
রমজান মাসে যে কোনো ইবাদতের সওয়াবই বহুগুণ বেড়ে যায়। রমজানের প্রত্যেকটি নফল ইবাদতের সওয়াব ফরজ ইবাদতের সমান। প্রতিটি ফরজ ইবাদতের সওয়াব হয় সত্তরটি ফরজ ইবাদতের সমান। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, পবিত্র রমজনের একটি রাত বরকত ও ফজিলতের দিক থেকে হাজার মাস থেকেও উত্তম। এ মাসের রোজাকে আল্লাহ তাআলা ফরজ করেছেন এবং এর রাতগুলোয় আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোকে নফল ইবাদত রূপে নির্দিষ্ট করেছেন। যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ফরজ ইবাদত ছাড়া সুন্নত বা নফল ইবাদত করবে, তাকে এর বিনিময়ে অন্যান্য সময়ের ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব প্রদান করা হবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো ফরজ আদায় করবে, সে অন্যান্য সময়ের ৭০টি ফরজ ইবাদতের সমান পুণ্য লাভ করবে। (বায়হাকি)
তাই রমজানে বেশি বেশি নেক আমল করার চেষ্টা করা উচিত। ফরজ রোজা ও নামাজের পাশপাশি বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা উচিত, বেশি বেশি দান-সদকা করা উচিত।রমজানের একটি বিশেষ আমল রোজাদারদের ইফতার করানো। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে যে কোনো রোজাদারকে ইফতার করানো অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। বহু হাদিসে রোজাদারদের ইফতার করানোর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। জায়েদ ইবনে খালেদ আল-জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কোনো রোজাদারকে যে ব্যক্তি ইফতার করায় সে রোজাদারের সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করে এবং এ কারণে রোজাদারের সাওয়াব থেকে একটুও কমানো হয় না। (সুনানে তিরমিজি: ৮০৭)
এ হাদিসে বর্ণিত ফজিলত দরিদ্র রোজাদারদের ইফতার করানোর ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য, সম্পদশালী রোজাদারদের ইফতার করানোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। নিজের আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের ইফতার করালেও এ সওয়াব লাভ হবে। আর কেউ যদি কোনো অভাবী রোজাদার ব্যক্তিকে খাওয়ায়, তাহলে সে ইফতার করানোর পাশাপাশি অভাবগ্রস্তকে খাবার খাওয়ানো ও সাহায্য করার সওয়াবও লাভ করবে।
অভাগ্রস্ত মানুষকে খাবার খাওয়ানোর সওয়াব ও পুরস্কার বর্ণনা করে কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ یُطۡعِمُوۡنَ الطَّعَامَ عَلٰی حُبِّهٖ مِسۡكِیۡنًا وَّ یَتِیۡمًا وَّ اَسِیۡرًا اِنَّمَا نُطۡعِمُكُمۡ لِوَجۡهِ اللّٰهِ لَا نُرِیۡدُ مِنۡكُمۡ جَزَآءً وَّ لَا شُكُوۡرًا اِنَّا نَخَافُ مِنۡ رَّبِّنَا یَوۡمًا عَبُوۡسًا قَمۡطَرِیۡرًا فَوَقٰهُمُ اللّٰهُ شَرَّ ذٰلِكَ الۡیَوۡمِ وَ لَقّٰهُمۡ نَضۡرَۃً وَّ سُرُوۡرًا وَ جَزٰىهُمۡ بِمَا صَبَرُوۡا جَنَّۃً وَّ حَرِیۡرًا
তারা নিজেদের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও মিসকিন, ইয়াতিম ও বন্দীকে খাবার খাওয়ায়। তারা বলে,‘আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদেরকে খাবার খাওয়াই। আমরা তোমাদের থেকে কোন প্রতিদান চাই না এবং কোন শোকরও না। আমরা আমাদের রবের পক্ষ থেকে এক ভীতিপ্রদ ভয়ানক দিবসের ভয় করি। সুতরাং সেই দিবসের অকল্যাণ থেকে আল্লাহ তাদের রক্ষা করলেন এবং তাদের প্রদান করলেন সজীবতা ও আনন্দ। আর তারা যে ধৈর্যধারণ করেছিল তার পরিণামে তিনি তাদেরকে জান্নাত ও রেশমী বস্ত্রের পুরস্কার প্রদান করবেন। (সুরা দাহর: ৮-১২)