কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

মৃত্যু হলো আখিরাত এর প্রবেশ দ্বার

প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, আর তোমরা কিয়ামতের দিন তোমাদের প্রতিদান পাবে! (সূরা: আল-ইমরান-১৮৫) যে জন্মেছে সে মরবেই! যার সূচনা হয়েছে তার পরিসমাপ্তি ঘটবেই। এটা আল্লাহ তায়ালার শাশ্বত চিরন্তন বিধান। এ অমোক বিধানের কোনো পরিবর্তন পরিবর্ধন নেই। পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে চির ও অনড় সত্য হলো মৃত্যু, মৃত্যু অবধারিত! এটা নিয়ে কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই। বেচে থাকাটি অস্বাভাবিক কিন্তু মৃত্যুটা খুবই স্বাভাবিক।! ইসলামী পরিভাষায় মৃত্যু হচ্ছে জাগতিক জীবনের সমাপ্তি এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবন তথা আখিরাত এর প্রবেশ দ্বার। মৃত্যু হচ্ছে জাগতিক দেহ হতে আত্মার পৃথকীকরণ এবং একই সাথে এ আত্মার জাগতিক দুনিয়া হতে আখিরাত এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করা। যাক জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ। ১। আল্লাহ কেন মৃত্যু দান করলেন? মানুষ সৃষ্টির পেছনে যেমন আল্লাহ তা আলার একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। তেমনি রয়েছে জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টির পেছনে একটি মহৎ উদ্দেশ্য! আর তা হলো কারা এ পৃথিবীতে এসে ভালো কাজ করে আর কারা অসৎ ও খারাপ কাজ করে। যেমন আল্লাহর বাণী- তিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্যে কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম। তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। (সূরা মূলক-২)। অন্যত্র আল্লাহ পাক বলেন- অত:পর তাকে তার অসৎ কর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। সেই সফলকাম হবে যে নিজেকে পবিত্র করবে এবং সেই ব্যর্থ হবে যে নিজেকে কলুষাচ্ছন্ন করবে। (সূরা শামস-৮-১০)

একবার হযরত মূসা (আ.) আল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্ আপনি মানুষ সৃষ্টি করে তাদেরকে আবার কেনো মেরে ফেলেন? আল্লাহ্ উত্তর দিলেন, যাও জমিনে ক্ষেত চাষ করো। হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষেতে গম চাষ শুরু করলেন। কিছু দিন পর ক্ষেতের ফসল পেকে ওঠলো। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম যখন দেখলেন, ক্ষেত পেকে গেছে তখন তিনি ফসল কাটতে শুরু করলেন। এক সময় কাটা শেষ হলো। সেখান থেকে তিনি দানা ও ভুষি পৃথক করলেন। আল্লাহ তখন জিজ্ঞেস করলেন হে আমার প্রিয় মুসা, তুমি গম গাছ কেটে দানা ও ভুষি পৃথক করলে কেনো? হযরত মুসা (আ.) উত্তরে বললেন হে আমার মহান প্রভু, ফসল পেকে গিয়েছিলো। এ কারণে কেটে ফেলেছি। আল্লাহ তখন বললেন হে মুসা আমিও তো এটাই করি। যখন মানবজীবনের ফসলের ক্ষেত পেকে ওঠে আমি তা কেটে ফেলি। সেখান থেকে যারা দানার মতো লোক হয় তাদেরকে জান্নাতে পাঠাই আর যারা ভুষির মতো লোক তাদেরকে জাহান্নামে পাঠাই।

২। মৃত্যু স্পর্শ করবেই: মানুষ বা যে কোন প্রাণীর মৃত্যুর সময় হলে তাকে অবশ্যই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হবেই। এর থেকে বাচার বা পালাবার কোন পথ নেই। সে যদি চাঁদে, মঙ্গলগ্রহে এমনকি সাত আসমানের উপরেও ওঠে ও সপ্ত জমীনের নীচে থাকে অথবা শিশে ঢালা প্রাচীরের মধ্যেও লুকিয়ে থাকে তাহলেও তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। যেমন আল্লার বাণী- তোমরা যেখানেই থাক না কেনো মৃত্যু তোমাদের লাগাম পাবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও। (সূরা নিসা-৭৮)। অন্যত্র আল্লাহ পাক বলেন- জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। (সুরা. আম্বিয়া-৩৫)। এখানে বিশ্বখ্যাত নিত্য শিল্পি, অভিনেতা, মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যু কাহিনী দিয়ে একটা উদাহরন দেয়া যেতে পারে। তিনি ১৫০ বছর বাচার স্বপ্ন দেখেলিলেন। তিনি ছিলেন বিশ্ব বরেণ্য তারকা। ১৯৮০ খ্রি: তার যশ খ্যাতি ও সুনাম ছিল আকাশ চুম্বি। অমর হতে চেয়েছিলেন তাই তিনি বাড়িতে ১২ জন ডা. নিযুক্ত করেছিলেন। যারা মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত প্রতিদিন পরীক্ষা করত। কারো সাথে হাত মিলানোর সময় হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান করতেন। এবং মুখে মাক্স লাগাতেন। খাবার খাওয়ার আগে ল্যাবরোটরিতে পরীক্ষা করে খাওয়ানো হতো। প্রতিদিন তাকে ব্যায়াম করানোর জন্য ১৫ জন লোক ছিল। সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু পাওয়ার জন্য অক্সিজেনযুক্ত বেডে ঘুমাতেন তিনি। নিজের কালো তক পরিবর্তন করতে প্লাষ্টিক সার্জারী করে নিজেকে ফর্সা করেন। নিজেকে রক্ষার জন্য অর্গান ডোনার রেডি করে রেখেছিলেন। প্রয়োজনে যাতে কিডনী ফুসফুসী চোখ ইত্যাদি দিতে পারেন মাইকেলকে। জীবনের শেষ ২৫ বছর ডা. এর পরামর্শ ছাড়া এক পাঁও চলাতেন না। কিন্তু তার এ আশা পূরণ হলোনা। ২০০৯ সালে ২৫ জুন মাত্র ৫০ বছর বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আজো তার মৃত্যুর কারণ অজানাই রয়ে গেল। 

৩। বিলম্ব করার অবকাশ নেই: মৃত্যুর সময় যখন ঘনিয়ে আসে তখন একটি মুহুর্তও দেরী করা হয় না, নির্ধারিত সময়ে মৃত্যুর অমীয় সুধা পান করতে হবে। যেমন আল্লার বাণী- আর প্রত্যেক জাতির রয়েছে একটি নির্দিষ্ট সময় অত:পর যখন তাদের সময় আসবে তখন তারা এক মুহুর্ত বিলম্ব করতে পারবে না এবং এগিয়েও আনতে পারবে না। (সুরা আল-আরাফ, আয়াত-৩৪)। অন্য সূরায় আল্লাহ তা আলা ইরশাদ করেন, আর তারা বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, এ ওয়াদা কখন বাস্তবায়িত হবে? বল, তোমাদের জন্য রয়েছে একটি দিনের ওয়াদা যা থেকে তোমরা মুহূর্তকাল বিলম্বিত করতে পারবে না আর তরান্বিতও করতে পারবে না। (সূরা সাবা, আয়াত: ২৯-৩০)। আল্লাহ তা আলা আরও বলেন, আর কোন বয়স্ক ব্যক্তির বয়স বাড়ানো হয় কিংবা কমানো হয় না। কিন্তু তাতো রয়েছে কিতাবে। নিশ্চয় তা আল্লাহর জন্য সহজ। (সূরা আল-ফাতির আয়াত-১১)। এ আয়াতগুলো থেকে বুঝা যায় প্রতিটি মানুষের মৃত্যুক্ষণ সুনির্ধারিত। তিনি যখন যেভাবেই মারা যান না কেন আল্লাহর জ্ঞানে তা সুনির্দিষ্ট। অতএব, সব মৃত্যুই সঠিক সময়ে হয়। কোনো মৃত্যুই অকালে হয় না। ৪। মৃত্যুর স্থান জানা নেই: মৃত্যু কাউকে জানান দিয়ে আসে না যে, কোন জমিনে বা কোথায় তার মৃত্যু হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন এবং কোন প্রানী এটাও জানে না যে, কোন ভূমিতে বা কোথায় তার মৃত্যু হবে। (সূরা লুকমান, আয়াত ৩৪)।

৫। মৃত্যুর স্বরণ অন্তরকে সজাগ করে: মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী! তাই আমাদের কলব তথা অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা প্রয়োজন। মৃত্যুকে বেশি বেশি স্বরণ করা দরকার। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, (দুনিয়ার) স্বাদ গন্ধকে বিলুপ্তকারী মৃত্যুকে তোমরা বেশি বেশি স্বরণ করো। (তিরমিজি, হাদিস ২৩০৭) অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান হলো ওই ব্যক্তি যিনি মৃত্যুকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করেন, তিনি মৃত্যু আসার পূর্বে তার জন্য অন্যদের চেয়ে বেশি প্রস্তুতি নিয়েছেন। (মিশকাত শরীফ, কিতাবুল জানায়েয ১৪০)। হযরত আয়েশা (রা.) একবার নবী করীম সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী, কোনো সাধারন ব্যক্তি কি কিয়ামত দিবসে শহীদদের সাথে পুনরুত্থিত হতে পারবেন? নবীজি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ ওই ব্যক্তি এ সৌভাগ্য লাভ করবে, যে প্রত্যহ বিশ বার নিজের মৃত্যুর কথা স্মরণ করবে। সুবহানাআল্লাহ। যে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি পুল বা ব্রিজের উপর ঘর তৈরি করেনা। তদ্রুপ আল্লাহওয়ালাগণও দুনিয়ার সাথে তাদের হৃদয়কে জুড়ে রাখেন না। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) বলতেন- হে মানুষ, তুমি দুনিয়ার সামানের সাথে নিজেকে লাগিয়ে রাখছো অথচ দুনিয়া তোমাকে নিজের থেকে বের করতে ব্যস্ত।