হালাল জীবিকা উপর্জনের জন্য আয়-রোজগারের বিকল্প নেই। আয়-রোজগারের মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে রিজিক দিয়ে থাকেন। কুরআনুল কারিমের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ ৪ আমলে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ধারণাতীত উপায় থেকে রিজিক দানে ধন্য করবেন। কী সেই চার আমল?
কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন। (সুরা তালাক : আয়াত ২-৩)
আর তাহলো-
১. আল্লাহকে সব কাজে ভয় করা।
২. সময় মতো নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।
৩. বাবা-মা প্রতি যথাযথ হক আদায় করা।
৪. বেশি পরিমাণ ইস্তেগফার করা।
বিশেষ এই ৩টি আমলের বরকতে মহান আল্লাহ নিজ দায়িত্বে বান্দার রিজিক বাড়িয়ে দেবেন এবং ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেবেন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দেন-
অতঃপর বলেছি তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন। [ সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)
এ আয়াতগুলো মহান আল্লাহ বান্দাকে একটি আমল করার মাধ্যমে রিজিক, সন্তান-সন্তুতি, ধন-সম্পদসহ অনেক নেয়ামত দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শর্ত শুধু একটি, আর তাহলো- বেশি বেশি ইসতেগফার করা। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। সে আলোকে ছোট-বড় কয়েকটি ইসতেগফার ও তা পড়ার নিয়ম তুলে ধরা হলো-
أَستَغْفِرُ اللهَ উচ্চারণ :আস্তাগফিরুল্লাহ।
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
নিয়ম :প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন। (মিশকাত)
أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ :আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।
নিয়ম :এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতেগফার করতেন। (বুখারি)
رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ উচ্চারণ :রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।
অর্থ : হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়। নিয়ম :রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।(আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ :আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।>
অর্থ : আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি। নিয়ম :দিনের যে কোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়। (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)
- সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।
অর্থ :হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না। নিয়ম : <সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে। (বুখারি)
ঋণ মুক্তির মাধ্যমেও বান্দা রিজিকে বরকত পাবে। সে কারণেই হাদিসে পাকে ঋণ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার কথা বলেছেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে-
১. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিন্তাযুক্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِن ضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ <