পবিত্র কাবাঘরে ১২০ কেজি স্বর্ণের নতুন গিলাফএ বছর পবিত্র হজের খুতবা দেবেন পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. সালেহ বিন হুমাইদজুলুমকারীদের জন্য আখেরাতে কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছেকোরআন ও হাদিসে নারীর সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারযে পদ্ধতিতে হজ করা উত্তম
No icon

হজরত হোসাইনের (রা.) অনন্য মর্যাদা

হজরত হোসাইন (রা.) ছিলেন নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাতি; নবিজির (সা.) চাচাতো ভাই ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলীর (রা.) ঔরসে এবং মেয়ে হজরত ফাতেমার (রা.) গর্ভে চতুর্থ হিজরির ৩ শাবান মদিনায় হোসাইন (রা.) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তাদের দ্বিতীয় সন্তান। জন্মের পর নাবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার কানে আজান দেন, সপ্তম দিনে আকিকা করেন এবং মাথার চুল পরিমাণ রূপা সদকা করেন।

হজরত আলী (রা.) ও ফাতেমার (রা.) পরিবার ছিল নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের পরিবারের মতোই। তিনি সব সময় তাদেরকে নিজের পরিবার গণ্য করতেন। ওমর ইবনে আবি সালামা (রা.) বলেন, উম্মে সালামার (রা.) ঘরে নবিজির (সা.) ওপর এ আয়াত নাজিল হয়,

إنمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

হে নবির পরিবার, আল্লাহ তাআলা তো চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। (সুরা আহযাব: ৩৩)

সে সময় নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফাতেমা, হাসান ও হোসাইনকে (রা.) ডাকেন এবং তাদের একখানা চাদরে আবৃত করেন। আলী (রা.) তার পেছনে ছিলেন। তিনি তাকেও চাদরে ঢেকে নেন, তারপর বলেন,

اللَّهُمَّ هَؤُلاَءِ أَهْلُ بَيْتِي فَأَذْهِبْ عَنْهُمُ الرِّجْسَ وَطَهِّرْهُمْ تَطْهِيرًا হে আল্লাহ! এরাই আমার পরিবার! আপনি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দিন এবং তাদের উত্তমরূপে পবিত্র করুন! (সুনানে তিরমিজি: ৩৭৮৭)

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার দুই নাতি হাসান ও হোসাইনকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তাদের বুকে ঝড়িয়ে ধরতেন, চুমু খেতেন। নবিজি (সা.) বলতেন, من أحبَّهما فقد أحبَّني و من أبغضَهما فقد أبغضَني يعني الحسَنَ و الحُسَينَ

যে হাসান হোসাইনকে ভালোবাসে, সে আমাকেও ভালোবাসে, যে তাদের অপছন্দ করে, সে আমাকেও অপছন্দ করে। (সুনানে ইবনে মাজা: ১৩৪)

যারা হাসান-হোসাইনকে ভালোবাসে, নবিজি (সা.) তাদের জন্য দোয়া করেছেন। ওসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, এক রাতে কোনো প্রয়োজনে আমি নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে উপস্থিত হলাম। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বের হলেন। তিনি তার পেছনে কিছু আড়াল করে রেখেছিলেন। আমার প্রয়োজন শেষ হলে আমি তাকে বললাম, আপনার পেছনে কী আড়াল করে রেখেছেন? তিনি আড়াল সরালে দেখলাম তারা হাসান ও হোসাইন। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,

هٰذَانِ ابْنَايَ وَابْنَا ابْنَتِي اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُمَا فَأَحِبَّهُمَا وَأَحِبَّ مَنْ يُحِبُّهُمَا এ দুজন আমার সন্তান, আমার দৌহিত্র। হে আল্লাহ! আমি এদের ভালোবাসি, আপনিও এদের ভালোবাসুন এবং তাকে ভালোবাসুন, যে এদের ভালোবাসে। (সুনানে তিরমিজি: ৩৭৬৯)

হাসাইন হোসাইনকে জান্নাতি যুবকদের সর্দার ঘোষণা করে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الْجَنَّةِ হাসান ও হোসাইন জান্নাতি যুবকদের সর্দার। (সুনানে তিরমিজি: ৩৭৬৮)

হজরত হোসাইন (রা.) শহিদ হবেন এটা নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। জিবরাইল (আ.) নবিজিকে (সা.) কারবালার মাটি দেখিয়েছিলেন এবং জানিয়েছিলেন এখানে তাকে শহিদ করা হবে। (তাবরানি)

আল্লাহর রাসুলের (সা.) ওফাতের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর আশুরার দিন কারবালার প্রান্তরে হজরত হোসাইন (রা.) অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে শাহাদাত বরণ করেন।আল্লাহ তাআলা জান্নাতে তার মর্যাদা উচ্চকিত করুন, আমাদেরকে তার আদর্শে জীবনযাপন করার, আখেরাতে তার সঙ্গী হওয়ার তওফিক দিন। যারা তাকে অন্যায়ভাবে নির্যাতন করেছে, হত্যা করেছে, তার হত্যায় কোনোভাবে সহযোগিতা করেছে তারা অভিশপ্ত; তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ, ফেরেশতাদের অভিশাপ, সব মানুষের অভিশাপ।