যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

জানাজার নামাজ ও কাতার সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী?

জানাজার নামাজ হলো বিশেষ দোয়া। সমবেতভাবে এ দোয়া করা ফরজে কেফায়া। জানাজার নামাজ পড়া এবং কাতার হওয়া সম্পর্কে রয়েছে দিকনির্দেশনা। সেই সব দিকনির্দেশনা কী?

জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া। জানাজা নামাজে অংশগ্রহণ ও দাফন থাকার ফজিলত অনেক বেশি। কিন্তু একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, অনেক জানাজায় বেজোড় কাতার করতে বলা হয়। আবার কাতার সংখ্যা বেশি করতে বলা হয়। আবার অনেকেই জানাজার সময় কাতার বেজোড় করা জরুরি বলেও মনে করেন।অনেক সময় দেখা যায়, যদি কাতার জোড় তথা ২,৪, ৬ হয়ে যায়, তবে তারা তা ভেঙে ৩, ৫, ৭ ইত্যাদি বেজোড় কাতার করে দেন। এমনটি করা কি আবশ্যক?

জানাজার নামাজ ও কাতার সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনা রয়েছে। তবে কাতার বেজোড় করার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের একটি বর্ণনায় এসেছে-
১. হজরত মারসাদ ইবনু আবদুল্লাহ আল-ইয়াযানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনো করেন, যখন সাহাবি হজরত মালিক ইবনু হুবাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু জানাজার নামাজ আদায় করতেন, তখন লোকজনের উপস্থিতি কম হলে তাদের তিনি তিন সারিতে ভাগ করতেন। তারপর তিনি বলতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তির জানাজার নামাজে তিন কাতার লোক আদায় করেছে, তার জন্য (জান্নাত) অবধারিত হয়েছে। (তিরমিজি, আবু দাউদ)

২. হজরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আবিসিনিয়ার বাদশাহ) নাজ্জাশির জানাজা আদায় করেন। আমি দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় কাতারে ছিলাম। (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

ইসলামিক স্কলাররা প্রথম হাদিসের উপর আমল করতেই জানাজায় মুসল্লির সংখ্যা কম হলে তিন কাতার করার ব্যাপারে গুরুত্ব দেন। তাতেই সমাজে এ বিষয়টি প্রচলিত হয় যে, জানাজার কাতার বেজোড় হওয়া জরুরি। আসলে এমনটি ইসলামের আবশ্যক কোনো বিধান নয়।জানাজার নামাজে মুসল্লির সংখ্যা বেশি হলে কাতার জোড় হলেও সমস্যা নেই। জানাজা আদায় হয়ে যাবে। আবার জানাজার নামাজের কাতার বেজোড় না হলেও তা আদায় হয়ে যাবে।তবে জানাজার নামাজে মুসল্লির সংখ্যা কম হলে তাদের তিন সারিতে দাঁড় করানোই উত্তম বলে অনেক কেতাবে উল্লেখ করা হয়েছে। (শরহুল মুনইয়াহ, হালবাতুল মুজাল্লি, ফাতহুল বারি ও রওজাতুত্তালেবিন)

জানাজা সম্পর্কে হাদিসের অন্য বর্ণনাগুলো হলো-

১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবাগণকে নাজ্জাশির মৃত্যু খবর শোনালেন, পরে তিনি সম্মুখে অগ্রসর হলেন এবং সাহাবাগণ তাঁর পেছনে কাতারবন্দী হলে তিনি চার তাকবিরে (জানাজার নামাজ) আদায় করলেন। (বুখারি)

২. হজরত শাবি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এমন এক সাহাবি; যিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, তিনি আমাকে খবর দিয়েছেন যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি পৃথক কবরের কাছে গমন করলেন এবং লোকদের কাতারবন্দী করে ৪ তাকবিরের সঙ্গে (জানাজার নামাজ) আদায় করলেন। হজরত শাইবানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি শাবি রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করলাম, এ হাদিস কে বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। (বুখারি)

৩. হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আজ হাবাশা দেশের (আবিসিনিয়ার) একজন পুণ্যবান লোকের মৃত্যু হয়েছে, তোমরা এসো তাঁর জন্য (জানাজার) নামাজ আদায় কর। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তখন কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (জানাজার) নামাজ আদায় করলেন, আমরা ছিলাম কয়েক কাতার। আবু যুবাইর রাহমাতুল্লাহি আলাইহি জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আমি দ্বিতীয় কাতারে ছিলাম। (বুখারি)

৪. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক (ব্যক্তির) কবরের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাকে রাতের বেলা দাফন করা হয়েছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, একে কখন দাফন করা হলো? সাহাবাগণ বললেন, গত রাতে। তিনি বললেনম তোমরা আমাকে জানালে না কেন? তাঁরা বললেন, আমরা তাঁকে রাতের আঁধারে দাফন করেছিলাম, তাই আপনাকে জাগানো পছন্দ করিনি। তখন তিনি (সেখানে) দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও তাঁর পেছনে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালাম। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমিও তাঁদের মধ্যে ছিলাম। তিনি তাঁর জানাজার নামাজ আদায় করলেন।(বুখারি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জানাজা নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।