হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের সন্তান হারানোর বেদনায় হৃদয়ের আকুতি জানানোর ধরণ আল্লাহ তাআলার কাছে খুবই পছন্দনীয় ছিল। যা তিনি কোরআনে তুলে ধরেছেন। কারণ মুমিন মুসলমানকে এভাবেই সব সময় গভীর দুঃখ-বেদনায় আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পন করা দিকে ইঙ্গিত দেন-
اِنَّمَاۤ اَشۡکُوۡا بَثِّیۡ وَ حُزۡنِیۡۤ اِلَی اللّٰهِ উচ্চারণ : ইন্নামা আশকু বাছ্ছি ওয়া হুযনি ইলাল্লাহ।
অর্থ : আমি আমার অসহনীয় বেদনা, আমার দুঃখ শুধু আল্লাহর কাছেই নিবেদন করছি।
হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম সন্তান হারানোর বেদনায় কাতর। হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম তাঁর ভাইদের ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন। তারা তাদের বাবার কাছে মিথ্যা ঘটনা বর্ণনা করলেন। সন্তান হারানো ঘটনা শুনে ইয়াকুব আলাইহিস সালাম নিজের অশান্ত মনের আকুতি আল্লাহর কাছে এভাবে তুলে ধরেছিলেন-
قَالَ اِنَّمَاۤ اَشۡکُوۡا بَثِّیۡ وَ حُزۡنِیۡۤ اِلَی اللّٰهِ وَ اَعۡلَمُ مِنَ اللّٰهِ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ তিনি বলেছিলেন আমি আমার অসহনীয় বেদনা আমার দুঃখ শুধু আল্লাহর কাছেই নিবেদন করছি এবং আমি আল্লাহর কাছ থেকে তা জানি যা তোমরা জান না। (সুরা ইউসুফ : আয়াত ৮০)
এ আয়াতে আল্লাহর কাছে সাহায্য ও ধৈর্যধারনের বিষয়টি ওঠে এসেছে। সন্তান হারানোর ঘটনায় তিনি প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলেন। আর এ কষ্টের কথা তাঁর ছেলেরাসহ অন্য কারো কাছে তিনি ব্যক্ত করেননি। তিনি শুধু আল্লাহর কাছেই তাঁর আকুতি ব্যক্ত করেছেন। এটি মুমিন মুসলমানের জন্য অনেক বড় শিক্ষা।
পরে তিনি বলেছিলেন- وَ اَعۡلَمُ مِنَ اللّٰهِ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ আর আমি আল্লাহর কাছ থেকে তা জানি যা তোমরা জান না।
তাফসিরে এ আয়াতাংশের চমৎকার ব্যাখ্যা ওঠে এসেছে, ;ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ছেলেদের কথা শুনে বললেন-
আমি আমার ফরিয়াদ ও দুঃখ-কষ্টের বর্ণনা তোমাদের অথবা অন্য কারো কাছে করি না বরং আল্লাহর কাছে করি। কাজেই আমাকে আমার অবস্থায় থাকতে দাও। সাথে সাথে এ কথাও প্রকাশ করলেন যে আমার স্মরণ করা বৃথা যাবে না। আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন কিছু জানি যা তোমরা জান না। অজানা বিষয়গুলো হতে পারে-
১. আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে, তিনি আমাকে সবার সঙ্গে মিলিত করবেন।
২. আমি জানি যে, আল্লাহ তাআলা কায়মনো বাক্যে দোয়াকারীর দোয়া ফেরৎ দেন না।
৩. আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে জানি যে, ইউসুফ জীবিত। অথবা
৪. আমি জানি যে, ইউসুফের স্বপ্ন সত্য হবে। অথবা
৫. আমি মুসিবতে ধৈর্য ধারণ করার কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন কিছু আশা করি, যা তোমরা কর না। (ফতহুল কাদির)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, গভীর দুঃখ-বেদনায় হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের অনুসরণে আল্লাহর কাছেই নিজেদের ব্যাথা-বেদনা ও কষ্টের কথা তুলে ধরা। কেননা আল্লাহ তাআলাই উত্তম প্রশান্তি ও পুরস্কারদাতা।