পবিত্র কোরআনসহ ধর্মীয় গ্রন্থ অবমাননা নিষিদ্ধ করতে আইন করছে ডেনমার্ক। এরই অংশ হিসেবে প্রকাশ্যে কোরআন, তাওরাতসহ অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থের অবমাননাকে ‘অপরাধ’ বিবেচনা করে দেশটির সংসদে একটি বিল উত্থাপন করা হয়। নতুন আইন মতে, লঙ্ঘনকারীদের অর্থদণ্ডের পাশাপাশি দুই বছর কারাদণ্ড হতে পারে। গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) ড্যানিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। নতুন এই আইন প্রসঙ্গে দেশটির বিচারবিষয়ক মন্ত্রী পিটার হামেলগার্ড বলেছেন, ‘বিলটি নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তা কারো মৌখিক বা লিখিত অভিব্যক্তি কিংবা অঙ্কনের ওপর আইনটি প্রযোজ্য হবে না। বিলটি এমন কিছু কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে, যা উন্মুক্ত স্থানে বা জনসাধারণের উদ্দেশে সম্পাদিত হয়। মূল কথা হলো, তা একটি ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ বলে বিবেচিত হবে। যেমন— প্রকাশ্যে বাইবেল বা কোরআন পুড়িয়ে ফেলা।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক কোরআন পোড়ানোর ঘটনার ফলে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে ডেনমার্ককে এমনভাবে দেখা হচ্ছে, যেন দেশটি অন্য দেশ ও ধর্মের বিরুদ্ধে অবমাননা এবং অপমানজনক কর্মকাণ্ডের সুবিধা দিয়ে থাকে। এ ধরনের অপমানজনক ও অবমাননাকর কার্যক্রম দেশের ভেতরে ও বাইরে উভয় স্থানে ড্যানিশদের নিরাপত্তাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।’
এমন পদক্ষেপ গ্রহণকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন। তিনি বলেছেন, ‘ডেনমার্ক যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার প্রতি আমার যথাযথ সম্মান রয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে।’
উপপ্রধানমন্ত্রী জ্যাকব এলেম্যান জেনসেন বলেছেন, ‘অন্যদের ধর্মগ্রন্থ পোড়ানো, ক্ষতি করা বা ধ্বংস করার পেছনে উসকানি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। তা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ডেনমার্ককে একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে। এমন অবস্থায় সরকার নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে থাকতে পারে না। কোনো বই পুড়িয়ে ফেলা যায় না; বরং তা পড়তে হয়।’
গত কয়েক মাসে সুইডেন, ডেনমার্কসহ উত্তর ইউরোপীয় ও নর্ডিক দেশগুলোতে বারবার পবিত্র কোরআনের কপি পোড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ১৪ আগস্ট সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে কোরআনের কয়েকটি পৃষ্ঠা পোড়ানো হয়। বাকস্বাধীনতার অজুহাতে পুলিশের নিরাপত্তায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদে মুসলিম দেশসহ সারা বিশ্বের অসংখ্য মানুষ ক্ষুব্ধ হয়। মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) ও মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগসহ মুসলিম দেশগুলো এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানায়।
গত ১২ জুলাই এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ রোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে (ইউএনএইচআরসি) একটি প্রস্তাব পাস হয়। সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ধর্মীয় গ্রন্থের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করা হয়। তাতে এ ধরনের ঘৃণ্য কাজকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল বলা হয়।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি