সাওবান (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা গোটা পৃথিবীকে সংকুচিত করে আমার সম্মুখে রেখে দিলেন। অতঃপর আমি এর পূর্বপ্রান্ত থেকে পশ্চিমপ্রান্ত পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করেছি। পৃথিবীর যে অংশটুকু গুটিয়ে আমার সম্মুখে রাখা হয়েছিল সে পর্যন্ত আমার উম্মতের কর্তৃত্ব পৌঁছবে। আমাকে লাল (স্বর্ণ) ও সাদা (রৌপ্য) দুই প্রকারের গুপ্তধন দেওয়া হয়েছে।
আমি আমার উম্মতের জন্য আমার প্রতিপালকের কাছে দোয়া করেছি, যেন তিনি তাদের সাধারণ দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস না করেন এবং যেন তিনি তাদের ওপর নিজেদের ছাড়া এমন কোনো শত্রুকে চাপিয়ে না দেন, যারা তাদের দলকে ভেঙে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এ কথা শুনে আমার পালনকর্তা বললেন, হে মুহাম্মদ, আমি যা সিদ্ধান্ত করি তা কখনো পরিবর্তন হয় না, আমি তোমার দোয়া কবুল করেছি। আমি তোমার উম্মতকে সাধারণ দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস করব না এবং তাদের ওপর তাদের নিজেদের ছাড়া অন্য এমন কোনো শত্রুকে চাপিয়ে দেব না, যারা তাদের সমষ্টিকে বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোক একত্র হয়ে প্রচেষ্টা করে না কেন। তবে মুসলিমরা নিজের মধ্যে পরস্পর একে অপরকে হত্যা করবে এবং একে অপরকে বন্দি করবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭১৫০)
আলোচ্য হাদিসে মহানবী (সা.) উম্মতে মুহাম্মদিকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে সুসংবাদ দান করেছেন। সর্বপ্রথম তিনি মুসলিম জাতিকে বৈশ্বিক নেতৃত্ব ও বিশ্বজয়ের সুসংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহ এই জাতিকে পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বিজয় দান করবেন এবং সমগ্র পৃথিবীতে ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়বে। আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে সর্ববিনাশী দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত করবেন না। বিশেষত একসঙ্গে মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র দুর্ভিক্ষ হবে না। হয়তো এমন হবে যে পৃথিবীর কোনো একটি মুসলিম ভূখণ্ডে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে, কিন্তু অন্যত্র তার প্রভাব থাকবে না।
আল্লাহ মুসলিম জাতির ওপর এমন কোনো আগ্রাসী শক্তি চাপিয়ে দেবেন না, যে মুসলিম জাতিকে সমূলে বিনাশ করবে। তবে মুসলমান মুসলমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবে। তারা পরস্পরের ক্ষতি করবে এবং নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনবে। আগ্রাসী শক্তি তাদের যত না ক্ষতি করতে পারবে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারবে তাদের স্বজাতির শত্রুরা। মুসলিম জাতির ব্যাপারে আল্লাহর এই সিদ্ধান্ত অপরিবর্তনীয়। ইসলামের সুদীর্ঘ ইতিহাস মহানবী (সা.)-এর দোয়ার বরকত ও সত্যতার সাক্ষ্য বহন করে।