নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত এসবই ইবাদত। নির্ধারিত সময়ে এসব ইবাদত-বন্দেগি করা মুমিন মুসলমানের জন্য আবশ্যক। কিন্তু এসব ইবাদতেই কি মুমিনের দায়িত্ব শেষ? সামাজিক দায়িত্ব পালনে মুমিনের ভূমিকা কি হওয়া উচিত?
নামাজ রোজা হজ জাকাতের ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগি মুমিনের জন্য নির্ধারিত কাজ। এসব ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি সমাজের কল্যাণে কিংবা অন্যের উপকারে কাজ করাও মুমিনের দায়িত্ব রয়েছে। সহজ ভাষায় যাকে বলা হয় পরোপকার। ইসলামে পরোপকারের যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনি এর ফজিলত এবং প্রতিদানও অসামান্য।
আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে সমাজ কল্যাণ তথা পরোপকারের ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এটিকে মানবতার অলংকার বলা হয়। এর বিনিময়ে পরাকের রয়েছে সুনিশ্চিত জান্নাতের ঘোষণা। সমাজ কল্যাণের প্রতি আগ্রহী করতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ اِنۡ طَآئِفَتٰنِ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اقۡتَتَلُوۡا فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَهُمَا ۚ فَاِنۡۢ بَغَتۡ اِحۡدٰىهُمَا عَلَی الۡاُخۡرٰی فَقَاتِلُوا الَّتِیۡ تَبۡغِیۡ حَتّٰی تَفِیۡٓءَ اِلٰۤی اَمۡرِ اللّٰهِ ۚ فَاِنۡ فَآءَتۡ فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَهُمَا بِالۡعَدۡلِ وَ اَقۡسِطُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُقۡسِطِیۡنَ আর যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয় তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। এরপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর বাড়াবাড়ি করে; তবে যে দলটি বাড়াবাড়ি করবে, তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ কর; যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তারপর যদি দলটি ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সঙ্গে মীমাংসা করে দাও এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালবাসেন। (সুরা হুজুরাত : আয়াত ৯)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের পরস্পরের দায়িত্ব হচ্ছে- এক মুমিন আরেক মুমিনের, আত্মীয়-স্বজন পরস্পরের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে। তাদের কল্যাণে সাধ্যানুযায়ী খোঁজ-খবর রাখবে; তাদের পাস্পরিক সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করবে। এসবই একজন মুমিনের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
وَ لَا یَجۡرِمَنَّکُمۡ شَنَاٰنُ قَوۡمٍ اَنۡ صَدُّوۡکُمۡ عَنِ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ اَنۡ تَعۡتَدُوۡا ۘ وَ تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡبِرِّ وَ التَّقۡوٰی ۪ وَ لَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ
কোন কওমের শত্রুতা যে, তারা তোমাদেরকে মসজিদে হারাম থেকে বাধা প্রদান করেছে, তোমাদেরকে যেন কখনো প্ররোচিত না করে যে, তোমরা সীমালঙ্ঘন করবে। সৎকর্ম ও তাকওয়ার মাধ্যমে তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ আজাব প্রদানে কঠোর। (সুরা মায়েদা : আয়াত ২)
অন্য উপকারের মূল কথা
সমাজের কল্যাণে একজনের সাহায্যে অন্য মুমিনের এগিয়ে আসা-ই হলো পরোপকার। সমাজের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি, অসঙ্গতি ও অপকর্ম বন্ধ ও সমাধানের নিয়তে কাজ করাই হলো অন্যের কল্যাণ এবং পরোপকার। তা হতে পারে এমন-
১. মাদকমুক্ত সমাজ গড়া, মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত রাখা। নেশাগ্রস্তকে চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমে সঠিক পথে নিয়ে আসা।
২. যৌতুক মুক্ত সমাজ গড়া। যৌতুক দেওয়া এবং নেওয়ার কুফল সম্পর্কে অন্যকে সচেতন করতে কাজ করা।
৩. এসিড সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়া। এটি মারাত্মক অপরাধ- তা মানুষকে জানানো।
৪. ধর্ষণমুক্ত সমাজ উপহারে কাজ করা। ধর্ষণ ঠেকাতে যথাযথ কাজ করা।
৫. যে কোনো সামাজিক নির্যাতন রোধে কাজ করা।
এসব কাজে এগিয়ে আসা প্রত্যেক ঈমানদারের একান্ত কাজ। ইসলামে এগুলোই অন্যের উপকার। আল্লাহ তাআলা মানুষকে এসব উপকারে এগিয়ে আসার ব্যাপারে এভাবে আহ্বান করেন-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ >মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবেযাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। (সুরা হুজরাত : আয়াত ১০)
যারা মুমিনের উপকারে এগিয়ে আসবে; মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য রয়েছে রহমত তথা অনুগ্রহ। পরোপকারীর জন্য, কল্যাণের কাজ করা ব্যক্তির জন্য রয়েছে পরকালে জান্নাতের সুনিশ্চিত ঘোষণা মুমিনের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। পরোপকারী সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন-
পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে। (সুরা বাকারা : আয়াত ৮২)
মনে রাখতে হবে
শুধু নামাজ রোজা করতেই মুমিন দায়িত্ব শেষ নয়। বরং সমাজের কল্যাণে কাজ করাই সবচেয়ে বড় সৎ কাজ। তাই নামাজ রোজা, হজ, জাকাতের পাশাপাশি অন্য মুমিন মুসলমানের কল্যাণে কাজ করা, সমাজের কল্যাণে কাজ করা প্রত্যেক ঈমানদারের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে কাজ করার তাওফিক দান করুন। সুনিশ্চিত জান্নাতের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।