যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

শয়তানের ক্ষতি ও তা থেকে বাঁচতে কুরআনের দিকনির্দেশনা

শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা এটি। আর মানুষকে কেয়ামত পর্যন্ত সঠিক পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার এবং ভুল পথে পরিচালিত করার ক্ষমতাও আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছে শয়তান। সে কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে শয়তানের ক্ষতির দিক ও তা থেকে বেঁচে থাকার উপায়গুলো সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। আসুন জেনে নিই- সেগুলো কী?

শয়তান পরকালের বিনিময় দুনিয়াকেই গ্রহণ করেছে। সৃষ্টির সময় থেকে মানবজাতির সঙ্গে শয়তানের শত্রুতার সূচনা। মহান আল্লাহর সামনে মানবজাতিকে সত্যচ্যুত করার অঙ্গীকার করে শয়তান। আল্লাহ তাআলা বলেন-
لَّعَنَهُ اللّهُ وَقَالَ لَأَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيبًا مَّفْرُوضًا - وَلأُضِلَّنَّهُمْ وَلأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الأَنْعَامِ وَلآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللّهِ وَمَن يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّن دُونِ اللّهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِينًا ;যার প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। শয়তান বললঃ আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করব। তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়। (সুরা নিসা : আয়াত ১১৮-১১৯)

মানুষের মুক্তিতে আল্লাহর সতর্কতা আল্লাহ তাআলা মানুষকে শয়তানের প্ররোচনা ও ক্ষতি থেকে বাঁচাতে এভাবে সতর্কতামূলক উপদেশ দিয়েছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَن يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَا مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَن يَشَاء وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন। (সুরা নুর : আয়াত ২১)

 

শয়তানের অনুসরণের উদ্দেশ্য কী? কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। কুরআন-সুন্নাহর বর্ণনায় পদাঙ্ক অনুসরণের একাধিক ব্যাখ্যা এসেছে-
আল্লামা ইবনে কাসির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ দ্বারা উদ্দেশ্য তার পথ, কর্মপদ্ধতি আর সে যে কাজের নির্দেশ দেয়; সে অনুযায়ী কাজ করা। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতে, পদাঙ্ক দ্বারা শয়তানের কাজ উদ্দেশ্য।
হজরত কাতাদাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, প্রতিটি পাপের কাজই শয়তানের পদাঙ্কের অন্তর্ভুক্ত (তাফসিরে ইবনে কাসির)

 

সমকালীন বিশ্বের অন্যতম ইসলামিক স্কলার শায়খ ইবনে উসাইমিন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন এমন সব কাজই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ;-এর অন্তর্ভুক্ত; চাই তা-

১. অহংকার;
২. মিথ্যা বলা;
৩. ঠাট্টা-বিদ্রুপ ইত্যাদি যা-ই হোক না কেন।
কেননা শয়তান এসব পাপের নির্দেশ দেয়, তার প্রচার করে এবং তার দিকে আহ্বান জানায়। (তাফসিরুল ফাতিহা ওয়াল বাকারা)

 

শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা কুরআনুল কারিমের ৪ স্থানে আল্লাহ তাআলা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। এসব আয়াতে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তাহলো-
>১. وَمِنَ الأَنْعَامِ حَمُولَةً وَفَرْشًا كُلُواْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللّهُ وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ তিনি সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে বোঝা বহনকারীকে এবং খর্বাকৃতিকে। আল্লাহ তোমাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন, তা থেকে খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা আনআম : আয়াত ১৪২)

২. يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُواْ مِمَّا فِي الأَرْضِ حَلاَلاً طَيِّباً وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ হে মানবমণ্ডলী! পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্ রী খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৬৮)

>৩. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ ادْخُلُواْ فِي السِّلْمِ كَآفَّةً وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিতরূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা বাকারা : আয়াত ২০৮)

৪.
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَن يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَا مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَن يَشَاء وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ককিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন। (সুরা নুর : আয়াত ২১) অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হতে পারতে না।