যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

আইসিজেতে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান ইসরাইলের

গাজায় ‘জটিল যুদ্ধ’ স্বীকার করল ইসরাইল । শহীদ ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ২৩ হাজার ৪৬৯ জন গাজা থেকে গ্রপ নেতাদের নির্বাসনে কাতারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হামাসের লেবাননে অ্যাম্বুলেন্স সেন্টারে ইসরাইলি হামলায় দুই চিকিৎসক নিহত। দক্ষিণ আফ্রিকা জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে বিচারকদের বলেছে যে, ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে এবং ইসরাইলকে গাজার বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য জরুরিভাবে আদেশ দিতে আদালতের কাছে অনুরোধ করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা বলেছেন, সর্বশেষ গাজা যুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের কয়েক দশক ধরে নিপীড়নের অংশ। দক্ষিণ আফ্রিকার একজন শীর্ষ আইনজীবী গতকাল জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতকে বলেছেন, গাজায় ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন সেখানকার মানুষকে ‘দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে’ ঠেলে দিয়েছে। 

আদিলা হাসিম বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন যে বিশেষজ্ঞরা এখন ভবিষ্যদ্বাণী করছেন যে, গাজায় অনাহার এবং রোগের কারণে আরো বেশি লোক মারা যেতে পারে’। হাসিম বলেন, জেনোসাইড ‘কখনই আগে থেকে ঘোষণা করা হয়নি’ কিন্তু আইসিজে-এর কাছে ১৩ সপ্তাহের প্রমাণ রয়েছে যেটি ‘আচার আচরণের ধরন যা গণহত্যামূলক কর্মের যুক্তিসঙ্গত দাবিকে ন্যায্যতা দেয়’। আইসিজে সভাপতি জোয়ান ই. ডনোগু বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্তি দিয়েছে যে, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরাইলের পদক্ষেপগুলো ‘চরিত্রে গণহত্যামূলক’ এবং ইসরাইল ‘গণহত্যা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং গণহত্যা করছে’। তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকাও দাবি করে যে, ইসরাইল ‘(জাতিসংঘ) গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে অন্যান্য মৌলিক বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে’। পৃথকভাবে, দক্ষিণ আফ্রিকার হাইকোর্টের আইনজীবী তেম্বেকা এনগকুকাইতোবি বলেছেন, ‘গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের একটি গণহত্যার অভিপ্রায় রয়েছে... যেভাবে এই সামরিক হামলা চালানো হচ্ছে তা থেকে স্পষ্ট। এটা বিশ্বাসের মধ্যে নিহিত যে, শত্রæ শুধু হামাস নয়, গাজার ফিলিস্তিনি জীবনের বুননে মিশে আছে’।

এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ২৯ ডিসেম্বর দায়ের করা মামলার শুনানি শুরু হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ৮৪-পৃষ্ঠার ফাইলিংয়ে ইসরাইলকে ‘চরিত্রে গণহত্যামূলক কাজ এবং বাদ দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে, কারণ তারা প্রয়োজনীয় সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ ... বৃহত্তর ফিলিস্তিনি জাতীয়, জাতিগত এবং জাতিগত গোষ্ঠীর অংশ হিসাবে গাজার ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করার জন্য’। 

এতে বলা হয়েছে, ইসরাইলের গণহত্যামূলক কর্মকাÐের মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের হত্যা, তাদের গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি, বাড়িঘর থেকে ব্যাপক বিতাড়ন এবং বাস্তুচ্যুতি, ফিলিস্তিনিদের জন্ম রোধ করার উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা আরোপ করা এবং পর্যাপ্ত খাবার, পানি, আশ্রয়, স্যানিটেশন এবং চিকিৎসা সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিচারমন্ত্রী রোনাল্ড লামোলা এবং বিশ্বের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনের সিনিয়র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। গতকালের শুনানি কমপক্ষে দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয় এবং আজ ইসরাইলের পক্ষ থেকে যুক্তি উপস্থাপন করা হবে।

এদিকে ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলছে, তাদের সেনারা গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তীব্র ও কঠিন যুদ্ধে নিয়োজিত রয়েছে। আর্মি চিফ অফ স্টাফ হার্জি হালেভি গাজায় সৈন্যদের সম্বোধন করে এক ভিডিওতে বলেছেন, ‘আমরা মাটির ওপরে এবং ভ‚গর্ভে একটি জটিল এলাকায় এমন এক শত্রæর সাথে লড়াই করছি যেটি একটি সংগঠিত পদ্ধতিতে প্রতিরক্ষার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুত ছিল’। ‘আমরা অনেক ফ্রন্টে একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে নিযুক্ত আছি। আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ আছে’, -যোগ করেছেন হালেভি। 

গত সোমবার ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, গাজায় যুদ্ধের সময় তাদের আরো নয়জন সৈন্য নিহত হয়েছে, যাদের নিয়ে স্থল আক্রমণ শুরুর পর থেকে মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ১৮৭-এ পৌঁছেছে।
দক্ষিণ লেবাননের একটি বেসামরিক প্রতিরক্ষা কেন্দ্রে ইসরাইলি হামলায় দুই উদ্ধারকর্মী নিহত হয়েছে এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়েছে। উদ্ধারকারী বাহিনীর মতে, অ্যাম্বুলেন্স সেন্টারটি সশস্ত্র গ্রæপ হিজবুল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত। ইসলামিক হেলথ অথরিটির সিভিল ডিফেন্স অপারেশন রুম বলেছে যে, ‘হানিন শহরের একটি জরুরি কেন্দ্রে সরাসরি ইসরাইলি বোমাবর্ষণ’ দুই পুরুষ ইউনিট সদস্যকে হত্যা করেছে। এ মৃত্যুর ফলে দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি গোলাগুলিতে নিহত বেসামরিক নাগরিকের সংখ্যা বেড়ে ২৫-এ পৌঁছেছে, যার মধ্যে শিশু ও সাংবাদিকও রয়েছে। এছাড়া সেখানে অন্তত ১৪০ হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছে এবং সীমান্তের ইসরাইলের দিকে নয়জন সেনা নিহত হয়েছে।

গাজা থেকে গ্রæপ নেতাদের নির্বাসনে কাতারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হামাসের : হামাস একটি মারাত্মক ইসরাইলি আক্রমণ থামানোর বিনিময়ে গাজা উপত্যকা থেকে গ্রæপের নেতাদের নির্বাসনের জন্য কাতারের প্রস্তাবের খবর অস্বীকার করেছে। ইসরাইলি চ্যানেল ১৩ এর আগে জানিয়েছিল যে, কাতার থেকে ইসরাইলের কাছে একটি নতুন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল বেশ কয়েকটি পর্যায়ে গাজায় বন্দী সমস্ত ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া।

হামাস লেবাননের নেতা ওসামা হামদান গোষ্ঠীর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যারা গাজা উপত্যকায় একটি ব্যাপক যুদ্ধবিরতি না হলে বন্দী বিনিময় উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অবস্থানের প্রতি প্রতিশ্রæতিবদ্ধ, মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে এবং এ দৃষ্টিভঙ্গি যেকোনো উদ্যোগের ভিত্তি তৈরি করে’।

আরব জনমত জরিপে ফিলিস্তিনিদের সাথে প্রায় সর্বসম্মত সংহতি : আরব সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি স্টাডিজ পরিচালিত এক জরিপে ১৬টি আরব দেশের ৮ হাজার মানুষকে গাজা যুদ্ধের বিষয়ে তাদের মতামত নিয়ে জরিপ করা হয়েছে। এতে দেখা যায় যে, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা জুড়ে আরবরা গভীরভাবে সংঘাতের সাথে জড়িত। ৮০ শতাংশ বলেছেন যে, তারা নিয়মিত যুদ্ধের খবরগুলো ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করে এবং ৯৭ শতাংশ বলেছেন যে, তারা এটি থেকে ‘মানসিক চাপ’ অনুভব করেছেন। উত্তরদাতাদের একানব্বই শতাংশ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এবং ৯২ শতাংশ বলেছেন, তাদের দুর্দশা সব আরবের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

অনেক উত্তরদাতা আরো বলেছেন যে, যুদ্ধের সময় ইসরাইলের কঠোর সামরিক সমর্থনের কারণে তারা মার্কিন সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়েছে। ৯৪ শতাংশ মার্কিন নীতির প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন এবং ৭৬ শতাংশ বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কমে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ২৩ হাজার ৪৬৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৫৯ হাজার ৬০৪ জন আহত হয়েছে।

সা¤প্রতিক ২৪-ঘন্টা রিপোর্টিং সময়ের মধ্যে, ইসরাইলি বাহিনী এ অঞ্চলে ১০টি গণহত্যা চালিয়েছে, যার ফলে ১১২ জন মারা গেছে এবং ১৯৪ জন আহত হয়েছে। প্রায় ৭ হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ রয়েছে এবং তাদের মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র : আল-জাজিরা, টিআরটি ওয়ার্ল্ড।