কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

রমযান মাসে নবীজী দু’হাত ভরে দান করতেন

রমযান মাস অন্য এগারোটি মাসের চেয়ে ভিন্ন। এ মাসে আমাদেরকে দিনের বেলা অন্যান্য মাসের চেয়ে বেশি সংযমী হয়ে চলতে হয়। এ মাসে কুপ্রবৃত্তিকে আরো দলিত করতে হয়। পাপকে আরো কঠোরভাবে পরিহার করতে হয়। অতীতের সব গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে হয়। পুণ্যের পথে আরো অগ্রসর হতে হয়।

পুরো রমযানকে সাজানো হয় পুণ্যের সহায়করূপে। শয়তানকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। রহমত ছেয়ে রাখে মুসলিম উম্মাহকে। এ মাস আগমনের পনেরো দিন আগে আল্লাহ তাআলা বারাআতের মতো রজনী দান করেছেন। যে রাতে হিংসুক ছাড়া সমস্ত মুমিনের ব্যাপারেই ক্ষমার ঘোষণা আছে।
ইসলাম কল্যাণের পথে যেমন ধাবিত হতে বলে, তেমনি কল্যাণের পথে চলার মতো সব আয়োজনও করে দেয়। একে অপরকেও কল্যাণের পথে সহযোগী হতে বলে। কুরআন-হাদীসে এধরনের বার্তা বহু আছে। কখনো বলেছে, সৎকাজ ও তাকওয়ার পথে পরস্পরকে সহায়তা করো। কখনো বলেছে, একে অপরকে সত্যের ওসিয়ত করো, সবরের ওসিয়ত করো।

হাদীস আমাদের বার্তা দেয়, এক মানুষ আরেক মানুষকে সহায়তা করলে আল্লাহ্ও তার সহায়তা করেন। এমনকি জালেমকেও সহায়তা করতে বলেছে ইসলাম। জালেমের সহায়তা হয় কী করে? জালেমের সহায়তা হয়, তাকে জুলুম থেকে নিবৃত্ত করার মাধ্যমে।
মনুষ মানুষকে নানাভাবেই সহায়তা করতে পারে। রমযানে মানুষকে কল্যাণ ও তাকওয়ার পথে সহায়তার একটি অংশ হল, আর্থিক অনুদান। এ অনুদান মানুষকে শ্রমসাধ্য ও ভারী কাজ কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। ফলে মানুষ সহজে রোযা রাখতে পারে। রাতের তারাবী অনায়াসে আদায় করতে পারে। আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্ত মানুষটি নিবিষ্ট মনে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতে পারে।

আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন দানের বেলায় উপমাহীন। তিনি মানুষকে দান করতেন দারিদ্র্যের ভয় না করে। একবার একজনকে দান করেছিলেন মাঠভর্তি ছাগল। এত বড় অনুদান পেয়ে লোকটি নিজ গোত্রের কাছে ফিরে বলেছিলেন, তোমরা মুহাম্মাদের দ্বীনের ওপর ঈমান আনো। তিনি এমনভাবে দান করেন, যেন দারিদ্র্যকে ভয় পান না। (সহীহ মুসলিম : ২৩১২)।
তিনি দানকে মনে করতেন স্থায়ী সম্পদ। একদিন ঘরে বকরী জবাই হল। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, কতটুকু বাকি আছে? ঘর থেকে বলা হল, কাঁধের অংশটাই শুধু আছে। বাকিটা দান করা হয়ে গেছে। নবীজী (সা.) বললেন, না বরং কাঁধের অংশ ছাড়া বাকিটা রয়ে গেছে। (জামে তিরমিযী : ২৪৭০)।

এমনই ছিল নবীজী (সা.) এর দানের হাত। রমযান মাসে রাসূল (সা.) এর দানের সীমা-পরিসীমা থাকত না। ইবনে আব্বাস (রা.) সে দানের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। তিনি রমযান মাসে সবচেয়ে বেশি দান করতেন যখন জিবরীল (আ.)-এর সাথে দেখা হত। জিবরীল (আ.)-এর সাথে দেখা হলে তিনি হয়ে উঠতেন মুক্ত বাতাসের চেয়েও দানশীল। (সহীহ বুখারী : ৬)।
ইমাম আহমাদ রাহ. মুসনাদে আহমাদে (২০৪২) বর্ণনা করেন : কেউ চাইলে তিনি না করতেন না। ইবনে উমর রা. বলেছেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মতো বড় দানশীল ও সম্ভ্রান্ত কাউকে দেখিনি। (আলইস্তিযকার, ইবনে আবদুল বার, বর্ণনা ১৯৯১২)।

এমন ছিল আমাদের নবীজীর দানশীলতা। এভাবেই তিনি দান করতেন রমযান মাসে। আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআন কারীমে আমাদের জন্য আদর্শ ও অনুসরণীয় বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, যারা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রত্যাশা করে তারা নবীজীকে আদর্শ মানে, তাঁকে অনুসরণ করে।
ইবনে রজব হাম্বালী (রাহ.) রমযান মাসে দানের অনেক ফায়েদা লিখেছেন। তার মধ্যে একটি হল, ‘রোযা রাখতে গিয়ে আমাদের কোনো না কোনো বিচ্যুতি হয়েই যায়। রোযার মাধ্যমে গোনাহ মাফ হতে হলে রোযাও সেসব ভুল থেকে মুক্ত হতে হবে, যা থেকে মুক্ত হওয়া দরকার। দান-সদকা সেসব ত্রæটি-বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ করে। এজন্যই রোযার শেষে ফিতরা ওয়াজিব করা হয়েছে- রোযাদারকে অহেতুক ও অশ্লীল কাজের গোনাহ থেকে মুক্ত করার জন্য।’ (লাতাইফুল মাআরিফ, পৃ. ২৩২)।

অনেক দিনমজুরই কষ্টসাধ্য কাজের কারণে রোযা রাখতে পারে না। আমাদের একটু উদারহস্তের দ্বারা এ মানুষগুলো বরকতময় মাসের বরকত লাভ করতে পারে। খোদার নাফরমানী থেকে বেঁচে যেতে পারে। আমাদের চোখের সামনে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করে রিকশাওয়ালারা। তাদেরকে এক বেলার ইনকাম পরিমাণ দান করলে ওই দিনের রোযাটা রাখতে পারে।

অনেক মানুষই অর্থের অভাবে সাহরী-ইফতারে ভালো খাবারের ব্যবস্থা করতে পারে না। আমার মনোযোগ ওদের সাহরী-ইফতার সহজ ও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারে। এভাবে আমরা খেয়াল করলে রমযানের বরকত সবশ্রেণি পেশার মানুষকে ছুঁয়ে যাবে। সহমর্মিতার মাসে সত্যিকার অর্থে সহমর্মী সমাজ গড়ে উঠবে।
রমযানের মতো মহিমাময় মাসে, রমযানের স্নিগ্ধ দিনগুলোতে, প্রশান্ত রাতগুলোতে আমরা যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আরো কাছাকাছি যেতে পারি। দান-সদকা ও মানবসেবার মাধ্যমে আশপাশের মানুষের রমযানগুলোকে যেন আরো সুন্দর করে তুলতে পারি।