জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, ধ্বংসহোক সেই ব্যক্তি! যে তার মা-বাবা উভয়কে অথবা উভয়ের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল অথচ সে জান্নাত লাভ করতে পারল না। হোক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- আমিন । অর্থাৎ আল্লাহ কবুল করুন। (মিশকাত) কত মারাত্মক কথা। এ হাদিস থেকে অনুমান করা যায় যে, মা-বাবার সঙ্গে অবাধ্য আচরণ করলে কেন কবিরা গোনাহ হবে।মা-বাবার অবাধ্য হওয়া আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থী। কেননা আল্লাহ তাআলা মা-বাবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ পালন করা প্রত্যেক সন্তানের জন্য ফরজ। এ জন্য যারা মা-বাবার অবাধ্য হবে; এটি তাদের জন্য কবিরা গোনাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ আর আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। (আরও) নির্দেশ দিয়েছি যে আমার প্রতি ও তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। ; (সুরা লোকমান : আয়াত ১৪)
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত মা-বাবার অবাধ্য না হওয়া আল্লাহর নির্দেশ। আর এর ব্যতিক্রম করার অর্থই হলো- আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা। আর তা কবিরা গোনাহ।
এমনকি বাবা-মা অমুসলিম হলেও...
মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করা কতটা আবশ্যক তা এ আয়াত থেকে সুস্পষ্ট। আল্লাহ তাআলা শুধু মুমিন মুসলমান নয়; বরং সব মানুষকে উদ্দেশ্য করে বাবা-মার সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি তাঁরা অমুসলিম হলেও তাঁদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا حَتَّى إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةً قَالَ
আমি মানুষকে তার বাবা-মার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার দুধ ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন শক্তি-সামর্থে্যর বয়সে ও চল্লিশ বছরে পৌছেছে, তখন বলতে লাগল-
رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ উচ্চারণ ;রাব্বি আওযিনি আন আশকুরা নিমাতাকাল্লাতি আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালেদাইয়্যা ওয়া আন আমালা সালেহান তারদাহু ওয়া আসলিহ লি ফি জুররিয়্যাতি ইন্নি তুবতু ইলাইকা ওয়া ইন্নি মিনাল মুসলিমিন।
হে আমার পালনকর্তা! আমাকে এরূপ ভাগ্য দান কর, যাতে আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম। (সুরা আহক্বাফ : আয়াত ১৫)
এছাড়াও একাধিক হাদিসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাবা-মার সঙ্গে অবাধ্য আচরণকে কবিরা গোনাহ ও হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাহলো-
১. হজরত আবু বাকারাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় গোনাহ (কবিরা গোনাহ) কি তা বলে দেব না? আর তাহল-
আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা মা-বাবার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা। (বুখারি)
২. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কবিরা গোনাহর মধ্যে একটি হলো মা-বাবাকে গালি দেওয়া। (মুসলিম)
৩. বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর মায়ের অবাধ্যতাকে হারাম করেছেন। (এছাড়াও) কন্যা-সন্তানদের জীবন্ত কবর দেওয়া; দানের ব্যাপারে নিজে দান না করে অন্যের কাছে পাওয়ার মনোভাষণা চিন্তা করা; অযথা বাদানুবাদ তথা তর্ক-বিতর্ক করা; অধিক যাঞ্চা ও সম্পদের অপচয়কেও হারাম করেছেন।
৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত ওমর ইবনে হাজামকে ইয়েমেনবাসীর কাছে এ মর্মে পত্র লিখে পাঠান যে কেয়ামতের দিন যেসব ব্যাপারগুলো কবিরা গোনাহ হিসেবে সাব্যস্ত হবে; তাহলো- আল্লাহর সঙ্গে শরিক সাব্যস্ত করা;
কোনো মুমিনকে হত্যা করা;
আল্লাহর রাস্তায় জেহাদের সময় যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া;
মা-বাবার অবাধ্যতায় লিপ্ত হওয়া;
বিবাহিত নারীর বিরুদ্ধে অপবাদ রটানো;
যাদু বিদ্যা শিক্ষা দেওয়া;
< সুদ খাওয়া এবং
ইয়াতিমের সম্পদ গ্রাস করা। (ইবনে হিব্বান)
মনে রাখতে হবে
বাবা-মার অবাধ্যতায় শুধু কবিরা গোনাহ হয় এমনটিই নয়, বরং যারা বাবা-মার অবাধ্য হবে, সে ব্যক্তি জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির দিকে ফিরেও তাকাবেন না। আরও অনেক বর্ণনা এসেছে হাদিসে।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, মা-বাবার সঙ্গে অবাধ্য হওয়ার মতো অপরাধে কবিরা গোনাহ ও হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা। কুরআনের নির্দেশ মেনে হারাম ও কবিরা গোনাহমুক্ত থাকা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কবিরা গোনাহ ও হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকতে বাবা-মার প্রতি আনুগত্য ও তাদের সেবা করার তাওফিক দান করুন। কুরআনের নির্দেশ মানার এবং হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।