মানবতার মুক্তির দিশারী শ্রেষ্ঠ মহামানব মোহাম্মদ (সা.)স্পেনের দৃষ্টিনন্দন মসজিদ ক্যাথেড্রাল উন্মুক্তআল্লাহর সঙ্গে মুসা (আ.)-এর কথা বলার স্থানে হোটেল-রিসোর্ট বানাচ্ছে মিসরইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন জাপানি তারকা রায়ে লিল ব্ল্যাকজাহান্নামীদের শয্যা ও পোশাক
No icon

গুনাহ মুক্ত থাকতে পারা নফল ইবাদত থেকেও উত্তম

মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর পরীক্ষা। কেউ ইবাদতের মাধ্যমে নৈকট্য অর্জন করে, কেউ আবার গুনাহে লিপ্ত হয়ে ধ্বংসের পথে চলে যায়। আমাদের মাঝে একটি প্রচলিত ধারণা হলো—যত বেশি নফল ইবাদত করা যায়, ততই আল্লাহর কাছে মর্যাদা বাড়ে। নামাজ, রোজা, হজ, উমরা, সাদকা—সবকিছুতেই নফল আমল যেনো অশেষ পুণ্যের ভাণ্ডার।

কিন্তু ইসলামের গভীরতর শিক্ষায় দেখা যায়, নফল ইবাদতের গুরুত্ব অনেক। কিন্তু এর চেয়েও বহু গুণে শ্রেষ্ঠ হলো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। এ ব্যাপারে আমাদের মাশায়েখগণ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

আসলে নফল ইবাদত করলে ধন্যবাদ পাওয়া যায়, সওয়াব মেলে, আখেরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়—এটাই এর পুরস্কার। কিন্তু না করলে কোনো গুনাহ হয় না। অর্থাৎ, নফল আমল ত্যাগ করলে তার জন্য আখেরাতে জবাবদিহিতা নেই। পক্ষান্তরে গুনাহ এমন একটি বিষয়, যার জন্য অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। গুনাহ করলে শাস্তি আছে, আল্লাহর গজব আছে, আখেরাতের নাজাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়াবহ আশঙ্কা আছে।

ভাবুন, একজন মানুষ ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুআক্কাদা যথাযথভাবে আদায় করেছে। সে আলস্য বা উদাসীনতাকে স্থান দেয়নি। কিন্তু সে খুব বেশি নফল নামাজ, নফল রোজা, নফল হজ কিংবা নফল সাদকা করেনি। তবে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার পূর্ণ চেষ্টা করেছে। আল্লাহ তাআলার রহমতের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে বলা যায়, এ ব্যক্তির নাজাত নিশ্চিত হওয়ারই কথা।

কারণ আল্লাহ তাআলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন না যে—“তুমি অমুক নফল আমল কেন করোনি?” কিন্তু আল্লাহ তাআলা অবশ্যই জিজ্ঞেস করবেন—“কেন তুমি দরজা বন্ধ করে গুনাহ করেছিলে? কেন রাত জেগে ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইমুতে গুনাহে লিপ্ত হয়েছিলে? কেন তুমি চোখের হেফাজত করোনি? কেন তুমি জবানের সংযম করোনি?”

 

ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন,

 

অর্থাৎ, নফল ইবাদত অধিক করার চেয়ে গুনাহ ত্যাগ করা আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। অতএব, নফল ইবাদত নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ, কিন্তু গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা তার থেকেও মহান। কারণ গুনাহ ত্যাগ করলে আল্লাহর রহমত লাভ হয়, অন্তরে প্রশান্তি আসে এবং নফল আমলের আসল স্বাদও পরিপূর্ণ হয়।

আজকের সমাজে আমরা অনেককে দেখি, যারা নফল ইবাদতে মশগুল, কিন্তু মিথ্যা, প্রতারণা, পরনিন্দা, সুদ বা অপকর্ম থেকে নিজেদের বিরত রাখে না। এর ফলে তাদের ইবাদতের আসল বরকত নষ্ট হয়ে যায়। তাই ইবাদতের পাশাপাশি প্রতিটি মানুষের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত—গুনাহ থেকে সম্পূর্ণভাবে বেঁচে থাকা।

ইবাদত আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের উপায়, আর গুনাহ থেকে বিরত থাকা আল্লাহর গজব থেকে রক্ষার ঢাল। এই দুটোর সমন্বয়েই মানুষ প্রকৃত মুত্তাকি হতে পারে। তবে এর মধ্যে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হলো সেই ইবাদত, যা নফলের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।