
পর্দা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা শালীনতা, নৈতিকতা ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়ক। কোরআন ও হাদিসে পর্দার গুরুত্ব বারবার তুলে ধরা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা এবং মুমিন নারীদের বলে দিন, তারা যেন নিজেদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এটি তাদের চিনে নেওয়ার জন্য উত্তম, ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : আল-আহজাব, আয়াত : ৫৯)
পর্দার প্রকারভেদ
১. শারীরিক পর্দা : পুরুষদের জন্য নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং নারীদের জন্য সম্পূর্ণ শরীর আবৃত রাখা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের নিজেদের ভূষণ অন্যদের কাছে প্রকাশ না করে, তবে যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় তা ছাড়া। এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের ওপর ফেলে রাখে...’ (সুরা : আন-নুর, আয়াত : ৩১)
২. দৃষ্টির পর্দা : আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং নিজেদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এটি তাদের জন্য অধিক পবিত্র।’ (সুরা আন-নুর, আয়াত ৩০)
৩. আচরণগত পর্দা : নারীদের কোমল কণ্ঠে কথা না বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা (নারীরা) নম্রভাবে কথা বোলো না, যাতে হৃদয়ে ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি কুভাব পোষণ করে। তোমরা সংগত কথাবার্তা বলো।’ (সুরা : আল-আহজাব, আয়াত : ৩২)
পর্দার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
১. পর্দা ব্যক্তিগত চরিত্র গঠনে সহায়ক: লজ্জাশীলতা ঈমানের অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক দ্বিনেরই একটা চরিত্র (বৈশিষ্ট্য) আছে। আর ইসলামের চরিত্র হচ্ছে লজ্জাশীলতা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৮১)
২. পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করে : নারী-পুরুষের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক প্রতিরোধ করে পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী করে। আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল এবং অত্যন্ত মন্দ পথ।’ (সুরা : ইসরা, আয়াত: ৩২)
৩. সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে : পর্দাহীনতা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। মহানবী (সা.) বলেন, পুরুষের ওপর নারীর চেয়ে বড় কোনো ফিতনা আমি রেখে যাইনি।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৯৬)
৪. নারীর মর্যাদা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে : নারীদের সম্মান রক্ষার জন্য পর্দার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘...এটি (পর্দা) তাদের চিনে নেওয়ার জন্য উত্তম, ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না।’ (সুরা : আল-আহজাব, আয়াত : ৫৯)
৫. মানসিক প্রশান্তি আনে : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৃষ্টি সংযত রাখে, আল্লাহ তাকে অন্তরের প্রশান্তি দান করেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৯৬৬২)
পর্দার ইহকালীন ফায়দা
১. বিবাহ সম্পর্ক সংহত করে : পর্দার ফলে অবৈধ সম্পর্ক কমে, যা দাম্পত্য সম্পর্ককে মজবুত করে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ এবং তোমরা তাদের জন্য পোশাকস্বরূপ।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৭)
২. নারীর প্রতি শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করে : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নারীরা হলো মোতিহারের (মূল্যবান রত্ন) মতো, তাদের সুরক্ষিত রাখো।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১১৬৩)
৩. যৌন হয়রানি ও অপরাধ হ্রাস করে : পর্দাহীনতা থেকে নানা অপরাধ সৃষ্টি হয়। আল্লাহ বলেন, ‘যারা চায় যে মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা : আন-নুর, আয়াত : ১৯)
পর্দার পরকালীন ফায়দা
১. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন : পর্দা পালন আল্লাহর নির্দেশ মানার শামিল, যা জান্নাতের পথে নিয়ে যায়।
আল্লাহ বলেন, ‘এসব আল্লাহর (স্থিরীকৃত) সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে এমন উদ্যানসমূহে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হবে। তারা সর্বদা তাতে থাকবে। আর এটা মহাসাফল্য।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৩)
২. কিয়ামতের দিনে বিশেষ মর্যাদা : পর্দাশীল নারীরা জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা পাবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১০৩৭)