আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কবিরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ গুনাহ চারটি;
১. আল্লাহর সাথে শরিক করা; ২. কোনো ব্যক্তিকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করা; ৩. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া; ৪. মিথ্যা বলা অথবা তিনি বলেছেন মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। (সহিহ বোখারি: ৬৮৭১)
এ হাদিসে যে ৪টি গুনাহের কথা বলা হয়েছে
১. আল্লাহর সাথে শরিক করা
শিরক আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য ও জঘন্যতম পাপ। কোরআনে শিরকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জুলুম বলা হয়েছে এবং বিভিন্ন আয়াতে বারবার শিরক থেকে বেঁচে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করলেও শিরক ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তার সাথে শরিক করা ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। এবং যে আল্লাহর সাথে শরিক করে সে এক মহাপাপ করে। (সুরা নিসা : ৪৮)
শিরক যারা করবে, তাদের জন্য জান্নাত হারাম ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন, আর যে আল্লাহর সাথে শরিক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। (সুরা মায়েদা: ৭২)
উল্লিখিত হাদিসে সবচেয়ে ভয়াবহ ৪টি কবিরা গুনাহের মধ্যে প্রথমেই বলা হয়েছে শিরকের কথা। এছাড়া আরও বহু আয়াত ও হাদিসে শিরকের ভয়াবহতা এবং শাস্তির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
২. অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে হত্যা করা
নিরপরাধ মানুষ হত্যা বা খুন ইসলামে মানুষের হক সম্পর্কিত সবচেয়ে বড় গুনাহ। ইসলামে মানুষ হত্যা দুনিয়াতে দণ্ডণীয় অপরাধ, এর শাস্তি ভোগ করতে হবে আখেরাতেও। একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার অপরাধ কত ভয়াবহ তা ফুটে ওঠে এ আয়াতে, আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা জমিনে সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করলো সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল। আর যে একজন মানুষের প্রাণ বাঁচালো, সে যেন সব মানুষকে বাঁচালো। (সুরা মায়েদা: ৩২)
একাধিক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষ হত্যাকে কুফরি বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুসলিমকে গালি দেয়া গুনাহের কাজ এবং তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা কুফুরি। (সহিহ মুসলিম: ১২৪)
হত্যাকারী বা খুনিকে অভিশপ্ত ও চিরজাহান্নামী ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম; যাতে সে স্থায়ীভাবে থাকবে, তার ওপর আল্লাহর ক্রোধ ও অভিশাপ এবং আল্লাহ তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সুরা নিসা: ৯৩)
৩. বাবা-মাকে কষ্ট দেওয়া
কোরআনে আল্লাহ তাআলা নিজের ইবাদতের সাথে যুক্ত করে বাবা মায়ের প্রতি উত্তম আচরণ ও ইহসানের আবশ্যকীয়তা বর্ণনা করেছেন। বাধ্যক্যে উপনীত বাবা-মায়ের সেবা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের কোনো আচরণে বিরক্তি প্রকাশ করতেও নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং বাবা-মায়ের সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে উফ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। তাদের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন । (সুরা ইসরা: ২৩, ২৪)
এ আয়াতে বাবা-মায়ের আচরণে বিরক্ত হয়ে উফ বলতেও নিষেধ করা হয়েছে। অর্থাৎ তারা কষ্ট পান এ রকম ছোট বড় যে কোনো কথা, কাজ বা আচরণই নিষিদ্ধ।
৪. মিথ্যা বলা বা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া
মুসলমানদের একটি আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য সত্যবাদিতা; সত্য বলা, সত্য সাক্ষ্য দেওয়া, সত্য প্রতিষ্ঠা করা, সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের পক্ষে থাকা। ধোঁকা, প্রতারণা, ভাণ ও ভণ্ডামি থেকে দূরে থাকা।
মুমিনদের সত্যের সাথে থাকার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ,তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সুরা তাওবা: ১১৯)
মিথ্যা, ধোঁকা ও প্রতারণা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। মুনাফিকরা নিজেদের বিশ্বাসের ব্যাপারে যেমন অসত্য কথা বলে, প্রতারণা করে, অন্যান্য ক্ষেত্রেও মিথ্যাই তাদের স্বভাব। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি; কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা খেলাপ করে এবং আমানত রাখা হলে তাতে খেয়ানত করে। (সহিহ বুখারি: ৩৩)
মিথ্যা সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য। রসিকতা বা দুষ্টুমির ছলেও মিথ্যা বলার সুযোগ নেই। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে, তার জন্য ধ্বংস অনিবার্য, ধ্বংস অনিবার্য, ধ্বংস অনিবার্য। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯০