
ফরজ নামাজের পাশাপাশি নবিজি (সা.) ও তার সাহাবিরা নিয়মিত ১২ রাকাত নফল নামাজ পড়তেন। যে নামাজকে আমরা সুন্নাতে মুআক্কাদা বলে থাকি। প্রতিদিন ১২ রাকাত নফল নামাজের ফজিলত বর্ণনা করে রাসুল সা. বলেছেন,
مَنْ صَلَّى اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ بُنِيَ لَهُ بِهِنًّ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ
যে ব্যক্তি প্রতি দিন ও রাতে বারো রাকাত নামাজ আদায় করবে, তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। (সহিহ মুসলিম: ৭২৮)
সাধারণ দিনগুলোতে কখন কীভাবে এই ১২ রাকাত নামাজ পড়তে হবে তার বর্ণনা দিয়ে নবিজি (সা.) বলেছেন,
أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمغرب وَرَكْعَتَيْنِ بعد الْعشَاء وَرَكْعَتَيْنِ قبل صَلَاة الْفَجْرِ চার রাকাত জোহরের ফরজের আগে, দুই রাকাত জোহরের ফজরের পরে, দুই রাকাত মাগরিবের ফজরের পরে, দুই রাকাত ইশার ফরজের পরে আর দুই রাকাত ফজরের ফরজের আগে আদায় করতে হবে। (সুনানে তিরমিজি: ৪১৫)
তবে জুমার নামাজের ফরজ যেহেতু দুই রাকাত, ১২ রাকাত পূর্ণ করার জন্য জুমার সুন্নাতে মুআক্কাদা হবে মোট আট রাকাত; জুমার আগে চার রাকাত, পরে চার রাকাত। কেউ কেউ জুমার পরে সুন্নাত ৬ রাকাতও বলেছেন। তবে বেশিরভাগ আলেমের মত হলো, জুমার পর চার রাকাত সুন্নাতে মুআক্কাদা, আরও দুই রাকাত পড়া সুন্নাতে যায়েদা।জুমার আগের চার রাকাত সুন্নত নামাজ সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে প্রমাণিত রয়েছে। আবু উবাইদ থেকে বর্ণিত রয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জুমার আগে চার রাকাত পড়তেন। (ইবনে আবী শায়বা: ৫৪০২২) প্রখ্যাত তাবেয়ি ইবরাহিম নাখঈ (রহ.) বলেন, সাহাবায়ে কেরাম জুমার আগে চার রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়তেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা: ৫৪০৫)
মসজিদুল হারামে জুমার আগে সুন্নত নামাজ আদায়ে সমস্যা হয় যে কারণে
মসজিদুল হারামে সাধারণত জুমার ওয়াক্ত হওয়ার ৩০ মিনিট আগে জুমার প্রথম আজান দেওয়া হয়, এই সময় নফল পড়া গেলেও জুমার সুন্নত নামাজ পড়ার সুযোগ নেই। যেহেতু তখনও জুমার ওয়াক্ত হয়নি। এরপর ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খতিব মিম্বরে উঠে সালাম দেন, তখন ময়াজ্জিন জুমার দ্বিতীয় আজান দেন, আজান শেষে খুতবা শুরু হয়। তখনও জুমার সুন্নত নামাজ পড়া যাবে না। কারণ জুমার খুতবা শোনা ওয়াজিব। জুমার দিন ইমাম খুতবার জন্য মিম্বরে বসে গেলে নামাজসহ অন্য যে কোনো কাজ করা নিষিদ্ধ। ইমামের খুতবার জন্য অপেক্ষা করা ও খুতবা শোনা জরুরি।
নবিজি (সা.) বলেন, মুসলমান ব্যক্তি যদি জুমার দিন গোসল করে মসজিদে যায়, কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকে, ইমাম বের হয়নি দেখলে যে পরিমাণ ইচ্ছা নামাজ পড়ে, ইমাম বের হয়ে থাকলে বসে যায় ও চুপ থেকে খুতবা শোনে ও ইমামের সাথে নামাজ আদায় করে, তাহলে ওই জুমায়ই এ ব্যক্তির জীবনের সব গুনাহ যদি মাফ না-ও হয়, এটা তো অবশ্যই হবে যে, পরবর্তী জুমা পর্যন্ত তা তার জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমদ: ২০৭২১)
তাহলে মসজিদুল হারামে জুমার আগের সুন্নত কীভাবে আদায় করবেন?
জুমার নামাজ যারা মসজিদুল হারামে আদায় করবেন, তারা জুমার আগের সুন্নত নামাজ জুমার পরে আদায় করবেন যেহেতু আগে সুন্নত আদায়ের সুযোগ থাকে না।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) জোহরের আগে চার রাকাত সুন্নত আদায় করতে না পারলে জোহরের পর তা আদায় করতেন। (সুনানে তিরমিজি: ৪২৬)