মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির সেরা, কিন্তু মানুষকে মানুষ হতে প্রয়োজন কিছু নিয়মাবলির অনুসরণ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের অনুসরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পবিত্র কুরআনে। আল্লাহতায়ালা বলেন, নিশ্চয় ইসলাম হলো আল্লাহর একমাত্র মনোনীত জীবনব্যবস্থা। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯)।
ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায় সব সময় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকত। সে পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের তাদের ইমানের বিদ্বেষ পোষণকারী চক্রান্তকারীদের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইহুদি ও নাসারারা প্রতিনিয়ত এ অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে যে, তোমাদের তাদের মতাদর্শের রঙে রঙিন করে দেবে।খ্রিষ্টানরা বলত আমাদের এক ধরনের রং আছে যা মুসলমানদের নেই। তাদের স্থিরকৃত রং ছিল হলুদ। তাদের নিয়ম ছিল, যখন কোনো শিশুর জন্য হতো, অথবা কেউ যখন তাদের দ্বীনে দীক্ষিত তখন তাকে সে রঙে ডুব দেওয়ানো হতো।তারপর তারা বলত এবার সে খাঁটি খ্রিষ্টান হয়ে গেল। আল্লাহ বলে দিলেন, হে মুসলমানগণ! তোমরা বলে দাও, তাদের পানির রং ধুলে তা শেষ হয়ে যায়। ধোয়ার পর এর কোনো প্রভাব বাকি থাকে না। বরং প্রকৃত রং তো হলো আল্লাহর দ্বীন ও মিল্লাতের রং; আমরা আল্লাহর দ্বীনকে গ্রহণ করেছি। এ দ্বীন যে গ্রহণ করে সে সব ধরনের মলিনতা থেকে পবিত্র হয়ে যায়।দ্বীনকে রং বলে এ দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, রং যেরূপ চোখে অনুভব করা যায়; অনুরূপ মুমিনের ইমানেরও আলামত রয়েছে, যা তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং সব কাজকর্মে ফুটে ওঠা উচিত। আল্লাহতায়ালা কুরআনে বান্দাদের তার রঙে রঙিন হওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন তোমরা বলো, আমরা গ্রহণ করেছি আল্লাহর রং। আল্লাহর রঙের চেয়ে কার রং উত্তম? এবং আমরা তাঁরই ইবাদত করি। (সুরা বাকারা : ১৩৮)।
ক্ষণস্থায়ী এ পৃথিবীতে মানুষের হায়াত খুবই অল্প। এ সময় মানুষের কর্তব্য কী? আল্লাহতায়ালাই ঘোষণা করছেন সময়ের শপথ, নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে, কিন্তু (তারা নয়) যারা ইমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে এবং যারা পরস্পরকে সত্যের তাকিদ দিয়েছে ও পরস্পরকে ধৈর্যের সবক দিয়েছে (সুরা আসর)। অর্থাৎ বিশ্বের সব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে যদি তারা আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিচালিত না হয়। আল্লাহর রঙে রঞ্জিত না হয়।তাছাড়া রোজার সামগ্রিক শিক্ষাও এটি। মানুষের ইমান আমলের সংশোধন, ব্যক্তিজীবনে তার প্রতিফলন, পরোপকার ও হিতকামী মনন ও দুঃখ-কষ্টে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ইমান রাখা এগুলোর প্রশিক্ষণই নিতে হয় রমজানে। রোজায় নিজের দেহ ও মনকে পূর্ণভাবে আল্লাহর রঙে রাঙিয়ে নিতে হবে।
ইমানদাররা আল্লাহর প্রেমিক। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, যারা ইমান এনেছে, আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা অত্যন্ত সুদৃঢ় (সুরা বাকারা, আয়াত-১৬৪)
। আল্লাহর প্রতি মুমিনের ভালোবাসা দিন দিন বৃদ্বি পায়। ফরজ সুন্নাতসহ দৈনন্দিনের যে আমলগুলো রয়েছে, এগুলোর মাধ্যমে মুমিনের অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা বাড়ে। রমজান মাসের রোজা, সেহরি, ইফতারি, তারাবি সব আমল ভালোবাসা বৃদ্বির মাধ্যম। ইসলামের প্রতিটি আহকামের মাঝে পারস্পরিক যোগসূত্র রয়েছে। একটি হুকুম আরেকটি হুকুমের দিকে বান্দাকে আগ্রহী করে তোলে। রমজানের দুমাস পরই আসে হজের মাস। রমজানে রোজা, তারাবি ও অন্য ইবাদতগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভালোবাসার এক উত্তাপ সৃষ্টি হয় মুমিনের হৃদয়ে। ভালোবাসার আকর্ষণে মুমিন বান্দা ছুটে যায় বাইতুল্লাহ পানে। লাব্বাইক, লাব্বাইক বলে প্রভুকে জানান দেয় নিজ ভালোবাসার। পারস্পরিক এ সম্পর্কের কারণেই রোজার পর হজ আসে। বান্দার সঙ্গে আল্লাহর যে গোপন প্রেম, রমজানে এটি শতগুণে বৃদ্ধি পায়।