যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

স্ত্রীর ভরণ-পোষণে ইসলামের বিধান কী?

স্বামীর ওপর স্ত্রীর ভরণ-পোষণ, খোরপোষ বহন করা ফরজ। দুনিয়ার জীবনে স্ত্রীর মৌলিক মানবাধিকার তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় সব অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণ করার দায়িত্ব স্বামীর। কোনো কারণে স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি এসব দায়িত্ব পালন না করে তবে কি স্বামী গোনাহগার হবে? স্ত্রীর ভরণ-পোষণ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

হ্যাঁ, স্বামীর ওপর আবশ্যক হলো- স্ত্রীর ভরণ-পোষন, খোরপোষ ও অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণ করা। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে এ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
১. الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاء بِمَا فَضَّلَ اللّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُواْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللّهُ وَاللاَّتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلاَ تَبْغُواْ عَلَيْهِنَّ سَبِيلاً إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا
পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল। এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ (স্ত্রীদের জন্য) ব্যয় করে। সে মতে (বিনিময়ে) নেককার স্ত্রীরা হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাজত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ। (সুরা নিসা : আয়াত ৩)
এ আয়াতে কারিমায় আল্লাহ তাআলা প্রথমে পুরুষদের দায়িত্বশীল ও শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিয়েছেন। অতঃপর স্ত্রীদের প্রতি দায়িত্ব পালন তথা তাদের জন্য ব্যয় (ভরণ-পোষণ; খোর-পোষ; অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণ) করার কথা বলেছেন। পাশাপাশি স্ত্রীদের দায়িত্বও তুলে ধরেছেন। যাতে তাদের দায়িত্ব পালন দেখে পুরুষরাও তাদের প্রতি সদয় ও যথাযথ দায়িত্ব পালনে সচেতন হয়।

২. لِيُنفِقْ ذُو سَعَةٍ مِّن سَعَتِهِ وَمَن قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آتَاهَا سَيَجْعَلُ اللَّهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا
বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী (স্ত্রীর জন্য) ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিজিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশী ব্যয় করার আদেশ কাউকে করেন না। আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেবেন। (সুরা তালাক : আয়াত ৭)

এ আয়াতে সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের জন্য খরচ করার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। এমনকি তাদের থাকার বা বসবাসের ব্যাপারেও মহান আল্লাহ আগের আয়াতে তুলে ধরেছেন। তারপর পুরুষ তথা স্বামীদেরকে স্ত্রীদের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। যখন স্ত্রীরা গর্ভাবস্থায় কিংবা শিশু সন্তানকে দুধ পান করায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

৩. أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنتُم مِّن وُجْدِكُمْ وَلَا تُضَارُّوهُنَّ لِتُضَيِّقُوا عَلَيْهِنَّ وَإِن كُنَّ أُولَاتِ حَمْلٍ فَأَنفِقُوا عَلَيْهِنَّ حَتَّى يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ فَإِنْ أَرْضَعْنَ لَكُمْ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ وَأْتَمِرُوا بَيْنَكُم بِمَعْرُوفٍ وَإِن تَعَاسَرْتُمْ فَسَتُرْضِعُ لَهُ أُخْرَى
তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ ঘরে বাস কর, তাদেরকেও বসবাসের জন্যে সেরূপ ঘর/বাসস্থান দাও। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন কর না। যদি তারা গর্ভবতী হয়, তবে সন্তানপ্রসব পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার বহন করবে। যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্যদান করে, তবে তাদেরকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেবে এবং এ সম্পর্কে পরস্পর সংযতভাবে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি পরস্পর জেদ কর, তবে অন্য নারী স্তন্যদান করবে।; (সুরা তালাক : আয়াত ৬)

৪. স্ত্রীর দায়িত্ব পালন না করলে স্বামী গোনাহগার হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে এমনই দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। হাদিসে পাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
كَفَى بِالْمَرْءِ اِثْمًا اَنْ يُّضَيِّعَ مَنْ يَعُوْلُ
কোনো ব্যক্তির গোনাহগার হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যাদেরকে পালন করে, তাদেরকে খোরপোষ দেয় না। আর এ হাদিসের আলোকে স্বামীর কাছে স্ত্রীই খোর-পোষ, ভরণ-পোষণ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাওয়ার প্রথম হকদার।