কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

কুরআন ও তাকওয়ার পথে অগ্রসর হওয়ার মৌসুম রমযান

বছর ঘুরে আবারো বিশ্বের মুসলমানদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে রমযানুল মোবারক। রহমত ও মাগফিরাত, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধসহ অসংখ্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এ মাসের জন্য বছর জুড়ে অপেক্ষায় থাকে প্রতিটি মুমিন-মুসলমান। এ মোবারক মাসের বহু গুণ ও বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রধান দুটি হচ্ছে- তাকওয়া ও কুরআন। রমযান মাস কুরআনের মাস। এ মাসে নাযিল হয়েছে বিশ্বমানবের হেদায়েত ও কল্যাণের একমাত্র বাণী, কালামুল্লাহ-কুরআন মাজীদ। তাই এ মাসের সাথে কুরআনের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রমযান এলেই বিশ্বের মুসলমানগণ ব্যস্ত হয়ে পড়েন কুরআন তিলাওয়াতে, কুরআনের তাফসীর শ্রবণে। বিশ্বব্যাপী তারাবী নামাযে অসংখ্যবার খতম হয় পবিত্র কুরআন মাজীদ। লক্ষ লক্ষ হাফেজ ছাহেবের সুললিত কণ্ঠে আল্লাহর কালাম শুনে আপ্লুত হন মুমিন বান্দাগণ। সারা বছর তিলাওয়াতের পাশাপাশি আল্লাহর অনেক বান্দা এ মাসে কুরআন মাজীদ কয়েকবার খতমও করে থাকেন। এমনিভাবে রমযান যে তাকওয়ার মাস, আল্লাহ্কে পাওয়ার মাস, আল্লাহভক্তি ও আল্লাহভীতির মাস, তা তো রোযা ফরয হওয়ার সেই আয়াতেই বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমাদের মধ্যে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। (সূরা বাকারা : ১৮৩)। অর্থাৎ রমযানের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া। আর এ তাকওয়া মানেই হলো, নিজের ইচ্ছার ওপর স্রষ্টার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া, তাঁর নির্দেশাবলি অনুসরণ করা, নিষেধাজ্ঞাগুলো মেনে তা থেকে দূরে থাকা। 

তো রমযান কুরআনের মাস, তাকওয়ার মাস। কে না জানে, এ দুটি গুণ অর্জনের জন্য একজন মানুষকে কুরআন শিখতে হয়, সহীহ-শুদ্ধ কুরআন পড়া জানতে হয়। সাথে সাথে তাকওয়া অর্জনের জন্য শরীয়ত কর্তৃক অর্পিত আদেশ ও নিষেধ অর্থাৎ তার ওপর অর্পিত অত্যাবশ্যকীয় ফরয দায়িত্বগুলো সম্পর্কে অবগত হতে হয়, হারাম কাজগুলো সম্পর্কে জানতে হয়। তবেই সে তাকওয়া অর্জন করে জীবন পরিচালনা করতে পারে।

পরিতাপের বিষয় হলো, বিশ্বের অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত এবং ‘আগইয়ার’ তথা ভিন্নধর্মী ও ভিনদেশী বিশ্ব মোড়লদের জাঁতাকলে পিষ্ট মুসলিম উম্মাহর সমস্যা শুধু এক জায়গাতেই থেমে নেই; বরং নিজেদের ধর্মবিমুখ ফাসেক-ফুজ্জার শাসকদের জুলুম-বৈষম্যের মাঝেও তারা নিমজ্জিত। এসবের চেয়ে এখন মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, মুসলিম উম্মাহর কুরআন-বিমুখতা। সাধারণ সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায়, কুরআন কারীম পড়তে জানেন- এমন মুসলমানের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। তাদের মধ্যে শুদ্ধ তিলাওয়াত করতে পারেন- এমন লোকের সংখ্যা আরো কম।

তেমনি দৈনন্দিন জীবনে একজন মুমিন-মুসলিমের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো আরো অবহেলিত। অন্য ভাষায় বললে, মুসলমানদের মাঝে নিজেদের ফরয দায়িত্বগুলো সম্পর্কে অবগতিও দিন দিন কমে আসছে। সন্দেহ নেই, এ যুগেও উম্মতে মুসলিমার সুরক্ষা, সুদিন ফিরে আসা এবং আখেরাতে নাজাত পাওয়ার একমাত্র রাস্তা- আবার কুরআনের দিকে ফিরে আসা, আবার দ্বীনের পথে ফিরে আসা। এজন্য সকলের প্রয়োজন, সহীহ-শুদ্ধভাবে কুরআন শেখা এবং দ্বীনের মৌলিক শিক্ষা অর্জন করা।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এর জন্য কোনো বয়স বা পেশা বাধা হতে পারে না। যেকোনো বয়সে, যেকোনো পেশায় থেকে কিছু সময় বের করে, যেকোনো মুসলমান একটু উদ্যোগ নিলেই দ্বীনের মৌলিক শিক্ষাগুলো অর্জন করতে পারেন এবং কুরআন মাজীদের সহীহ-শুদ্ধ তিলাওয়াত শিখে নিতে পারেন। 

তালীমুদ্দীন একাডেমির শাখাগুলো ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন এ ধরনের খণ্ডকালীন শিক্ষার আয়োজন রয়েছে। যে সমস্ত এলাকায় আয়োজন নেই, সেখানে মুসলমানরা নিজ উদ্যোগে এ ধরনের ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। রমযানের এই মুবারক মাস কুরআন ও তাকওয়ার পথে অগ্রসর হওয়ার মোক্ষম সুযোগ। আল্লাহ তাআলা সবাইকে তাওফীক দান করুন- আমীন।

রমযানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, শাহরুল খাইরাত- দান-অনুদানের মাস। নবী কারীম (সা.) সম্পর্কে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। তাঁর দানশীলতা (অন্য সময়ের চেয়ে) অধিক বৃদ্ধি পেত রমযান মাসে, যখন জিবরীল (আ.) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। জিবরীল (আ.) রমযানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং তাঁরা পরস্পর কুরআন শোনাতেন। তো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল হয়ে উঠতেন। (সহীহ বুখারী : ০৬)।

অর্থাৎ নবী কারীম (সা.) রমযান মাসে অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি দান করতেন। বিশ্বের মুসলমানরাও তাঁর অনুসরণ করে এ মাসে তাদের দান-সদকার হাত প্রসারিত করে থাকেন; সেটাকে আরো বাড়িয়ে দিতে হবে। নিজেদের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে, নিজ দেশ তো আছেই, এমনকি বাইরেও- বিশ্বের দেশে দেশে যে সকল মাযলুম মুসলমান রয়েছেন, যে সমস্ত জায়গায় নির্যাতিত হচ্ছেন, যেকোনো সুযোগে সেখানে তাদের কাছে দান-সদকা পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে কুণ্ঠাবোধ করা যাবে না। রমযান পরবর্তী সময়ও তাদেরকে স্মরণে রাখতে হবে।
তবেই রমযান যে শাহরুল মুওয়াসাত (সহমর্মিতা-ভ্রাতৃত্ববোধের মাস), শাহরুল খাইরাত (দান-সদকার মাস)-এর সঠিক উপলব্ধি মুসলিম মানসপটে জাগ্রত হবে।