কোরআনের সতর্কতা ও নির্দেশ হচ্ছে, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। যদি আত্মীয়তার সুসম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় তবে তা মানুষকে কবিরাহ গুনাহের দিকে নিয়ে যায়। ধীরে ধীরে ছিন্ন হয়ে যায় এ জান্নাতি সুসম্পর্ক। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আত্মীয়তার এ সম্পর্ক নিয়ে মানুষ খুবই উদাসীন। সম্পর্ক নষ্ট করাকে কোনো ব্যাপারই মনে করছে না। অথচ আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে এমন-
وَاتَّقُواْ اللّهَ الَّذِي تَسَاءلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর এবং আত্নীয়তার সম্পর্কের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। (সুরা নিসা : আয়াত ০১)
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা মারাত্মক গুনাহ। যারা সম্পর্ক নষ্ট করে স্বয়ং আল্লাহ তাদের অভিশাপ দেন। দুনিয়া তাদের ওপর নেমে আসে কষ্ট, দুর্ভোগ ও যন্ত্রণা। আল্লাহ বলেন-
فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِن تَوَلَّيْتُمْ أَن تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ - أُوْلَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ ক্ষমতা পেলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে কলহ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ দেন। (এমনকি) এরপর তাদের বধির ও দৃষ্টি শক্তিহীন করে দেন। (সুরা মুহাম্মাদ : আয়াত ২২-২৩)
অথচ আত্মীয়তার বন্ধন মজবুত করলে গড়ে উঠবে জান্নাতি সুসম্পর্ক। এমন দিকনির্দেশনাই এসেছে কোরআনে। আল্লাহ তাআলা তার ইবাদত করার কথা বলছেন। শিরক থেকে বিরত থাকার কথা বলেছেন। আর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করার নির্দেশও দিয়েছেন এ আয়াতে-
وَاعْبُدُواْ اللّهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالاً فَخُورًا আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করো না এবং সদয় হও-
১. বাবা-মার সঙ্গে,
২. আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে,
৩. ইয়াতিমের সঙ্গে,
৪. মিসকিসের সঙ্গে,
৫. প্রতিবেশির সঙ্গে,
৬. আর অনাত্মীয় অসহায় মুসাফির,
৭. নিজের সঙ্গী -সহচর এবং
৮. পথচারীদের সঙ্গে।
৯. আর তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে; তাদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা দাম্ভিক-অহংকারীকে ভালোবাসেন না। (সুরা নিসা : আয়াত ৩৬)
এ আয়াতেই সুনির্দিষ্টভাবে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আবার অন্যভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, যাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে, তারা (বাবা-মা, প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন) সবাই এমনিতেই আপনজন। হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। (বুখারি)
কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশ হচ্ছে, আত্মীয়তার সুসম্পর্ক নষ্ট নয় বরং সব আপনজন, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করাই কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশ। সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে দুনিয়াতে জান্নাতি সম্পর্ক গড়ে তোলা।
মনে রাখতে হবে আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করার কঠোর পরিণতির কথাও এসেছে হাদিসের একাধিক বর্ণনায়। তাহলো-
১. হজরত যুবাইর ইবনে মুতয়িম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।(বুখারি ও মুসলিম)
২. পরকালে আল্লাহর আদালতে আত্মীয়তার বন্ধন অভিযোগ পেশ করবে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহ বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,আত্মীয়তা আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে বলল- আমাকে বিচ্ছিন্ন করা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনার সময় এটা।
আল্লাহ বলেন- হ্যাঁ, তবে তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তোমার সঙ্গে যারা সম্পর্ক বজায় রাখবে আমি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখব এবং যারা তোমাকে ছিন্ন করবে আমি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব? এ কথা শুনে আত্মীয়তা বলল- অবশ্যই। তখন আল্লাহ বললেন, তোমার জন্য এরূপই করা হবে। (বুখারি ও মুসলিম)
মুমিন মুসলমানের করণীয়, যেহেতু আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী ব্যক্তিদের সঙ্গেই পরকালে আল্লাহ তাআলা সম্পর্ক রাখবেন। আর যারা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা রাখবে না; তাদের সঙ্গে মহান আল্লাহ সম্পর্ক রাখবেন না। তাই পরস্পরের সঙ্গে আত্মীয়তার সুসম্পর্ক বজায় রাখা মানুষের ঈমানি দায়িত্ব।
দুনিয়াতেই আত্মীয়তা-স্বজনের সঙ্গে তৈরি হোক জান্নাতি সুসম্পর্ক। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আত্মীয়তার এ সুসম্পর্ক বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।