যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

খোদাভীতি অর্জনই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য

আরবী মাসসমূহের মধ্যে রমযান মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। এ মাসটি তিনটি মহান বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় এর সম্মান সর্বোচ্চ।  প্রথমত, এ মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রোযা রাখা: দ্বিতীয়ত, এ পবিত্র মাসে কুরআন মজীদ নাযিল হওয়া; তৃতীয়ত, এ মাসের বিশেষ একটি রাত ‘লাইলাতুল কদর’ বা মহিমান্বিত রজনী হিসাবে ঘোষিত হওয়াইরশাদ হয়েছে-* “ হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে পূর্ববতী উম্মতদের মতো যাতে তোমরা পরহেযগার হও”।
* রোজার উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন :  তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জনই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য। একজন মুসলমানের শ্রেষ্ঠতম গুন তাকওয়া। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কালামে পাকে ইরশাদ করেছেন- “ যাতে তোমরা পরহেযগার হও”।
তাক্ওয়া অর্থ ভয় করা। ‘তাকওয়া’ অর্জন ছাড়া একজন ইনসানে কামিল হওয়া অসম্ভব। আর যিনি তাকওয়া গুণে বিভূষিত তিনিই মুত্তকী, মুত্তকী হওয়া গেলেই ক্বোরআন তাকে পথ প্রদর্শন করবে। এ প্রসংগে বিবৃত হচ্ছে- ‘হুদাল্লিল মুত্তাক্বীন’ বা এ কোরআন মুত্তাকীদের জন্য পথ প্রদর্শক। তবে হাদীস শরীফের আলোকে তাকওয়া হলো আল্লাহ তা’আলা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা করতে বলেছেন তা করা আর যা করতে নিষেধ করেছেন তা বর্জন করা।
রোযাদার ব্যক্তি শুধু আল্লাহ্কে খুশি করার জন্যই রোযা রেখে থাকে। আর তাই সে অসহ্য গরমে পিপাসার্ত হয়ে কলিজা ফেটে গেলেও এক ফোঁটা পানি পান করে না। ক্ষুধার জ¦ালায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হলেও খাবার মুখে দেয় না। কারণ সে মনে প্রাণে বিশস করে যে, আল্লাহ্ পাক তাকে দেখছেন। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে “ তুমি এমনভাবে ইবাদত কর যে, তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি না দেখতে পাও তা হলে মনে করবে যে, তিনি তোমাকে দেখছেন।
তাই বলা যায়- আল্লাহ পাকের ভয় আর প্রেম এ দু’য়ের সম্মিলিত এক বিশেষ অনুভূতির নাম হচ্ছে ‘তাকওয়া’। আল্লাহ পাকের ভয়ে কম্পমান ও সাথে সাথে তাঁর প্রেমে আত্মহারা ব্যক্তিরাই পারে সব ভয় ও প্রলোভন জয় করতে। ‘তাকওয়া’ গুনে গুণান্নিত হয়ে আমরা যেন আত্মশুদ্ধি করতে পারি আল্লাহ পাক যেন সেই তাওফিক দান করেন। আমিন। 
রোযার ফজিলত: * হাদিস শরীফে এসেছে, যে ঈমানদার আল্লাহ পাকের সšুÍষ্টির প্রত্যাশায় রমজানের রোজা রাখে, তার অতীতের সকল পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
হযরত আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় রমজান মাসে সিয়াম পালন করবে তার আগের  সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় রমজানের রাত নামাজে দাড়িয়ে কাটাবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদর ইবাদতে কাটাবে তারও আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম)
তাই আত্মিক ও আধ্যাতিক উন্নতির তথা মনের পবিত্রতা লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ এন দেয় রমাযানের রোযা।
এ সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে এরশাদ হয়েছে, আদম সন্তানের নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সত্তর গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সিয়াম পালন এসবের ব্যতিক্রম। আল্লাহপাক বলেন সিয়াম আমার নিজস্ব এবং এর প্রতিদান আমি নিজে দেব, কেননা সিয়াম পালনকারীরা একমাত্র আমারই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা পরিত্যাগ করে থাকে। আর অন্য বর্ণনায় রয়েছে আমিই এর প্রতিদান। 
রোজা আমারি জন্য আর আমিই এর প্রতিদান দিবো। আর অন্য বর্ণনায় রয়েছে আমিই এর প্রতিদান। অন্যান্য ইবাদতে লোক দেখানোর সম্ভাবনা থাকে কিন্তু রোযায় এই সম্ভাবনা নেই। রোযা সুধু আল্লাহ তা’আলার জন্যই হয়। অন্যান্য ইবাদতের সওয়াব নির্ধারিত রয়েছে আর তা পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু রোজার ফজিলত নির্ধারিত হয় নাই আল্লাহ পাক এর সীমাহীন সওয়াব দান করবেন। আল্লাহ পাকের নিকট সবচেয়ে প্রিয় বন্দেগী হলো রোজা। 
* মাহে রমজানে করণীয় কাজ : এই মাহে রমজানে চারটি কাজ অবশ্য করণীয়। এই চারটির মধ্যে একটি কালেমায়ে শাহাদত পাঠ করা, আর দ্বিতীয়টি হলো অধিক পরিমাণে এস্তেগফার বা ক্ষামা প্রার্থনা করা, এই দুটি কাজ আল্লাহ পাকের দরবারে অতি পছন্দনীয়। আর তৃতীয় ও চতুর্থ হলো জন্নাতের আশা করা ও দোজখ থেকে পরিত্রান প্রার্থনা করা। 
রোজার স্তর সমূহ: ইমাম গাজ্জালী রহ. তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ এহইয়াউল উলুমে রোজার তিনটি স্তরের কথা বর্ণনা করেছেন: 
১) পরম প্রিয়তম আল্লাহ্ পাকের প্রেমে বিভোর ও তন্ময় থেকে সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, কামাচার এবং সকল প্রকার পাপাচার থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিরত হওয়াই হলো প্রকৃত রোজা। ২) পানাহার কামাচার এবং যাবতীয় পাপাচার পরিহার করা। 
৩) শুধু পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত থাকা একটি রোজার সর্ব নিম্ন স্তর। 
মাহে রমযান ও ইতিকাফ: ইতিকাফ মাহে রমযানের একটি বিশেষ ইবাদত। পবিত্র ‘লাইলাতুল ক্বদর’ লাভের নিমিত্তে মাহে রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ পালন করতে হয়। ‘ইতিকাফ’ শব্দের অর্থ আবদ্ধ করে রাখা ও অবস্থান করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতের নিয়তে সর্ব প্রকার ঝামেলা মুক্ত হয়ে মসজিদে বিশেষ ধরনের অবস্থান করাকে ‘ইতিকাফ’ বলে। ২০ শে রমযান সূর্যাস্তের পূর্ব হতে শাওয়ালের নতুন চাঁদ উদয় হওয়া পর্যন্ত ইতিকাফ পালন করা ‘সুন্নাতে মু’আক্কাদা আলা কিফায়া’। অথার্ৎ মসজিদের মুসল্লিদের পক্ষ হতে বা মহল্লার মধ্য হতে কোন এক ব্যক্তি ইতিকাফ করলে তা সকল মুসল্লী বা মহল্লার সবার পক্ষ হতে আদায় হয়ে যাবে।
ইতিকাফের ফজিলত: * উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহে রমযান শরীফের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। * প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি মাহে রমযানুল মোবারকে ১০দিন ইতিকাফ করল সে যেন দু’টি হজ¦ ও দু’টি ওমরাহ পালন করল।”
* হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন: “ইতিকাফকারী গুনাহ থেকে মুক্ত থাকে এবং সমস্ত আমলকারীর মধ্যে অধিক সওয়াব তাকে দান করা হয়।” - মিশকাত
ইতকাফের নিয়ম: মসজিদের এক কোনের মধ্যে পর্দা দিয়ে ঘেরাও করে নেবে। রমযানের বিশ তারিখ আসরের নামাযের পর ঐ ঘেরাওকৃত কক্ষে অবস্থান নিতে হবে। পর্দা এমনভাবে স্থাপন করবে যেন প্রয়োজনে জামাতের সময় তা খুলে সুসল্লীদের জন্য জামাতের ব্যবস্থা করা যায়। এ স্থানে পানাহার ও শয়ন করবে এবং নিস্প্রয়োজনে এখান থেকে বের হবে না। ঈদের চাঁদ দেখা গেলে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসবে।ইতিকাফের শর্তাবলী:নিয়্যত করা: বিনা নিয়্যতে ই’তিকাফ করলে সহীহ্ হবে না।
ই’তিকাফের জন্য মসজিদ:  এমন মসজিদে ই’তিকাফ করা যেখানে নামাযের জামা’আত হয়। ইতিকাফের জন্য সর্বোচ্চ স্থান হলো মসজিদুল হারাম অত:পর মসজিদে নব্বী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এরপর বায়তুল মুকাদ্দাসে, তারপর জামে মসজিদ এবং এরপর যে মসজিদের মুসল্লী সংখ্যা বেশি। মহিলা তার ঘরে নামাযের স্থানে ইতিকাফ করবে।
মাস’আলা: ই’তিকাফকারী দু’টি প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয, একটি প্রাকৃতিক প্রয়োজন। যথা-প্রসাব-পায়খান, অযূ-গোসল। আর দ্বিতীয়টি শর’ঈ প্রয়োজন। যথা- জুমা’আর জাম’আত আদায়ের জন্য যদি যেতে হয়। এছাড়া শরীয়ত অনুমোদিত প্রয়োজন ছাড়া   মসজিদ হতে বের হলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে, কাযা ওয়াজিব হবে।
* ইতকাফকারী যেন একেবারে চুপ-চাপ না থাকে এবং দুনিয়াবী কথা-বার্তা না বলে; বরং ইতিকাফাবস্থায় ইশরাক, দ্বোহা, আউয়াবীন, শাফীউল বিতর ও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা, কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত, যিক্র-আযকার, অধিক পরিমাণে দুরূদ শরীফ পাঠ, হাদীস শরীফ, তাফসীর, ফিক্বাহ ও ধমীর্য় কিতাবসমূহ এবং নবী-ওলীগণের জীবনী পাঠ করবে। বস্থুত: সময়টি ইবাদতে অতিবাহিত করার চেষ্টা করা। ইতকাফ অবস্থায় দুনিয়ার কাজে লিপ্ত হওয়া মাকরুহে তাহরীমী। অনুরূপ ভাবে চুপ থাকাকে ইবাদত মনে করাও মাকরুহে তাহরীমী। অন্যথায় মুখের গুনাহ সমূহ হতে চুপ থাকা বড় ইবাদত।   
লাইলাতুল কদর: যে কয়টি ফজিলত মন্ডিত রজনী রয়েছে পবিত্র লাইলাতুল কদর এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। শবে ক্বদরকে কোর¦আন মাজীদে “খায়রুম মিন আলফি শাহর” অথার্ৎ হাজার মাস হতেও শ্রেষ্ঠ রাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। লাইলাতুল কদর অর্থ সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। এ রাত্রিটি হলো পুত পবিত্র ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল হয়েছে। হযরত  সে সব কারণেও লাইলাতুল কদর অতি গুরুত্বপূর্ণ। আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রা.থেকে বর্ণিত আছে যে, “জিবরাঈল আ. লাইলাতুল কদরে কুরআন মাজীদ ‘লওহে মাহফূজ’ থেকে দুনিয়ার নিকটবর্তী অর্থাৎ প্রথম আসমানের বাইতুল ইয্যত পর্যন্ত একত্রে নিয়ে আসেন। জিবরাঈল আ. সহযোগী ফেরেশতার মাধ্যমে তা লিপিবদ্ধ করান। তারপর ২৩ বছরে কুরআনুল কারীমের অংশবিশেষ (আস্তে আস্তে) নিয়ে রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসতে থাকেন। আমাদের দেশে জনগণের কাছে লাইলাতুল কদরের চেয়ে ‘শবে কদর’ বেশি পরিচিত। শব শব্দটি ফারসি, যার অর্থ রাত। তাই শবে কদরের অর্থ সম্মানিত রাত। কদরের আরেক অর্থ তাকদীর এবং আদেশ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে কোন তাফসীরকারক ‘কদর’ এর অর্থ উল্লেখ করেছেন ‘তাকদীর’। আয়-ব্যয় বা বাজেট। এটা সে রাত্রি সারা বৎসর যা কিছু ঘটবে এবং তাকদীরের ফয়সালা জারী ও কার্যকর করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক ফেরশতাদের কাছে হস্তান্তর করেন। যাতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিযিক, বৃষ্টি ইত্যাদিও পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণকে লিখে দেয়া হয়, এমনিভাবে এ বছর কে কে হজ্জ করবে তাও লিখে দেয়া হয়।
তাকদীর সংক্রান্ত বিষয়াদির প্রাথমিক ও সংরক্ষিত ফায়সালা শবে বরাতেই সম্পন্ন হয়। অত:পর তার বিশদ ব্যাখ্যা ও বিবরণ শবে কদরে লিপিবদ্ধ করা হয়। হযরত ইবনে আব্বাস রা. এর মতামতও এরূপ। বগভীর রেওয়ায়েতে তিনি বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা সারা বছরের তাকদীর সংক্রান্ত বিষয়াদির ফায়সালা শবে বরাতে সম্পন্ন করেন। অত:পর শবে কদরে এসব ফায়সালা সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাগণের কাছে হস্তান্তর করা হয় (মাযহারী)।
লাইলাতুল কদর প্রদান করার কারণ ও গুরত্ব: জগৎ বরেণ্য তাফসীরকারক হযরত মুজাহিদ রা. বলেছেন যে, “একসময় বিশ^ মানবতার অগ্রদূত হযরত রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত সাহাবাগণের সম্মুখে বনী ইস্রাঈলের শামউন নামক জনৈক আবেদের ইবাদতের কাহিনী বর্ণনা করলেন যে-তিনি হাজার মাস যাবৎ জিহাদ করেছিলেন। এ কথা শুনে সাহাবাগণ আশ্চর্য্যান্বিত ও বিহবল হয়ে পড়লেন এবং আরজ করলেন এয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার উম্মতগণ তত বেশীদিন বাঁচবেনা, কেমন করে এত দীর্ঘকালের পূণ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে? এ কথা শুনে হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ভাবতে লাগলেন ও ওহীর অপেক্ষায় রইলেন। তখন হযরত জিব্রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরম করুণাময় প্রভুর আদেশে সুসংবাদ স্বরূপ সুরা কদর সহ হযরত সাল্লাল্øাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট অবতীর্ণ হলেন এবং বললেন যে, ঐ কদরের মাত্র একটি রজনী উল্লেখিত গাজী শামাউনের এক হাজার মাসের ইবাদতের তুলনায় অধিকতর উত্তম।
এখানে মূল আয়াতে বলা হয়েছে যে, কদর রাত্রির নেক আমল হাজার মাসের নেক আমল হতেও উত্তম। আর হাজার মাস বলতে ৮৩ বছর  ৪ মাস বুঝায়। শুধু তাই নয়, বরং আরো অধিকও হতে পারে। 
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বি. থেকে বর্ণিত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান-রমযানুল মোবারকের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রগুলোর মধ্যে হয়ে থাকে। কেননা হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বি. থেকে বর্ণিত, হুজুর করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান “রমযান মাসের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ অথবা ২৯ তারিখ রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করো। (বুখারী শরীফ)
তবে সাহাবায়ে কিরাম ও ইমামগণ এ ব্যাপারে চিন্তা-গবেষণা করেছেন। সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা. থেকে বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায়- লাইলাতুল কদর হচ্ছে ২৭ রমযানের রাত। ইমাম  আজম আবু হানীফা র. ও অন্য ইমামগণ ‘লাইলাতুল কদর’ ২৭ রমযানের রাতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁরা একটি সূক্ষ্ম বিষয়ের দিকে লক্ষ করেছেন। তাহলো সুরা কদরে ‘লাইলাতুন কদর’ তিনবার উল্লেখ হয়েছে। আরবিতে ليلة القدر লিখতে নয়টি বর্ণ প্রয়োজন। সুতরাং ৩Í৯=২৭ অথার্ৎ ২৭ শে রমযান লাইলাতুল কদর হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সে হিসেবে আমাদের মধ্যে ২৭ শে রমযান অথার্ৎ ২৬ রমযানের দিবাগত রাত ‘লাইলাতুল কদর’ হিসেবে বহুলভাবে প্রচলিত। 
লাইলাতুল কদরের ফযীলত: হযর আব্দুল কাদেও জিলানী রহ. তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘গুনিয়াতুত তালেবীনে’ হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হাদীস সংকলন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরে’ আল্লাহ তা’আলা জিবরাইল আ. কে সিদরাতুল মুনতাহার সত্তর হাজার ফেরেশতা নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করার নির্দেশ দেন। তখন জিবরাঈল আ. নির্দেশ মোতাবেক ফেরেশতাদের দল নিয়ে নুরের পতাকাসহ জমীনে আগমন করেন। পৃথিবীর চারটি জায়গায় সেই পতাকা উত্তোলন করেন। ১. বায়তুল্লাহ্ বা কা’বা শরীফে, ২. বায়তুল মুকাদ্দাস, ৩. মসজিদে নব্বী ও ৪. তুরে সীনা মসজিদে। এরপর ফেরেশতাগণ সারা বিশে^ ছড়িয়ে পড়েন। প্রত্যেক মু’মিন নারী-পুরুষের (ইবাদতরত) ঘরে প্রবেশ করেন এবং উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অবশ্য যে সব ঘরে কুকুর, শূকর, প্রাণীর ছবি, মদ্যপায়ী, যেনাকারী, সুদখোর ব্যক্তি থাকে সেব ঘরে ফেরেশতারা প্রবেশ করেন না।”
লাইলাতুল কদরের আমল: তাফসীরে রুহুল বয়ানে উল্লেখ রয়েছে, যে ব্যক্তি কদর রজনীতে বিশুদ্ধ অন্তকরণে নফল নামায আদায় করবে আল্লাহ তা’আলা তার সমস্ত গুনাহ্ মাফ কওে দিবেন। 
তাছাড়া, আমাদের দেশে শবে কদরেও কমপক্ষেবার রাক্’আত নামায একাকী কিংবা জামা’আত সহকারে পড়ার নিয়ম আছে। এভাবে যে, দু’ রাক্’আতের ছয় নিয়্যতে পড়া হয়। প্রত্যেক দু’ রাক্’আতের প্রথম রাকআতে সুরা ফাতিহার পর সুরা কদর এবং দ্বিতীয় রাক্’আতে তিনবার ‘সুরা ইখলাস’(সুরা কদর মুখস্থ না থাকলে উভয় রাক্’আতে তিনবার সুরা এখ্লাস) পড়া হয়।
লাইলাতুল ক্বদরের দোয়া: হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি আমি লাইলাতুল কদর রজনী পেতে সক্ষম হই, তবে কি পড়ব? জবাবে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন আল্লাহুমা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী। হে আল্লাহ! আপনিতো ক্ষমাকারী, আপনি ক্ষমা পছন্দ করেন, তাই আমাকেও ক্ষমা করুন। অতএব, মহান আল্লাহ্ পাক লাইলাতুল কদও বা মহিমান্বিত রজনীর সমুদয় ফয়েজ বরকত ফজীলত দান করুক। আমিন
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, নবীগঞ্জ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ।