অজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর
No icon

মসজিদে উঁচু স্বরে কথা বলার বিধান কী?

মসজিদ আল্লাহর ঘর। ইবাদতের জন্য নির্ধারিত স্থান। কথা যত গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেন, মসজিদে নামাজের সময় উচ্চ আওয়াজে কথাবার্তা বলা যাবে না। কুরআন সুন্নাহর নির্দেশনাও এমনই। মসজিদে উচ্চস্বরে কথা প্রসঙ্গে রয়েছে কুরআন-সুন্নাহর দিক-নির্দেশনা।মসজিদে ইমামের সালাম ফেরানোর পর অনেকেই ওঠে দাঁড়িয়ে যান। অনেকে বাইরে বের হওয়ার জন্য চেষ্টা করেন। আবার পেছনে অনেকে ছুটে যাওয়া নামাজ সম্পন্ন করতে দাঁড়িয়ে যান। এ সময় উচ্চস্বরে কথা বললে, নামাজরত ব্যক্তিদের সুরা-ক্বেরাত পড়তে অসুবিধা হয়। নামাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যা মারাত্মক অন্যায় কাজ। এ প্রসঙ্গে হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে-
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার দেখলেন- দুই জন লোক (মদিনার) মসজিদে নববিতে উঁচু আওয়াজে কথা বলছেন। তিনি বললেন- তোমরা কোন্ জায়গার লোক? তারা বললো- আমরা তায়েফের অধিবাসী।
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন- তোমরা যদি মদিনার অধিবাসী হতে, তাহলে আমি বেত দিয়ে তোমাদের আঘাত করতাম! কেন তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মসজিদে উঁচু স্বরে কথা বলছ? (বুখারি) 

মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বললে, অন্য যারা ইবাদত-বন্দেগি করে কিংবা নামাজ পড়ে তাদের ইবাদত-বন্দেগি ও নামাজে ব্যঘাত সৃষ্টি হয়। নামাজরত ব্যক্তিরা উচ্চ আওয়াজ শোনার কারণে ঠিকভাবে সুরা-কেরাত পড়তে পারে না। নামাজে বিঘ্ন ঘটে। এটি মারাত্মক অন্যায়। তাই এ কারণেই মসজিদে উচ্চ আওয়াজে কথাবার্তা বলা নিষেধ।

হজরত আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর মধ্যকার মতবিরোধে তাদের কণ্ঠস্বর উঁচু হয়েগিয়েছিল। যা ঘটেছিল বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে মসজিদে নববিতে। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাআলা কুরআনের আয়াত নাজিল করলেন এভাবে-
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবির কণ্ঠস্বরের ওপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না। এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বলো, তাঁর সাথে তেমন উচ্চস্বরে কথা বলো না। কারণ এতে তোমাদের কর্মফল বিনষ্ট হয়ে যাবে অথচ তোমরা বুঝতেই পারবে না। (সুরা হুজরাত : আয়াত ২)

এ আয়াত নাজিলের পর মসজিদে নববিতে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রয়োজন হলে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে এত আস্তে কথা বলতেন যে, দ্বিতীয় বার জিজ্ঞাসা না করা হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা শুনতে পেতেন না! (বুখারি)

দুনিয়ার সব মসজিদ যদিও মসজিদে নববি বা নবির মসজিদ নয়, তথাপিও মসজিদের আদব রক্ষায় উচ্চ আওয়াজে কথা না বলাই উত্তম। যাতে কারো ইবাদতের ক্ষতি না হয়।>

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী যখন মানুষ মসজিদে নামাজ পড়ে তখন উচ্চ স্বরে কথা না বলা। নামাজের সময় মসজিদে কথা বলা নিষিদ্ধ হওয়াই জরুরি। ফলে নামাজরত ব্যক্তি নির্বিঘ্নে নিজেদের ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত করতে পারে। শব্দহীন পরিবেশে একান্ত মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মসজিদে উচ্চ স্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।