আল্লাহর রহমত সবার প্রয়োজন। বিশেষ কিছু আমল আছে, যেগুলো আল্লাহর রহমতে সহায়ক। নিচে এমন কিছু আমল উল্লেখ করা হলো
নেক আমল করা :
নেক আমল আল্লাহর রহমত লাভের অন্যতম মাধ্যম। যারা নেক আমল করে, আল্লাহকে স্মরণ করে, জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে না, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, তাদের রহমতের চাদরে আগলে রাখেন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা তোমাদের রবকে ডাকো অনুনয়-বিনয় করে ও চুপিসারে। নিশ্চয়ই তিনি পছন্দ করেন না সীমা লঙ্ঘনকারীদের। শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপিত হওয়ার পর পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না, আর তাঁকে ভয়ভীতি ও আশা-ভরসা নিয়ে ডাকতে থাকো, আল্লাহর রহমত তো (সব সময়) তাদের কাছে আছে, যারা নেক আমল করে। (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৫-৫৬)
গুনাহ ত্যাগ ও নবীজির অনুসরণ : গুনাহ মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, তাই যারা আল্লাহর রহমত পেতে চায়, তাদের উচিত গুনাহ থেকে দূরে থাকা।পাশাপাশি নবীজি (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ করা। কারণ আল্লাহর নবীজির সুন্নতের অনুসরণ ছাড়া আল্লাহর অনুসরণ সম্ভব নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর আমার করুণা ও দয়া প্রতিটি জিনিসকেই পরিব্যপ্ত করে রয়েছে, সুতরাং আমি তাদের জন্যই কল্যাণ অবধারিত করব, যারা পাপাচার থেকে বিরত থাকে, জাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি ঈমান আনে। যারা প্রেরিত উম্মি নাবীকে অনুসরণ করবে। (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৬-১৫৭)
মানুষের প্রতি দয়া করা :
আল্লাহ দয়ালুদের ভালোবাসেন, যারা মাখলুককে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, তাদের প্রতি দয়া করে, মহান আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করেন। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা দয়ালুদের ওপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা জমিনে বসবাস করছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া করো, তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। দয়া রহমান থেকে উদগত। যে ব্যক্তি দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ তাআলাও তার সঙ্গে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন।
যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ তাআলাও তার সঙ্গে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯২৪)
ঈমান ও দ্বিনের জন্য আত্মোৎসর্গ : যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে এবং আল্লাহর দ্বিন প্রতিষ্ঠায় যেকোনো ত্যাগ এমনকি নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পারে, তিনি তাদের ভালোবাসেন, তাদের ওপর রহম করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে ও যারা হিজরত করেছে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে, তারা আল্লাহর রহমতের আশা করে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২১৮)
নামাজ কায়েম করা :
নামাজ কায়েম করা এবং জাকাত আদায় করাও মহান আল্লাহর রহমত লাভের অন্যতম মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও এবং রাসুলের আনুগত্য করো, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হতে পারো। (সুরা : নুর, আয়াত : ৫৬)
রহমতের দোয়া করা :
আল্লাহর রহমত পেতে তাঁর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা যেতে পারে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ নিজেই তাঁর বান্দাদের দোয়া শিখিয়েছেন, আর বলো, হে আমাদের রব, আপনি ক্ষমা করুন, দয়া করুন এবং আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ১১৮)
পবিত্র কোরআনের অনুসরণ :
পবিত্র কোরআনে এসেছে, আর এটি কিতাব, যা আমি নাজিল করেছি, বরকতময়। সুতরাং তোমরা তাঁর অনুসরণ করো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও। (সুরা আনআম, আয়াত : ১৫৫)
আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের অনুসরণ : জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর হুকুম ও নবীজি (সা.)-এর তরিকা অনুসরণ আল্লাহর রহমত লাভের মাধ্যম। এর মাধ্যমে বান্দার ঈমানের পূর্ণতা পায়, আমল ত্রুটিমুক্ত হয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ আদেশ করেছেন, আর তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহ ও রাসুলের, যাতে তোমাদের দয়া করা হয়। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩২)
বিনয়ের সঙ্গে কোরআন তিলাওয়াত শোনা : পবিত্র কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক মানুষকে আল্লাহর রহমত লাভে সহযোগিতা করে। কোরআনের খেদমত, কোরআনের তিলাওয়াত, বিনয়ের সঙ্গে কোরআন তিলাওয়াত শোনা ইত্যাদি আল্লাহর রহমত এনে দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ থাকো, যাতে তোমরা রহমত লাভ করো। (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০৪)
বেশি বেশি ইস্তেগফার করা :
বেশি বেশি ইস্তেগফার আল্লাহর ক্রোধ থেকে রক্ষা করে, কোনো জাতি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে, তাদের ওপর আজাব আসে না, তাই অকল্যাণ দেখা দিলে অবশ্যই ইস্তেগফারে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া উচিত, আল্লাহর রহমত আসবেই ইনশাআল্লাহ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, সে বলল, হে আমার জাতি, তোমরা কল্যাণের আগে কেন অকল্যাণকে ত্বরান্বিত করতে চাইছ? কেন তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছ না যেন তোমাদের রহমত করা হয়? (সুরা নামল, আয়াত : ৪৬)
সৎ কাজে আদেশ অসৎ কাজে বাধা দেওয়া :
মুমিন যখন ঐক্যবদ্ধ থাকে, আল্লাহ ও বান্দার হক আদায় করে, পরস্পর সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান করে, তখন তাদের ওপর আল্লাহর রহমত নেমে আসে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অন্যের বন্ধু, তারা ভালো কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, আর তারা সালাত কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে। এদের আল্লাহ শিগগিরই দয়া করবেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা তাওবা, আয়াত : ৭১)