যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

মুসলমানদের কল্যাণ যে দুইটি আমলের ওপর নির্ভরশীল

আল্লাহর ভয় ও আল্লাহর রুজ্জুকে আঁকড়ে ধরা এবং দাওয়াত ও তাবলিগের মাধ্যমে মানুষকে দ্বীনের সঠিক পথের দিকে আহ্বান করা। আর এ দুটি আমলের মাধ্যমেই মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ নির্ভর করে। আল্লাহ তাআলা আগের আয়াতে তাকে ভয় ও তার রুজ্জুকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এ দুটি আয়াতে তাঁর দিকে আহ্বান করা এবং নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যার বাস্তবায়নেই মুমিন মুসরমানের কল্যাণ সুনিশ্চিত। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَلۡتَکُنۡ مِّنۡکُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ - وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ تَفَرَّقُوۡا وَ اخۡتَلَفُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ الۡبَیِّنٰتُ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা (লোককে) কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর এ সব লোকই হবে সফলকাম। তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও (বিভিন্ন দলে) বিভক্ত হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৪-১০৫)

মুমিন মুসলমানের দুটি আমলের প্রথমটি হলো- আল্লাহর ভয় ও আল্লাহর রুজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার মাধ্যমে আত্মসংশোধন। আর দ্বিতীয়টি হলো- প্রচার বা তাবলিগের মাধ্যমে অন্যকে সংশোধন করা। তাই আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে ঘোষণা করেন-

کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ تَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ ؕ وَ لَوۡ اٰمَنَ اَهۡلُ الۡکِتٰبِ لَکَانَ خَیۡرًا لَّهُمۡ ؕ مِنۡهُمُ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَ اَکۡثَرُهُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ তোমরা সর্বোত্তম সম্প্রদায়, মানুষের কল্যাণের জন্য যাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে। আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনতো তবে অবশ্যই তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের কিছু সংখ্যক ঈমানদার। তাদের অধিকাংশই ফাসিক। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১১০)

ইসলামে যেসব সৎকর্ম ও পূণ্যের নির্দেশ দিয়েছে এবং প্রত্যেক নবি আপন আপন যুগে যে সব সৎকর্মের প্রচলন করেছেন, তা সবই আয়াতের উল্লেখিত মারুফ তথা সৎকর্মের অন্তর্ভুক্ত। মারুফ শব্দের আভিধানিক অর্থ পরিচিত। এসব ভালো কাজ হিসেবে পরিচিত। তাই এগুলোকে মারুফ বলা হয়।

এমনিভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব মন্দ কাজকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন বলে খ্যাত, তা সবই আয়াতে উল্লেখিত মুনকার-এর অন্তর্ভুক্ত।

এ আয়াতে ওয়াজিবাত জরুরী করণীয় কাজ এবং মাআসি তথা গুনাহর কাজের পরিবর্তে মারুফ ও মুনকার বলার রহস্য সম্ভবত এই যে,নিষেধ ও বাধা দেওয়ার নির্দেশটি শুধু সবার কাছে পরিচিত ও সর্বসম্মত মাসআলা-মাসায়েলের ব্যাপারেই প্রযোজ্য হবে। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোনো খারাপ কাজ দেখবে সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিহত করবে। তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে মুখ দ্বারা প্রতিহত করবে।আর যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে অন্তর দ্বারা ঘৃণা করবে। (অর্থাৎ ঘৃণায় চুপ না থেকে নিরবে নিরবে তা প্রতিহত করতে কাজ করবে) এটাই ঈমানের সবচেয়ে দুর্বল স্তর।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, এর পরে সরিষা পরিমাণ ঈমানও বাকী থাকে না। (মুসলিম, আবু দাউদ)

হাদিসের অন্য বর্ণনায় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যার হাতে আমার জীবন তার শপথ করে বলছি, অবশ্যই তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। নতুবা অচিরেই আল্লাহ তোমাদের উপর তার পক্ষ থেকে শাস্তি নাজিল করবেন। তারপর তোমরা অবশ্যই তার কাছে দোয়া করবে, কিন্তু তোমাদের দোয়া কবুল করা হবে না। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)

অনুরূপভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক লোক জিজ্ঞাসা করলেন- হে আল্লাহর রাসুল!কোন লোক সবচেয়ে বেশি ভালো তিনি বললেন, সবচেয়ে ভালো লোক হলো- যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে সৎকাজে আদেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে আর আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখে। (মুসনাদে আহমাদ)

সুতরাং কোরআনের আয়াতের নির্দেশ মোতাবেক হাদিসের এ দিকনির্দেশনা থেকেও প্রমাণিত যে, মুসলমানদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে- আল্লাহর ভয়, দাওয়াত ও তাবলিগ তথা সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ।