যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

তওবা কবুল হলো কি না বুঝবেন কীভাবে?

তওবার অর্থ হচ্ছে (গুনাহ থেকে) ফিরে আসা। গুনাহ করার কেউ তওবা করলে তার তওবা কবুল হলো কি না তা বোঝা যাবে কীভাবে? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনাই বা কী?

কারও তওবা কবুল হয়েছে কি না এটা বোঝার কিছু উপায় ও আলামত আছে। তওবা কবুলের জন্য যেসব শর্ত রয়েছে, তা পালন করে প্রিয় নবির শেখানো ইসতেগফারে তওবা করলে মহান আল্লাহ বান্দার তওবা কবুল করবেন। তওবা কবুল হয়েছে এরকম কোনো আলামত বা চিহ্ন আছে কি না যা দেখে বোঝা যাবে যে তওবা কবুল হয়েছে। তাহলো-

গুনাহ করে তওবা করার পর যদি তওবা পরবর্তী জীবন আগের পাপাচারের জীবনের চেয়ে ভালো হয় অর্থাৎ পাপকাজ অনেক কমে যায় ও ভালো কাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় তাহলে আশা করা যেতে পারে যে তার তওবা মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে।

কিন্তু কারও যদি এমন না হয় অর্থাৎ তওবা করার আগের ও পরের জীবনের মাঝে কোনো পার্থক্য না থাকে, তাহলে বুঝতে হবে তার তওবায় ত্রুটি রয়েছে।

এরকম ব্যক্তিদের করণীয় হলো- এজন্য হতাশ না হওয়া। কেউ হতাশ হলেই শয়তান খুশী হয়ে যায়। তাই বার বার আন্তরিকতার সঙ্গে একনিষ্ঠ নিয়তে তওবা করা অব্যাহত রাখা। তওবা কবুলের ব্যপারে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।

তওবা কবুলের আলামাত

প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার সংকলিত আল-ইসতিদাদ লি-ইয়াওমিল মাআদ অর্থাৎ পরকালের পাথেয় কিতাবে তওবা কবুলের কিছু আলামত এভাবে ওঠে এসেছে-

একজন আলেমকে (জ্ঞানী ব্যক্তি) প্রশ্ন করা হয়েছিলো বান্দা যখন তওবা করে সে কি বুঝতে পারে যে তার তাওবা কবুল হয়েছে কি না

তিনি বললেন,এ সম্পর্কে আমি তোমাকে কোনো সমাধান দেব না; তবে যার তওবা কবুল হয়েছে বলে আশা করা যায়; এর কয়েকটি আলামত আছে। তাহলো-

১. সে নিজেকে গুনাহমুক্ত (মানুষ) বলে মনে করবে না;

২. তার অন্তর থেকে আনন্দ উঠে যাবে এবং সে (নিজেকে নিয়ে) চিন্তিত হবে;

৩. সে সৎ ব্যক্তিদের সংস্পর্শে বা কাছাকাছি হবে এবং অসৎ ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকবে;

৪. সে দুনিয়ার অল্প জিনিসকে বেশি মনে করবে এবং পরকালের অনেক আমলকে অল্প মনে করবে;

৫. আল্লাহ তাকে যে বিষয়ের জিম্মাদারী দিয়েছেন, সেইগুলোতে সে সব সময় ব্যস্ত থাকবে এবং আল্লাহ যেই বিষয়ের জামিন হয়েছেন, সেই বিষয়ে সে নির্লিপ্ত থাকবে;

৬. সে নিজের জবানকে হেফাজত করবে ও সব সময় চিন্তা-ভাবনা করবে। আর গভীরভাবে দুঃখ ও অনুশোচনা করবে।

মনে রাখতে হবে

কেউ যদি আন্তরিক তওবা করে তবে আল্লাহ ওই বান্দার তওবা কবুল করে নেন আর আন্তরিক তওবা যদি আল্লাহর কাছে কবুল হয়, তবে বান্দার আগের সব গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেন।

এমনকি আল্লাহ যেই গুনাহগুলো মাফ করে দেন, কেউ যদি সেগুলো থেকেও ফিরে আসে তবে এগুলোর বিপরীতে মহান আল্লাহ তাকে সাওয়াব দান করেন। যেভাবে মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমে ঘোষণা দিয়েছেন-

اِلَّا مَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَاُولٰٓئِکَ یُبَدِّلُ اللّٰهُ سَیِّاٰتِهِمۡ حَسَنٰتٍ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا তবে যারা তওবা করে বিশ্বাস ও সৎকাজ করে আল্লাহ তাদের পাপকর্মগুলিকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সুরা ফুরকান : আয়াত ৭০)

গুনাহ মাফ সম্পর্কে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন-

যদি কোনো ব্যক্তি গুনাহ থেকে তাওবাহ করে তাহলে তার গুনাহ মুছে ফেলা হবে। সঙ্গে সঙ্গে তার সেই গুনাহর কারণে শাস্তি ও তার কুফল থেকেও তাকে মুক্তি দেওয়া হবে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, একনিষ্ঠভাবে তওবা করা। তওবামুক্ত জীবন গঠন করে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা পাওয়ার চেষ্টা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিকভাবে তওবা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।