অজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর
No icon

ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে সর্বস্তরে ঈমান ও ইসলামী শিক্ষা

বিশ্বজুড়ে ধর্ষণ নামক অশ্লীলতার নিকৃষ্ট জঘন্যতম অপরাধের বিস্তার লাভ করছে। সর্বত্র মানুষ আজ আতঙ্কিত। পত্র-পত্রিকায় দেখাযায় কোথাও না কোথাও ধর্ষণের সংবাদ প্রকাশিত হয় । উদ্বেগজনকহারে তা বেড়ে চলেছে। কিছু ঘটনা আছে, যা রীতিমতো রোমহর্ষক। ঘর-বাড়ি, পথ-ঘাট এমনকি শিক্ষাঙ্গনে পর্যন্ত এই জাহেলিয়াত থাবা বিস্তার করেছে। শিশু-বৃদ্ধা কেউই এই পাশবিকতার হাত থেকে নিরাপদ নয়।

জঘন্যতম অপরাধ ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে সর্বস্তরে ঈমান ও ইসলামী শিক্ষা বিস্তার করা, জবাবদিহি ও নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা। একইসাথে অশ্লীলতা, নগ্নতা, বিচারহীনতা, ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করা। ধর্ষণের প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য ইসলামী শিক্ষার অভাব, জবাবদিহি ও নৈতিক মূল্যবোধের শূন্যতা এবং অশ্লীলতা, বিচার-ব্যবস্থার দুর্বলতা, ক্ষমতার অপব্যবহারই দায়ী। ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্র সর্বত্র একই অবস্থা বিরাজমান।

 

অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান, তার কল্যাণ-কামনা করা, সৎকাজে সাহায্য করা, বিশেষত তাকে কোনো ধরনের কষ্ট না দেওয়া সকলের ক্ষেত্রে কাম্য। নারীর ক্ষেত্রে তা বিশেষভাবে কাম্য। নারী মানবজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ; বরং এছাড়া মানবজীবন অপূর্ণ। একই সাথে সে দুর্বল ও সংবেদনশীলও বটে। কাজেই তার সম্ভ্রমহানি করা, ইজ্জত-সম্মান লুণ্ঠন করা কত বড় অবিচার?

মানবতার মুক্তির দূত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে তো শুধু সৎকাজেরই অনুমতি চাওয়া যায়। অসৎকাজের অনুমতি চাওয়ার কল্পনাও করা সম্ভব নয়। কিন্তু এক যুবক তাই করল। সরাসরি নবীজি (সা.) -এর কাছে এসে ব্যভিচারের মত জঘন্য অপরাধের অনুমতি চেয়ে বসল। নবীজী (সা.) তাকে যেভাবে সংশোধন করলেন। তার অন্তর থেকে কীভাবে ব্যভিচারের মূলোৎপাটন করলেন। যুবক এসে বলল, আমাকে যিনার অনুমতি দিন। অন্যরা ধমকাতে লাগল- এই তুমি কার সামনে কী বলছ? চুপ কর! নবীজী ধমক দিলেন না। কাছে ডেকে নিলেন। বললেন- তোমার মায়ের সাথে কারো ব্যভিচার করা কি তুমি পছন্দ কর? আল্লাহর কসম, আপনার উপর আমার জান কোরবান হোক! কক্ষনো আমি এটা পছন্দ করব না, এটা হতে দিব না। কোনো মানুষই তার মায়ের সাথে কারো ব্যভিচার করাকে পছন্দ করবে না। তোমার মেয়ের সাথে কারো ব্যভিচার করা কি তুমি পছন্দ কর?

আল্লাহর কসম, আপনার উপর আমার জান কোরবান হোক! কখনো আমি এটা পছন্দ করব না, এটা হতে দিব না। কোনো মানুষই তার মেয়ের সাথে কারো ব্যভিচার করাকে পছন্দ করবে না। তোমার বোনের সাথে কারো ব্যভিচার করা কি তুমি পছন্দ কর? আল্লাহর কসম, আপনার উপর আমার জান কোরবান হোক! কখনো আমি এটা পছন্দ করব না, এটা হতে দিব না। কোনো মানুষই তার বোনের সাথে কারো ব্যভিচার করাকে পছন্দ করবে না। তোমার ফুফুর সাথে কারো ব্যভিচার করা কি তুমি পছন্দ কর? আল্লাহর কসম, আপনার উপর আমার জান কোরবান হোক! কখনো আমি এটা পছন্দ করব না, এটা হতে দিব না।

কোনো মানুষই তার ফুফুর সাথে কারো ব্যভিচার করাকে পছন্দ করবে না। তোমার খালার সাথে কারো ব্যভিচার করা কি তুমি পছন্দ কর? আল্লাহর কসম, আপনার উপর জান কোরবান হোক! কখনো আমি এটা পছন্দ করব না, এটা হতে দিব না। কোনো মানুষই তার খালার সাথে কারো ব্যভিচার করাকে পছন্দ করবে না। নবীজী তাকে আরো কাছে টানলেন। তার গায়ে হাত রেখে দুআ করে দিলেন : ‘আল্লাহ! আপনি তার গুনাহ ক্ষমা করে দিন। হৃদয়টা পবিত্র করে দিন। (অন্যায় কাজ থেকে) হেফাজতে রাখুন।’ বর্ণনাকারী আবু উমামা (রা.) বলেন, এরপর সে আর কোনোদিন ব্যভিচারের দিকে ফিরেও তাকায়নি। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২২১১)।

অর্থাৎ, নবীজী (সা.) তার মানসিকতার পরিশোধন করলেন- নিজের মা-বোন, মেয়ে, খালা-ফুফুর জন্য যা তোমার পছন্দ নয়, অন্যের মা-বোন, মেয়ে, খালা-ফুফুর সাথে তা কীভাবে করবে? এই অনুভূতি যদি অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে যায়, তাহলে কি কোনো নারী যৌন হয়রানি বা যৌন নির্যাতন কিংবা ধর্ষণের শিকার হতে পারে? উপরোক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) যুবকের মানসিকতার পরিবর্তন করলেন নিজের রক্ত-সম্পর্কের নারীদের উদাহরণ টেনে, যাদের সামান্য ক্ষতিও কেউ চায় না। তার দৃষ্টি খুলে দিলেন- তোমার আপনজনদের যে ক্ষতি তুমি চাও না; সকলেই নিজ নিজ আপনজনের এ ক্ষতি চায় না; নিজ মা-মেয়ে-বোন-খালা-ফুফুর সামান্য ক্ষতি চায় না। আর প্রতিটি নারীই কারো না কারো মা-মেয়ে-বোন-খালা-ফুফু।

যিনা-ধর্ষণের উল্লেখযোগ্য একটি ক্ষেত্র হল, প্রতিবেশী নারী। এ অপরাধের পাপবোধ ও ভয়াবহতা যেন পুরুষের অন্তরে থাকে তাই একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতিবেশীর সাথে ব্যভিচারকে জঘন্য অপরাধ সাব্যস্ত করেছন। এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় গোনাহ কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর কোনো সমকক্ষ সাব্যস্ত করা অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কোনটি? বললেন, সন্তান তোমার খাবারে ভাগ বসাবে এই ভয়ে তাকে হত্যা করা। জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কোনটি? বললেন, প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪২)। (চলবে)