অজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর
No icon

প্রিয়নবী সা. বাবা হিসেবে যেমন ছিলেন

আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর সম্মানিত পিতার নাম আবদুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব। তিনি ৫৪৪ খ্রিস্টাব্দে নাওশিরওনের রাজত্বে ২৪তম বর্ষে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম ফাতিমা বিনতে আমির। ১০ ভাইয়ের মধ্যে আবদুল্লাহ ছিলেন সবার ছোট ও আদুরে। (ইসলামী বিশ্বকোষ-৭৬৮)

বংশীয় আভিজাত্য

নবীজির পিতা আবদুল্লাহ ছিলেন মক্কার শ্রেষ্ঠ বংশ কুরাইশের সন্তান। কুরাইশ ছিল আরবের সর্বোচ্চ বংশ। তার অনেক শাখা-প্রশাখা  ছিল। তার মধ্যে হাশেম সবার শীর্ষে। ওই বংশের সন্তান ছিলেন আবদুল্লাহ। এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘আমি বংশীয় মর্যাদায় তোমাদের সবার তুলনায় শ্রেষ্ঠ। আমার পূর্বপুরুষের মধ্যে বাবা আদম (আ.) থেকে এই পর্যন্ত কেউ ব্যভিচার করেননি। সবাই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। (নবীজির মা-বাবা : ৫৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও বলেছেন ‘আমি বনি আদমের সর্বোত্তম বংশে প্রেরিত হয়েছি। আমার যুগই সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ।’ (বুখারি : ৪/১৫১)

পিতার আনুগত্য

মহানবী (সা.)-এর পিতা আবদুল্লাহ ছিলেন সবার ছোট এবং তাঁর বাবার প্রিয় সন্তান। বাবার নির্দেশ পালনে ছিলেন সতত সচেষ্ট। তা যতই দুরূহ ও দুষ্কর ছিল। 

আবদুল্লাহকে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করার ঘটনা তার স্পষ্ট প্রমাণ। আব্দুল মুত্তালিবের তখন হারিস ছাড়া আর কোনো সন্তান ছিল না। তারপর সুমহান আরশের অধিপতি আল্লাহ তাআলার নিকট মানত করে বললেন, হে আল্লাহ আমি যদি ১০ সন্তানের বাবা হই এবং তারা বড় হয়, আমি তাহলে আপনার পথে আমার এক সন্তানকে উৎসর্গ করব। এই মানতের পরে আব্দুল মুত্তালিব একে একে ১০ সন্তানের বাবা হন। তাঁরা সবাই বড় হয়ে যৌবনে পদার্পণ করেন। আবদুল মুত্তালিব ভুলে যান, আল্লাহর সঙ্গে তাঁর কৃত ওয়াদার কথা।

 

হঠাৎ একদিন তিনি স্বপ্নে দেখলেন, কেউ এসে বলছেন, আব্দুল মুত্তালিব ওঠো, আল্লাহর সঙ্গে তোমার কৃত ওয়াদা পুরণ করো। ভোরবেলায় সব সন্তানকে ডাকলেন। বললেন, শোনো আমার ছেলেরা। আমি আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকার করেছিলাম। আমার ১০ ছেলে হলে এক ছেলেকে আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করব। এই ব্যাপারে তোমাদের অভিমত কী?

সবাই বলেন, আব্বা, আপনার নির্দেশ মানতে আমরা সতত প্রস্তুত। আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ হতে আমরা পূর্ণ প্রস্তুত। আপনি যাকে ইচ্ছা তাকেই আল্লাহর পথে উৎসর্গ করুন। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। নবীজির পিতা আবদুল্লাহও বলেন, আল্লাহর পথে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে নিজেদের সৌভাগ্য মনে করব। আমাদের দাদা ইসমাঈল (আ.) তাঁর বাবার নির্দেশে নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য মাথা নত করে দিয়েছিলেন। আমরাও তাঁর ব্যতিক্রম হবো না।

তারপর লটারি দেওয়া হলো। আল্লাহর পথে উৎসর্গ হওয়ার জন্য লটারিতে নাম এলো নবীজির আব্বা আবদুল্লাহর। একটু পর তাঁকে উৎসর্গ করা হবে সবার সামনে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে ছেড়ে সে চলে যাবে চিরতরে। সমবেত জনতা চিৎকার করে থামাতে চাচ্ছে এই উৎসর্গ। বোনেরা কাঁদছে। সহোদর ভাইয়েরা অস্থির হয়ে পড়েছে। অথচ আবদুল্লাহ এই সঙ্গিন মুহূর্তেও সুস্থির ছিলেন। কোনো ধরনের অস্থিরতা, ব্যাকুলতা ছিল না তাঁর মধ্যে। ভয়ভীতির চিহ্নও ছিল না তাঁর পবিত্র মুখাবয়বে।

মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে তিনি ছিলেন বাবার আদেশ পালনে অটল, অবিচল প্রশান্তময় এক ব্যক্তিত্ব। তারপর লটারির মাধ্যমে যখন সিদ্ধান্ত হলো তাঁর পরিবর্তে ১০০ উট জবাই করা হবে—তিনি মৃত্যু থেকে বেঁচে গেলেন। মৃত্যু থেকে বেঁচেও তিনি চরম আনন্দ প্রকাশ করেননি। অন্যবারের মতো খুব স্বাভাবিক ছিলেন। সেই গাম্ভীর্য, ভদ্রতা, নীরবতা পূর্ণ মাত্রায় ছিল তাঁর উজ্জ্বল চেহারায়। তিনি চাইলেই পিতার আদেশ অমান্য করতে পারেতেন। প্রতিবাদ কর‍তে পারতেন এমন প্রাণনাশক মানতের বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনি জীবন দিয়ে পিতার আদেশ রক্ষার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। (নবীজির মা-বাবা : ৩৬)

নির্মল চরিত্র

নবীজির আব্বা আবদুল্লাহ ছিলেন অনিন্দ্য সৌন্দর্যের অধিকারী একজন চরিত্রবান পুরুষ। তাঁর ব্যবহারে ছিল অমায়িকতা ও কোমলতা। তাঁর চাল-চলনে ছিল নির্মলতা। তিনি ছিলেন বিমল চরিত্রের অধিকারী এক পূত-পবিত্র ব্যক্তি। তিনি কখনো মদ-জুয়ার আড্ডায় গমন করেননি। নারীসংক্রান্ত কোনো কাজে তিনি জড়িত হননি, বরং তাদের থেকে সব সময় নিজেকে হেফাজত করেছেন।

একদিন মক্কার ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ে ফাতিমা বিনতে মুররাল খুসাইমা আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে আবদুল্লাহকে প্রেম নিবেদন করেন। ১০০ উটের প্রলোভনও তাঁকে দেখানো হলো। তিনি বলেন, হারাম ও অবৈধ কাজে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে মৃত্যুবরণ করা আমার শ্রেয়। আমি অবশ্যই হালাল পন্থা ভালোবাসি।