
ইসলামে জামাতের সঙ্গে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে ফজর ও এশার নামাজে জামাতের শরিক হওয়া। কারণ এ সময়গুলো কেউ থাকেন পরিশ্রান্ত আর কেউ থাকেন আরামের ঘুমে। কিন্ত ইসলামের চাওয়া কি তা হাদিসের ভাষ্যে দেখুন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ أَثْقَلَ صَلاَةٍ عَلَى الْمُنَافِقِينَ صَلاَةُ الْعِشَاءِ وَصَلاَةُ الْفَجْرِ وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا وَلَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِالصَّلاَةِ فَتُقَامَ ثُمَّ آمُرَ رَجُلاً فَيُصَلِّيَ بِالنَّاسِ ثُمَّ أَنْطَلِقَ مَعِي بِرِجَالٍ مَعَهُمْ حُزَمٌ مِنْ حَطَبٍ إِلَى قَوْمٍ لاَ يَشْهَدُونَ الصَّلاَةَ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهُمْ بِالنَّارِ " .
আবূ হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসালুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এশা ও ফজরের নামাজ আদায় করা মুনাফিকদের সর্বাপেক্ষা কঠিন। তারা যদি জানত যে, এ দু’টি নামাজের পুরস্কার বা সাওয়াব কত; তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বুক হেঁচড়ে হলেও তারা এ দু’ ওয়াক্ত জামাতে উপস্থিত হত। আমি ইচ্ছা করেছি নামাজ আদায় করার আদেশ দিয়ে কাউকে ইমামতি করতে বলি। আর আমি কিছু লোককে নিয়ে জ্বালানী কাঠের বোঝাসহ যারা নামাজের জামাতে আসে না তাদের কাছে যাই এবং আগুন দিয়ে তাদের ঘর-বাড়ী জালিয়ে দেই।
-(বুখারি, হাদিস: ৬৫৭; মুসলিম হাদিস: ৬৫১)
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
হাদিসটিতে তিনটি বক্তব্য এসেছে-
১. এশা ও ফজরের নামাজ মুনাফিকদের জন্য কঠিন:
এই দুই নামাজ অন্ধকারে আদায় করতে হয়। এশা রাতে এবং ফজর ভোরবেলায়, যখন অলসতা, ঘুম, আরাম-আয়েশ ইত্যাদি মানুষকে বাধা দেয়। মুনাফিকদের ঈমান দুর্বল হওয়ায় তারা এই কষ্ট স্বীকার করে না। আর মুমিনদের কাছে এটি শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের সুযোগ।
২. সওয়াব জানলে হামাগুড়ি দিয়ে আসত:
রাসুলুল্লাহ (সা.) এই উদাহরণ দিয়ে বোঝাচ্ছেন, জামাতের সওয়াব এতটাই বেশি আর এতই গুরুত্বপূর্ণ, যে মানুষ যদি জানত, তাহলে শারীরিক অক্ষমতা সত্ত্বেও তারা চেষ্টা করত। যেমন হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে যেতে চাইতো।
৩. জামাতের গুরুত্ব ও শাস্তির হুমকি:
রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠিন ভাষায় বলেছেন, তিনি ইচ্ছা করেছেন যে, নামাজে উপস্থিত না হওয়াদের ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন। এটি তিনি করেননি, কিন্তু এ কথার মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, জামাতের নামাজনা পড়া কতটা ভয়াবহ অপরাধ।
সংক্ষিপ্ত শিক্ষা ও উপকারিতা:
জামাতের নামাজ বিশেষ করে এশা ও ফজরের নামাজ আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়।
যারা এই দুই নামাজ জামাতে আদায় করে, তারা মুনাফিকদের দলে পড়ে না।
জামাতের সালাত ছেড়ে দেওয়া শুধু অলসতা নয়; এটা বড় ধরনের ঈমানের দুর্বলতা।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময় মুনাফিকদের প্রধান পরিচয় ছিল, তারা নামাজের জামাতে অংশ নিত না।
এই হাদিস জোরালো আহবান করে যে, আমরা যেন জামাতের নামাজ বিশেষ করে এশা ও ফজরের নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করি। যারা ইচ্ছা করেও মসজিদে আসে না, তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) কতটা কঠোর ছিলেন, তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, এটি কেবল ফজিলত নয়, বরং ঈমানের পরীক্ষাও।