হবে আর কারোটা ইবাদাত হিসেবে গৃহীত হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে নিয়তের উপর। নিয়ত যদি ঠিক থাকে তাহলে বৌয়ের রুটিটাও আর ফেলে দেওয়ার খাতায় উঠবে না।

আপনি যখন পরিবারের জন্য বাজার থেকে মাছ কিনেন গোস্ত কিনেন, শাক-সবজি কিনেন যখন তাদের জন্য জামা-কাপড় কিনে দেন ডাক্তারের ফি দেন ওষুধ কিনেন পড়ালেখার জন্য খাতা-পেন্সিল কিনে আনেন কখনো কি মনের মধ্যে ইবাদাতের অনুভুতি থাকে

কখনো সচেতনভাবে অস্ফুট আওয়াজে ঠোট নাড়িয়ে কেবল আল্লাহকে শুনিয়ে বলেছেন ও আল্লাহ এই খরচ আমি কেবল তোমার সন্তুষ্টির জন্য করছি, তুমি কবুল করো হয়তো বলেন নি হয়তো মনেই হয়নি হয়তো ভেবেই দেখা হয়ে ওঠেনি এভাবে। পেছনে যতো পয়সা জলে গেছে তা তো গেছেই। আজ থেকে আর নয়। আসুন, আমরা এক্ষুনি একটি সাধারণ নিয়ত করে নিই যে পরিবারের ব্যয়ভার আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করবো।

আর সবসময় মনে না থাকলেও মাঝে মধ্যে কেনা-কাটার সময় সচেতনভাবে একটু বলি اِنَّمَا نُطۡعِمُکُمۡ لِوَجۡهِ اللّٰهِ لَا نُرِیۡدُ مِنۡکُمۡ جَزَآءً وَّ لَا شُکُوۡرًا ইন্নামা নুতইমুকুম লিওয়াজহিল্লাহ লা নুরিদু মিনকুম জাযাআন ওয়া লা শুকুরান আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তোমাদেরকে খাওয়াই; তোমাদের থেকে না এর কোনো প্রতিদান চাই, না কোনো কৃতজ্ঞতা চাই ...। (সুরা আল-ইনসান/দাহর : আয়াত ৯)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিটি কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।