যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

রেকর্ড হচ্ছে প্রতিটি কথা ও কাজ

এক দিকে স্বয়ং আল্লাহ নিজে সরাসরি মানুষের প্রতিটি গতিবিধি এবং চিন্তা ও কল্পনা সম্পর্কে অবহিত। অপর দিকে প্রত্যেক মানুষের জন্য দু জন ফেরেশতা নিয়োজিত আছেন যারা তার প্রত্যেকটি তৎপরতা লিপিবদ্ধ করছেন। তার কোনো কাজ ও কথাই তাদের রেকর্ড থেকে বাদ পড়ে না। অর্থাৎ আল্লাহর আদালতে যে সময় মানুষকে পেশ করা হবে তখন কে কী করে এসেছে সে বিষয়ে আল্লাহ নিজ থেকেই অবহিত থাকবেন। তা ছাড়া সে বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য এমন দু জন সাক্ষীও উপস্থিত থাকবেন যারা তার কাজকর্মের লিখিত নথিভুক্ত প্রমাণাদি এনে সামনে পেশ করবেন। লিখিত এ প্রমাণাদি কেমন ধরনের হবে তার সঠিক ধারণা করা আমাদের জন্য কঠিন। তবে আজ আমাদের সামনে যেসব সত্য উন্মোচিত হচ্ছে তা দেখে এ বিষয়টি একেবারে নিশ্চিত মনে হয় যে, যে পরিবেশে মানুষ অবস্থান ও কাজকর্ম করে তাতে চতুর্দিকের প্রতিটি অণু-পরমাণুর ওপর তার কণ্ঠস্বর, ছবি ও গতিবিধির ছাপ পড়ে যাচ্ছে। এসব জিনিসের প্রত্যেকটিকে পুনরায় হুবহু সেই আকার-আকৃতি ও স্বরে এমনভাবে পেশ করা যেতে পারে যে, আসল ও নকলের মধ্যে সামান্যতম পার্থক্যও থাকবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

মানুষ যন্ত্রপাতির সাহায্যে এ কাজটি অত্যন্ত সীমিত মাত্রায় করছে। কিন্তু আল্লাহর ফেরেশতারা এসব যন্ত্রপাতিরও মুখাপেক্ষী নয়, এসব প্রতিবন্ধকতায়ও আবদ্ধ নয়। মানুষের নিজ দেহ এবং তার চার পাশের প্রতিটি জিনিস তাদের জন্য টেপ ও ফিল্ম-স্বরূপ। তারা এসব টেপ ও ফিল্মের ওপর প্রতিটি শব্দ এবং ছবি অতি সূক্ষ্ম ও খুঁটিনাটি বিষয়সহ অবিকল ধারণ করতে পারে এবং পৃথিবীতে ব্যক্তি যেসব কাজ করত কিয়ামতের দিন তাকে তার নিজ কানে নিজ কণ্ঠস্বরে সেসব কথা শুনিয়ে দিতে পারে, নিজ চোখে তার সব কর্মকাণ্ডের এমন জ্বলজ্যান্ত ছবি দেখিয়ে দিতে পারে যা অস্বীকার করা তার জন্য সম্ভব হবে না। প্রযুক্তির ক্রমোন্নতি এ সত্য দিন দিন সুস্পষ্ট হচ্ছে।এখানে এ কথাটিও ভালোভাবে বুঝে নেয়া দরকার যে, আল্লাহ তায়ালা আখিরাতের আদালতে কোনো ব্যক্তিকে কেবল নিজের ব্যক্তিগত জ্ঞানের ভিত্তিতে শাস্তি দেবেন না; বরং ন্যায়বিচারের সমস্ত পূর্বশর্ত পূরণ করে তাকে শাস্তি দেবেন। এ কারণে দুনিয়াতেই প্রত্যেক ব্যক্তির সমস্ত কথা ও কাজের পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড তৈরি করা হচ্ছে যাতে অনস্বীকার্য সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তার সমস্ত কর্মকাণ্ডের প্রমাণাদি পেশ করা যায়।

এ কথাটিকে আরো সুষ্ঠুভাবে সূরা ইনফিতারে বলা হয়েছে- অথচ তোমাদের ওপর পরিদর্শক নিযুক্ত রয়েছে, এমন সম্মানিত লেখকবৃন্দ, যারা তোমাদের প্রত্যেকটি কাজ জানে। (আয়াত : ১০-১২) এটি পূর্বাপর আলোচনার অংশ। অর্থাৎ বলা হচ্ছে- মানুষ চাইলে কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করতে পারে; কিন্তু এতে প্রকৃত সত্য বদলে যাবে না। প্রকৃত সত্য হচ্ছে এই যে, তাদের রব এই দুনিয়ায় তাদেরকে লাগামহীনভাবে ছেড়ে দেননি; বরং তিনি তাদের প্রত্যেকের ওপর অত্যন্ত সত্যনিষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করে রেখেছেন। তারা নিরপেক্ষভাবে তাদের সমস্ত ভালো ও মন্দকাজ রেকর্ড করে যাচ্ছে। তাদের কোনো কাজ সম্মানিত তত্ত্বাবধায়কের অগোচরে থাকছে না। মানুষ অন্ধকারে, একান্ত নির্জনে, জনমানবহীন গভীর জঙ্গলে অথবা এমন যেকোনো অবস্থায় কোনো কাজ করে থাকলে যে সম্পর্কে মানুষ পূর্ণ নিশ্চিন্ত থাকছে যে, তা সব সৃষ্টির অগোচরে রয়ে গেছে, তারপরও তা তাদের কাছ থেকে গোপন থাকছে না। এই তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতাদের জন্য আল্লাহ কিরামান কাতেবিন শব্দ ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ লেখকবৃন্দ যারা কারিম। অত্যন্ত সম্মানিত ও মর্যাদাবান। তাদের কারোর সাথে ব্যক্তিগত ভালোবাসা বা শত্রুতা নেই। ফলে একজনের প্রতি অন্যায় পক্ষপাতিত্ব ও অন্যজনের প্রতি অযথা বিরোধিতা করে সত্যবিরোধী ঘটনা রেকর্ড করার কোনো অবকাশই সেখানে নেই। তারা খেয়ানতকারীও নয়। ডিউটি ফাঁকি দিয়ে নিজেদের তরফ থেকে খাতায় উল্টো-সিধে লিখে দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা ঘোষখোরও নয়। নগদ কিছু নিয়ে কারো পক্ষে বা কারো বিপক্ষে মিথ্যা রিপোর্ট দেয়ার কোনো প্রশ্নই তাদের ব্যাপারে দেখা দেয় না। এসব নৈতিক দুর্বলতা থেকে তারা মুক্ত। কাজেই সৎ ও অসৎ উভয় ধরনের মানুষের নিশ্চিত থাকা উচিত যে, তাদের প্রত্যেকের সৎকাজ হুবহু রেকর্ড করা হবে এবং কারোর ঘাড়ে এমন কোনো অসৎ কাজ চাপিয়ে দেয়া হবে না, যা সে করেনি।