মৃত্যুর পর মানুষের পারলৌকিক জীবন শুরু হয়। এ সময় থেকেই তারা ভালো ও মন্দ কাজের ফল ভোগ করে। তাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত অনুসারে কবর জীবনের ওপর বিশ্বাস করাও ঈমানের অংশ। আল্লাহ তাআলা ফেরাউনের সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেন, সকাল-সন্ধ্যা তাদের জাহান্নামের সামনে উপস্থাপন করা হয়। যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে সেদিন বলা হবে তোমরা ফেরাউনের সম্প্রদায়কে কঠিন শাস্তির মধ্যে প্রবেশ করাও। (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৪৬)
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন কারণে কবর জীবনে শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো :
১. শিরক করা : আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার করা গুরুতর পাপ। এ কারণে কবরে শাস্তি হয়। ইরশাদ হয়েছে, আপনি যদি দেখতেন যখন জালিমরা মৃত্যু যন্ত্রণায় থাকবে এবং ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বলবে, তোমাদের প্রাণ বের করো। আজ তোমাদের অবমাননাকর শাস্তি দেওয়া হবে। কারণ তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে অমূলক কথা বলতে এবং তাঁর নিদর্শনের ব্যাপারে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে। (সুরা আনআম, আয়াত : ৯৩)
হাদিসে এসেছে, জায়েদ বিন সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বললেন, এ উম্মত কবরে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তোমরা মৃত ব্যক্তিদের দাফন করা ছেড়ে না দিলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম যেন তিনি তোমাদেরও কবরের আজাব শুনতে দেন, যেভাবে আমি শুনতে পাই। অতঃপর তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, আল্লাহর কাছে তোমরা জাহান্নামের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাও। (মুসলিম, হাদিস : ২৮৬৭)
২. মুনাফেকি স্বভাব : কপট স্বভাবের ব্যক্তিরা কবরে শাস্তি পাবে। ইরশাদ হয়েছে, মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশপাশে রয়েছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক এবং মদিনাবাসীর মধ্যেও কেউ কেউ, তারা কপটতায় খুবই পটু, আপনি তাদের চেনেন না, আমি তাদের চিনি, আমি তাদের দুবার শাস্তি দেব এবং পরে তাদের মহাশাস্তির দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। (সুরা তাওবা, আয়াত : ১০১)
৩. আল্লাহর বিধান পরিবর্তন : আল্লাহ কর্তৃক বৈধ কাজকে অবৈধ মনে করা এবং অবৈধ কাজকে বৈধ মনে করা কঠিন গুনাহের কাজ।
যেমন মূর্তি পূজা করা এবং এর জন্য কোনো কিছু উৎসর্গ করা শিরক এবং ইসলামে তা নিষিদ্ধ। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি আমর ইবনে আমির খুজাইকে তার বেরিয়ে আসা নাড়িভুঁড়ি নিয়ে জাহান্নামের আগুনে চলতে দেখেছি। এই ব্যক্তি প্রথম মূর্তির নামে পশু উৎসর্গ করার প্রথা প্রচলন করেছিল। (বুখারি, হাদিস : ৪৬২৩)
৪. প্রস্রাবের পর পবিত্রতা অর্জনে অবহেলা : প্রস্রাব করার পর পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে অনেকে অবহেলা করে। অন্য হাদিসে এসেছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, প্রস্রাবের কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কবরের আজাব হয়ে থাকে। অতএব তোমরা যথাযথভাবে পবিত্রতা অর্জন করো। (তাবরানি, হাদিস : ১১১০৪)
৫. পরনিন্দা করা : অন্য হাদিসে পরনিন্দার কারণে কবরে আজাবের কথা বর্ণিত হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, একদা রাসুল (সা.) দুটি কবর অতিক্রম করছিলেন। তখন তিনি বলেন, তাদের দুজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের এ শাস্তি বড় কোনো কারণে নয়। একজন প্রস্রাব করার পর উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করত না। অন্যজন পরনিন্দা করত, অর্থাৎ একজনের কথা অন্যজনকে বলত। এরপর রাসুল (সা.) খেজুরের তাজা ডাল দুই ভাগ করে উভয়ে কবরে গেড়ে দেন। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি এমন করলেন কেন? রাসুল (সা.) বললেন, তা শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত হয়তো তাদের শাস্তি লাঘব হবে। (বুখারি, হাদিস : ২১৮)
৬. ঋণ পরিশোধ না করা : ঋণ পরিশোধ না করে মারা গেলে কবর থেকে শাস্তি শুরু হয়। সাআদ বিন আতওয়াল (রা.) বর্ণনা করেন, আমার ভাই ৩০০ দিনার ও ছোট সন্তান রেখে মারা যায়। আমি সন্তানদের জন্য তা খরচ করার ইচ্ছা করি। তখন রাসুল (সা.) আমাকে বলেন, তোমার ভাই ঋণের কারণে আটকা পড়েছে। তার পক্ষ থেকে তুমি তা পরিশোধ করো। অতঃপর আমি তা পরিশোধ করে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি ঋণ পরিশোধ করেছি। শুধু একজন নারী কোনো প্রমাণ ছাড়া দুই দিনারের দাবি করছেন। তখন তিনি বলেন, তাকেও দাও। সে সত্য বলেছে। (আহমদ, হাদিস : ১৬৭৭৬)
৭. হাজিদের কাপড় চুরি করা : জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, আমার কাছে জাহান্নাম উপস্থিত করা হয়। তখন তোমরা আমাকে পেছনে সরতে দেখেছ। কারণ আগুনের লেলিহান শিখা আমাকে স্পর্শ করার ভয় হচ্ছিল। তখন সেখানে আমি লৌহশলাকাধারী ব্যক্তিকে দেখি। সে জাহান্নামে তার নাড়িভুঁড়ি নিয়ে চলছিল। সে লৌহশলাকা দিয়ে হাজিদের সম্পদ চুরি করত। মালিক টের পেলে সে বলত, আমার লৌহশলাকায় আটকা পড়েছে। আর টের না পেলে তা নিয়ে চলে যেত। (মুসলিম, হাদিস : ৯০৪)
৮. প্রাণীদের বন্দি করে শাস্তি দেওয়া : রাসুল (সা.) বলেন, আমি জাহান্নামে ওই নারীকে দেখেছি যে বিড়াল বেঁধে রেখেছিল। সে বিড়ালকে খেতেও দিত না, আবার ছেড়েও দিত না যেন সে কীটপতঙ্গ খেতে পারে। এভাবে ক্ষুধায় সে মারা যায়। (মুসলিম, হাদিস : ৯০৪)