যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

যে সকল হারামকে মানুষ তুচ্ছ মনে করে থাকে

আল্লাহ তা‘আলা সূদখোর ব্যতীত আর কারো বিরুদ্ধে স্বয়ং যুদ্ধের ঘোষণা দেননি। তিনি বলেন,

 
“হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর তাকাওয়া অবলম্বন কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর যদি তোমরা ঈমানদার হও। আর যদি তোমরা তা না কর, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শোন” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৮-২৭৯]

আল্লাহর নিকট সূদ খাওয়া যে কত মারাত্মক অপরাধ তা অনুধাবনের জন্য উক্ত আয়াতদ্বয়ই যথেষ্ট। সূদবৃত্তি দারিদ্র্য, মন্দা ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, বেকারত্ব বৃদ্ধি, বহু কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়াত্ব ইত্যাদির ন্যায় কত যে জঘন্য ক্ষতি ও ধ্বংসের দিকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঠেলে দিচ্ছে তা পর্যবেক্ষক মাত্রই অনুধাবন করতে সক্ষম। প্রতিদিনের ঘাম ঝরানো শ্রমের বিনিময়ে যা অর্জিত হয়, সূদের অতলগহ্বর পূরণেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়। সূদের ফলে সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণির উদ্ভব হয়। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে ব্যাপক সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে পড়ে। সম্ভবতঃ এসব কারণেই আল্লাহ তা‘আলা সূদীকারবারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।

সূদী কারবারে মূল দু’পক্ষ, মধ্যস্থতাকারী, সহযোগিতাকারী ইত্যাকার যারাই এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তারা সবাই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানীতে অভিশপ্ত। জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
 
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূদ গ্রহীতা, সূদ দাতা, সূদের লেখক এবং তার সাক্ষীদ্বয়কে অভিসম্পাত করেছেন। তিনি বলেছেন, তারা সবাই সমান অপরাধী’’
এ কারণেই সূদ লিপিবদ্ধ করা, এর আদান-প্রদানে সহায়তা করা,  সূদী দ্রব্য গচ্ছিত রাখা ও এর পাহারাদারীর কাজে নিযুক্ত হওয়া জায়েয নেই। মোটকথা, সূদের সূদের কাজে অংশগ্রহণ ও যে কোনোভাবে এর সাহায্য-সহযোগিতা করা হারাম।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মহাঅপরাধের কদর্যতা ফুটিয়ে তুলতে বড়ই আগ্রহী ছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
 
“সূদের ৭৩টি দ্বার বা স্তর রয়েছে। তন্মধ্যে সহজতর স্তর হলো, নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচারের সমতুল্য। আর সবচেয়ে কঠিনতম স্তর হলো, মুসলিম ব্যক্তির মানহানি”
আব্দুল্লাহ ইবন হানযালা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
 
“জেনেশুনে কোনো লোকের সূদের এক টাকা ভক্ষণ করা ৩৬ বার ব্যভিচার করা থেকেও কঠিন”
সূদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সর্বদা হারাম। সবাইকে তা পরিহার করতে হবে। কত ধনিক-বণিক যে এ সূদের কারণে দেউলিয়া হয়ে গেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সূদের সর্বনিম্ন ক্ষতি হলো, মালের বরকত উঠে যাবে, পরিমাণে তা যতই স্ফীত হউক না কেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
 
“সূদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন তার শেষ পরিণতি হলো নিঃস্বতা”

">সূদের হার কমই হোক আর চড়াই হোক সবই হারাম। যেমন করে শয়তান দুনিয়াতে তার স্পর্শে কাউকে পাগল করে দেয়, তেমনি সূদখোর পাগল হয়ে হাশরের ময়দানে উত্থিত হবে [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৫] যদিও সূদের লেনদেন গুরুতর অন্যায় তবুও মহান রাব্বুল আলামীন দয়াপরবশ হয়ে বান্দাকে তা থেকে তওবার উপায় বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ">“যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা তোমাদের মূলধন ফিরে পাবে। তোমরা না অত্যাচার করবে, আর না অত্যাচারিত হবে” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৯] ">মুমিনের অন্তরে সূদের প্রতি ঘৃণা এবং তার খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে তীব্র অনুভূতি থাকা একান্ত আবশ্যক। এমনকি যারা টাকা-পয়সা ও মূল্যবান সম্পদ চুরি হয়ে যাওয়া কিংবা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ে সূদী ব্যাংকে জমা রাখে, তাদের মধ্যেও নিতান্ত দায়েপড়া ব্যক্তির ন্যায় অনুভূতি থাকতে হবে, যেন তারা মৃত জীব ভক্ষণ কিংবা তার থেকেও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই তারা সব সময় আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং সূদী ব্যাংকের বিকল্প সূদহীন ভালো কোনো উপায় অবলম্বনের চেষ্টা করবে। তাদের আমানতের বিপরীতে সূদী ব্যাংকের নিকট সূদ দাবী করা জায়েয নেই। বরং যে কোনো উপায়ে তার থেকে নিষ্কৃতি লাভের চেষ্টা করবে, তা (ছওয়াবের নিয়তে] দান করবে না। কেননা আল্লাহ পবিত্র। পবিত্র বস্তু ছাড়া তিনি দানের স্বীকৃতি দেন না। নিজের কোনো কাজে সূদের অর্থ ব্যয় করা যাবে না। না পানাহারে, না পরিধেয়ে, না সওয়ারীতে, না বাড়ী-ঘর তৈরীতে, না পুত্র-পরিজন, স্বামী-স্ত্রী, মাতা-পিতার ভরণ-পোষণে, না যাকাত আদায়ে, না ট্যাক্স পরিশোধে, না নিজের ওপর অন্যায়ভাবে আরোপিত অর্থ পরিশোধে। সূদের অর্থ কেবল আল্লাহর শাস্তির ভয়ে দায় মুক্তির জন্য এমনিতেই কাউকে দিয়ে দিতে হবে।