যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

হাদিস বর্ণনায় যার খ্যাতি ছিল দুনিয়াজোড়া

নাফিসা বিনতে হাসান (রহ.) আহলে বাইয়াতের শ্রেষ্ঠ নারীদের অন্যতম। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত হাসান বিন আলী (রা.)-এর পৌত্রের মেয়ে। তার মাতা-পিতা উভয়ে চাচাতো ভাই-বোন ছিলেন।১৪৫ হিজরিতে তিনি মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন এবং মদিনায় বেড়ে ওঠেন। ইলম, জুহদ ও ইবাদতে যার খ্যাতি ছিল দুনিয়াজোড়া। ইলমের প্রাজ্ঞতায় নিজেকে এতটা উচ্চতায় নিয়ে যান যে বিয়ের বয়সে উপনীত হওয়ার আগেই তিনি নাফিসাতুল ইলম তথা জ্ঞানমণি উপাধি লাভ করেন। তার পিতা হাসান বিন জায়েদ (রহ.) আবু জাফর মনসুরের শাসনামলে মদিনার গভর্নর ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি প্রসিদ্ধ আলেমও ছিলেন।কেউ কেউ বলেন যে তিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ ছিলেন। কিন্তু কিছু কুচক্রী মহল তার বিরুদ্ধে খলিফা মনসুরের কান ভারি করে। ফলে তিনি বন্দি হন এবং তার ধন-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরে অবশ্য খলিফা নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং তাকে মুক্তি দিয়ে সম্মানের সঙ্গে আগের পদে বহাল রাখেন।

নবী করিম (সা.)-এর পবিত্র বংশের অংশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবারের সবারই ইলম ও আমলের চর্চা ছিল ব্যাপক। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই ছিলেন যুগের সেরা ব্যক্তিত্ব। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় পর নাফিসা বিনতে হাসান (রহ.)-এর বিবাহ হয় ইসহাক বিন জাফর আস সাদিক (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনিও নবীজির আরেক দৌহিত্র হজরত হুসাইন (রা.)-এর বংশধর এবং বিজ্ঞ আলেম ছিলেন। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে তিনি মিসরে গমন করেন।তার আগমনের সংবাদ পেয়ে মিসরবাসী উত্ফুল্ল হয়ে ওঠে। দলে দলে মানুষ তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ছুটে আসে। মিসরেই তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং এখানেই তার দুই সন্তান কাসেম ও উম্মে কুলসুমের জন্ম হয়।

নাফিসা বিনতে হাসান (রহ.) লিখতে জানতেন না। কিন্তু এই নিরক্ষরতার বাধাকে উপেক্ষা করে তিনি হাদিসের জ্ঞান লাভ করেন; কোরআন ও তাফসির স্মৃতিতে ধারণ করেন। তার সম্পর্কে জয়নব বিনতে ইয়াহইয়া মুতাওয়াজ বলেন, আমি ৪০ বছর যাবৎ আমার ফুফুর খিদমত করেছি। এই দীর্ঘ সময়ে আমি তাকে প্রায় রাতে ঘুমাতে এবং দিনে পানাহার করতে দেখিনি। আমার ফুফু কোরআন এবং এর তাফসির মুখস্থ করেছিলেন। তিনি ছিলেন তাবে তাবেঈ। নিজ জীবদ্দশায় এমন বহু নারী তাবেঈর সঙ্গ পেয়েছেন, যারা নারী সাহাবিদের সাহচর্য এবং তাদের কাছ থেকে ইলম লাভে ধন্য হয়েছেন।ইলমে হাদিসের ব্যাপারে তার জ্ঞানের সুবাস ছড়িয়ে গিয়েছিল চার দিকে। বহু মানুষ তার মজলিশে উপস্থিত হতো এবং পর্দার আড়াল থেকে তার থেকে হাদিস বর্ণনার সনদ লাভ করত। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) যখন ইলম অন্বেষণের জন্য মিসর সফর করেন, তখন তিনিও তার মজলিশে উপস্থিত হন এবং তার কাছ থেকে হাদিসের জ্ঞান লাভ করেন। সেই সূত্রে হজরত নাফিসা (রা.) এই মহান ইমামের উস্তাজা হওয়ারও সৌভাগ্য লাভ করেন।

অন্য এক বর্ণনায় আছে, হজরত শাফেয়ি (রহ.) তার খিদমতে উপস্থিত হয়ে হাদিস শোনাতেন। ছাত্র হিসেবে শাফেয়ি (রহ.)-এর প্রতি তার শ্রদ্ধা ও স্নেহের এক বিশেষ নজর ছিল। হজরত নাফিসা (রহ.) তাকে খুব সম্মান করতেন এবং শাফেয়ি (রহ.) তার কাছে দোয়া চাইতেন। শাফেয়ি (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর লোকেরা তার মৃতদেহ নিয়ে নাফিসা (রহ.)-এর ঘরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছিলেন এবং তিনি দোয়া করেছিলেন।মহীয়সী এই নারী ইলম, আমল ও জুহদের পাশাপাশি অনেক ধন-সম্পদের অধিকারী ছিলেন। যার মাধ্যমে তিনি অসহায়ের পাশে দাঁড়াতেন এবং দরিদ্রদের সাহায্য করতেন। স্বীয় জীবদ্দশায় তিনি ৩০ বার হজ করেন। হজের জন্য মদিনা থেকে মক্কা পর্যন্ত হেঁটে যেতেন। যাত্রাপথেও মানুষ তার বর্ণনাকৃত হাদিস লিখে নিত।২৮০ হিজরিতে তিনি মিসরে ইন্তেকাল করেন এবং মিসরবাসীর অনুরোধে সেখানেই সমাধিস্থ হন। তার জানাজায় জনতার ঢল নেমেছিল। তবে মিসরের অজ্ঞ কিছু জনসাধারণ তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে। তার কবরে বিভিন্ন শিরকি কার্যক্রম চালায়। ইসলামে এসব শিরকের কোনো স্থান নেই। (তারিখে দিমাশক ১১/১২৮)।