মানুষ তার মানবিক গুণ হিসেবে যেকোনো কাজের প্রাপ্তিতে তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট হয়। আর অপ্রাপ্তিতে অতৃপ্ত ও অসন্তুষ্ট হয়। মানুষ সুনিশ্চিত ও তাৎক্ষণিক প্রাপ্তিতে বিশ্বাস করে। তাই আমরা এখানে এমন কিছু আমলের কথা উল্লেখ করছি, যার প্রাপ্তি সুনিশ্চিত ও তাৎক্ষণিক হয়ে থাকে।
১. কৃতজ্ঞতায় নিয়ামত বৃদ্ধি : শুকরিয়া তথা কৃতজ্ঞতা আদায় করা, মানবজাতির যাপিত জীবনে একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ দিক। স্বয়ং হজরত রাসূল সা: সর্বাবস্থায় আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন। শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে আমাদের জন্য সদা-সর্বদা কৃতজ্ঞতা আদায় করা অনিবার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- আমি লোকমানকে দান করেছিলাম কৃতজ্ঞতা (এবং তাকে বলেছিলাম) যে, আল্লাহর শোকর আদায় করতে থাক। যে কেউ শোকর আদায় করে, সে তো, কেবল নিজ কল্যাণার্থেই শোকর আদায় করে। আর কেউ না- শোকরি করলে আল্লাহ তো অতি বেনিয়াজ, প্রশংসাযোগ্য। (সূরা লোকমান-১২) বোঝা গেল, শোকর আদায় করা, মানুষের জন্য অনিবার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা কতটা দয়ালু। যে ব্যক্তি প্রাপ্ত নিয়ামতরাজির শুকরিয়া আদায় করবে, আল্লাহ তায়ালা তার এই অনিবার্য দায়িত্ব আদায় করার ফলে, তার নিয়ামত বৃদ্ধি করে দেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- এবং সেই সময়টিও স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেছিলেন, তোমরা সত্যিকারার্থে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে, আমি তোমাদেরকে আরো বেশি দেবো। আর যদি অকৃতজ্ঞ করো, তবে জেনে রেখো, আমার শাস্তি অতি কঠিন। (সূরা ইবরাহিম-৭) বোঝা গেল, কৃতজ্ঞতা প্রকাশে প্রাপ্ত নিয়ামতের বৃদ্ধি সুনিশ্চিত ও তাৎক্ষণিক।
২. ধৈর্য ধরার প্রতিদান : সবর বা ধৈর্য, কুরআন মাজিদের একটি পরিভাষা। একজন খাঁটি মানুষের ভেতরে যেসব কল্যাণকর গুণাবলি থাকা জরুরি, তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো ধৈর্য ধরা। ধৈর্য শক্তিমান মানুষের অনন্য একটি গুণ। মানুষ পার্থিব জীবনে নানা কারণে সময়ে অসময়ে নানাবিধ বালামুসিবত ও পেরেশানির সম্মুখীন হয়ে থাকে। এ সময় তার আশা ভরসা ও স্বস্তির অনন্য উপায় হলো- ধৈর্য ধরা। ধৈর্যশীল বান্দার প্রশংসার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- বস্তুত মানুষ অতি ক্ষতির মধ্যে আছে। তারা ব্যতীত, যারা ঈমান আনে, সৎ কর্ম করে এবং একে অন্যকে সত্যের উপদেশ দেয় ও একে অন্যকে সবরের উপদেশ দেয়। (সূরা আসর : ২-৩) সবর বা ধৈর্য পবিত্র কুরআনুল মাজিদের অন্যতম একটি পরিভাষা। সবরের অর্থ হলো যখন মানুষের মনের চাহিদা ও কামনা-বাসনা তাকে কোনো ফরজ কাজ আদায় থেকে বিরত রাখতে চায় কিংবা কোনো গুনাহের কাজে লিপ্ত হতে উৎসাহ জোগায়, তখন ধৈর্য ধারণ করে মনের ইচ্ছাকে দমন করা। আর যখন কোনো অনাকাক্সিক্ষত বিষয় সামনে এসে যায়, তখন আল্লাহ তায়ালার ফয়সালায় ধৈর্য ধরে খুশি থাকা। ধৈর্যশীল বান্দার সুসংবাদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব (কখনো) কিছুটা ভয়-ভীতি দিয়ে, (কখনো) ক্ষুধা দিয়ে এবং (কখনো) জান-মাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে। পবিত্র কুরআনের সুসংবাদ শোনাও তাদেরকে যারা এরূপ অবস্থায় সবরের পরিচয় দেয়। (সূরা বাকারাহ-১৫৫) পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- যেসব বান্দা মুসিবতে ও পেরেশানিতে ধৈর্য ধরবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ধৈর্যের বিনিময়ে প্রতিদান দেবেন। যারা সবর অবলম্বন করে তাদের সওয়াব দেয়া হবে অপরিমিত। (সূরা জুমার-১০) বোঝা গেল, ধৈর্যের প্রতিদান সুনিশ্চিত ও অপরিমিত।