কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

যেসব দান সবচেয়ে উত্তম

কোরআন-সুন্নায় আল্লাহর রাস্তায় ধন-সম্পদ ব্যয় করার বহু নির্দেশ এসেছে। দানের প্রতি ঈমানদারকে আল্লাহ তাআলা এভাবে নির্দেশ দিয়েছেন-তোমরা যারা ঈমান এনেছো; তারা তার রাস্তায় ধন-সম্পদ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাক। কারণ আল্লাহ তাআলার রাস্তায় ব্যয় করার সওয়াব অনেক বেশি। হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত খুরাইম ইবনু ফাতিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার রাস্তায় কিছু ব্যয় করে (এর বিনিময়ে) তার জন্য সাতশত গুণ সওয়াব লেখা হয়। (তিরমিজি, মিশকাত, তারগিব) আল্লাহর রাস্তায় সেবাদানের সওয়াবও অনেক বেশি। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে। এ সেবাদানের মর্মার্থ হলো- মানুষের সেবাদানের কাজে নিয়োজিত থাকা। তাহলো- হজরত আদি ইবনু হাতিম তাঈ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করেন, কোন ধরনের দান-খয়রাত বেশি উত্তম? নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ;আল্লাহ তাআলার রাস্তায় সেবার উদ্দেশ্যে গোলাম দান করা; অথবা ছায়ার ব্যবস্থা করার জন্য তাবু দান করা কিংবা আল্লাহর রাস্তায় জওয়ান উষ্ট্রী দান করা।(তিরমিজি, তালিকুর রাগিব) হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, উত্তম সাদকা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার রাস্তায় ছায়া সৃষ্টির জন্যে তাবু দান করা; আল্লাহ তাআলার রাস্তায় সেবার উদ্দেশ্যে গোলাম দান করা অথবা আল্লাহ তাআলার রাস্তায় জাওয়ান উষ্ট্রী দান করা। হাদিস দুটিতে উল্লেখিত দানের বিষয়গুলো সাধারণভাবে সব মানুষের উপকারের সঙ্গে জড়িত। তাই যে কাজ মানুষের বেশি উপকারে। সাধারণ মানুষ বেশি উপকৃত হয়; সেসব কাজে দান করাই সবচেয়ে বেশি সওয়াবের কাজ। দানের ফজিলত বান্দা যদিআল্লাহর পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করে তবে সেই সম্পদে আল্লাহ তাআলা সীমাহীন বরকত দান করবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন এভাবে- مَثَلُ الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَهُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ کَمَثَلِ حَبَّۃٍ اَنۡۢبَتَتۡ سَبۡعَ سَنَابِلَ فِیۡ کُلِّ سُنۡۢبُلَۃٍ مِّائَۃُ حَبَّۃٍ وَ اللّٰهُ یُضٰعِفُ لِمَنۡ یَّشَآءُ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ9;যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মতো; যা উৎপন্ন করলো সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারা : আয়াত ২৬১) হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতের দানের ফজিলতই ঘোষণা করেছেন যে, দানের রয়েছে ৭শ গুণ বেশি সাওয়াব। অন্য হাদিসে এসেছে- হজরত আবু মাসউদ আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি লাগাম পরানো একটি উট নিয়ে (নবিজীর দরবারে) উপস্থিত হয়ে বললেন- ইহা আল্লাহর রাস্তায় দান করলাম। তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কেয়ামতের দিন তোমার জন্য এর পরিবর্তে সাতশত উট হবে। যার প্রতিটির লাগাম পরানো থাকবে। (মুসলিম) সুতরাং আল্লাহর পথে ভারসাম্যপূর্ণ ব্যয় করতে হবে। এ ব্যয়ের ধরণ সম্পর্কেও কোরআনুল কারিমে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন- یَسۡـَٔلُوۡنَکَ مَا ذَا یُنۡفِقُوۡنَ قُلِ الۡعَفۡوَؕ আর তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে, তারা কী ব্যয় করবে? (আপনি) বলুন, যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২১৯) এ আয়াতে নিজের পরিবারের জন্য খরচ করার পর যা কিছু অবশিষ্ট থাকে, তা দান করতে বলা হয়েছে। এমনভাবে দান করা যাবে না যে নিজের পরিবারকে রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সেসব বান্দাদের সুনাম করেছেন, যারা দান-সদকা করার ক্ষেত্রেও ভারসাম্য রক্ষা করে। আল্লাহ তাআলা বলেন- وَ الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَنۡفَقُوۡا لَمۡ یُسۡرِفُوۡا وَ لَمۡ یَقۡتُرُوۡا وَ کَانَ بَیۡنَ ذٰلِکَ قَوَامًا তারা যখন ব্যয় করে তখন অযথা ব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না বরং উভয় প্রান্তিকের মাঝামাঝি তাদের ব্যয় ভারসাম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। (সুরা ফোরকান : আয়াত ৬৭) সুতরাং খরচ করার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। এত বেপরোয়া খরচ করা যাবে না, পরে নিজেই মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। আবার এত কৃপণতাও করা যাবে না, যার জন্য সব মহলে নিন্দিত হতে হয়। এ ব্যাপারেও রয়েছে কোরআনের উপদেশ- ;আর তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ করে (গুটিয়ে) রেখো না এবং তা পুরোপুরি প্রসারিত করো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়বে। (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ২৯)