কটি পাপ। মানুষের কাছে খুবই প্রিয় ও মধুময়। তৃপ্তির সঙ্গে এ পাপটি করে থাকেন অধিকাংশ মানুষ। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে এ তালিকায় আছে ধর্মকর্মে বিশ্বাসীরাও। এমনকি অনেক ইসলামিক স্কলারসহ জ্ঞানী-বুদ্ধিজীবীদেরও এর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি জড়িত থাকতে দেখা যায়। কী সেই মধুময় পাপ? ইসলামে এ পাপ সম্পর্কে দিকনির্দেশনাই বা কী?হ্যাঁ, প্রায় অধিকাংশ মানুষের কাছে এ পাপটি মধুময়। তা হচ্ছে- অনুমান করে কারো প্রতি কিংবা কারো পোস্ট বা স্ট্যাটাসে বাজে কমেন্ট করা। অনুমান করে কাউকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া। এটি অনেক বড় অপরাধ এবং কবিরাহ গোনাহসমূহের মধ্যে একটি।বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। কেউ জেনে আবার কেউ না জেনে একে-অপরের প্রতি বাজে কমেন্ট বা মন্তব্য করে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকে।
অনুমান করে বাজে কমেন্ট কিংবা মিথ্যা অপবাদ; সাধারণ কবিরাহ গোনাহ নয়; বরং বান্দার হক সংশ্লিষ্ট জঘন্য কবিরাহ গোনাহ। আল্লাহ তাআলা নিজেও তা ক্ষমা করবেন না। যতই তাওবাহ করুক না কেন বান্দার হক বান্দা মাফ না করলে আল্লাহ তাআলা মাফ করবেন না।<মনে রাখা জরুরি এমন অনেক আমলি ব্যক্তি রয়েছেন যারা কেয়ামতের দিন বান্দার হক সংশ্লিষ্ট গোনাহ থেকে মাফ নিতে নিতে সব সাওয়াব বা আমলহীন নিঃস্ব হয়ে যাবে। এ সব অপরাধীরা সবচেয়ে বড় অভাবি হিসেবে চিহ্নিত।
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ গোনাহটি ব্যাপকভাবে হচ্ছে। অথচ কারো ব্যাপারে অনুমান নির্ভর যে কোনো কমেন্ট/কথা ইসলামে নিষিদ্ধ। আর তা যদি হয় খারাপ-মন্দ কমেন্ট কিংবা মিথ্যা অপবাদ তবে তো এর পরিণাম আরও বেশি ভয়াবহ। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে এ সম্পর্কে বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا کَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوۡا وَ لَا یَغۡتَبۡ بَّعۡضُکُمۡ بَعۡضًا ؕ اَیُحِبُّ اَحَدُکُمۡ اَنۡ یَّاۡکُلَ لَحۡمَ اَخِیۡهِ مَیۡتًا فَکَرِهۡتُمُوۡهُ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ হে মুমিনগণ! তোমরা বেশি অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয়ই কোনো কোনো অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাক। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অধিক তাওবা কবূলকারী, অসীম দয়ালু। (সুরা হুজরাত : আয়াত ১২)
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- কেউ কোনো ব্যক্তির ভালো কাজ বা কথা প্রসঙ্গে এভাবে মন্তব্য করল যে, লোকটি লোক দেখানোর জন্য কিংবা প্রচার পাওয়ার জন্য এ কাজটি বা এ কথাটি বলেছেন। অথচ আপনি নিজেও জানেন না যে, লোকটি আসলেই কি চিন্তা-ভাবনা নিয়ে কাজটি করেছেন।আবার বর্তমান সময়ে ফেসবুকে দেওয়া পোস্ট বা বক্তব্য-বিবৃতি সম্পর্কে কত সহজেই না আমরা নানা রকম ধারণ পোষণ করে থাকি। অনেকের ব্যাপারে অপবাদ দিয়ে থাকি। যা একেবারেই মিথ্যা। আর এটিই বান্দার হক সংশ্লিষ্ট কবিরাহ গোনাহ।
হাদিসে পাকে এটাকে >أَكْذَبُ الْحَدِيْثِ(সব চেয়ে বড় মিথ্যা) গণ্য করা হয়েছে। আর এ থেকে বিরত থাকার প্রতি জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ তোমরা কুধারণা থেকে দূরে থাক। কারণ খারাপ ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার।(বুখারি, মুসলিম)
অনুমান নির্ভর বাজে কমেন্ট ও মিথ্যা অপবাদকে মহান আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বড় অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
اِذۡ تَلَقَّوۡنَهٗ بِاَلۡسِنَتِکُمۡ وَ تَقُوۡلُوۡنَ بِاَفۡوَاهِکُمۡ مَّا لَیۡسَ لَکُمۡ بِهٖ عِلۡمٌ وَّ تَحۡسَبُوۡنَهٗ هَیِّنًا وَّ هُوَ عِنۡدَ اللّٰهِ عَظِیۡمٌ> যখন তোমরা মুখে মুখে এ (কথা) প্রচার করছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করছিলে, যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না এবং তোমরা একে তুচ্ছ গণ্য করেছিলে; যদিও আল্লাহর দৃষ্টিতে এ ছিল গুরুতর বিষয়। (সুরা নুর : আয়াত ১৫)
সুতরাং মানুষের উচিত< অনুমান নির্ভর সব কমেন্ট/মন্তব্য থেকে বেঁচে থাকা। কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ না দেওয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কারো পোস্ট বা স্ট্যাটাস দেখলেই তাতে খারাপ কমেন্ট না করা। কারো প্রতি প্রবল ধারণা না করা। বরং ছোট্ট এ হাদিসের ওপর আমল করাই জরুরি। তাহলো-
;রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারোরই আল্লাহর প্রতি সু-ধারণা পোষণ ব্যতিত মৃত্যুবরণ করা উচিত নয়। (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কারো প্রতি অনুমান করে কমেন্ট বা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।