কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

যেকোনো পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে ধৈর্য ধারণ

মহান আল্লাহ ঈমানদারদের সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদাররা, তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যে প্রতিযোগিতা করো এবং সর্বদা আল্লাহর পথে প্রস্তুত থাকো, আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ২০০)

ধৈর্যের শাখা : পবিত্র কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী ধৈর্যের তিনটি শাখা রয়েছে এক. নফসকে হারাম এবং নাজায়েজ বিষয়াদি থেকে বিরত রাখা। দুই. ইবাদত ও আনুগত্যে বাধ্য করা এবং তিন. যেকোনো বিপদ ও সংকটে ধৈর্যধারণ করা।

অর্থাৎ যেসব বিপদাপদ এসে উপস্থিত হয় সেগুলোকে আল্লাহর সিদ্ধান্ত বলে মেনে নেওয়া এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর তরফ থেকে প্রতিদানপ্রাপ্তির আশা করা। অবশ্য কষ্টে পড়ে যদি মুখ থেকে কোনো কাতর শব্দ উচ্চারিত হয়ে যায় কিংবা অন্যের কাছে তা প্রকাশ করা হয়, তবে তা সবরের (ধৈর্যের) পরিপন্থী নয়। (ইবনে কাসির)

ধৈর্যশীলতা অর্জনের উপায় : ধৈর্যশীলতা একটি কল্যাণকর গুণ। এটি অর্জন করতে প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন।

সঙ্গে প্রয়োজন দৃঢ় ঈমান। কারণ কোনো মানুষের মধ্যে দৃঢ়তা না থাকলে, প্রবল ইচ্ছাশক্তি না থাকলে সে ধৈর্যশীল হতে পারবে না। রাসুল (সা.) একবার আনসারদের কিছু লোককে বলেন, আর যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে তিনি (আল্লাহ) তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন।

ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদের দান করা হবে না। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭০)

ধৈর্যশীলতার পুরস্কার : ধৈর্যশীলতা অর্জন করা যত কঠিন, এর পুরস্কারও তত বড়। মানুষের জীবনে প্রতিকূল পরিস্থিতি আসাটা স্বাভাবিক। যারা তখন আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধারণ করবে, আল্লাহ তাদের অগণিত পুরস্কারে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, বলো! হে আমার মুমিন বান্দারা, যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো।

যারা এ দুনিয়ায় ভালো কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। আর আল্লাহর জমিন প্রশস্ত, কেবল ধৈর্যশীলদেরই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই। (সুরা : আজ-জুমার, আয়াত : ১০)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের জান্নাত উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে,যারা তাদের রবের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ধৈর্য ধারণ করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক প্রদান করেছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভালো কাজের মাধ্যমে মন্দকে দূর করে, তাদের জন্যই রয়েছে আখিরাতের শুভ পরিণাম। স্থায়ী জান্নাতসমূহ, যাতে তারা এবং তাদের পিতৃপুরুষগণ, তাদের স্ত্রীগণ ও তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা সৎ ছিল তারা প্রবেশ করবে। আর ফেরেশতারা প্রতিটি দরজা দিয়ে তাদের কাছে প্রবেশ করবে। (আর বলবে) শান্তি তোমাদের ওপর। কারণ তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ, আর আখিরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম। (সুরা : রাদ, আয়াত : ২২-২৪)

দুনিয়াতে মানুষের বিপদাপদ আসা স্বাভাবিক। কিন্তু পরম করুণাময় এর বিনিময়েও মুমিন বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফোটে, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪১)

তাই মুমিনের উচিত যেকোনো পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে ধৈর্য ধারণ করা। আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাওয়া। ইনশাআল্লাহ এর মাধ্যমে মুমিনের দুনিয়া ও আখিরাত কল্যাণকর হবে।