আল্লাহ তাআলা তিন ধরনের লোককে কেয়ামতের দিন মেশক আম্বরের টিলার ওপর অবস্থান করাবেন। এ তিন শ্রেণির মানুষ বিশেষ ইবাদতের আমলকারী। যাদের মর্যাদা সম্পর্কে একাধিক হাদিসে সুসংবাদ দিয়েছেন বিশ্বনবি। এসব লোকদের বিশেষ পুরস্কার কী? তাদের পরিচয়ই বা কী?
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ৩ ধরণের লোক কেয়ামতের দিন মেশক আম্বরের টিলার ওপর অবস্থান করবে। প্রথম এবং শেষ যুগের মানুষ তাদের অবস্থা দেখে হিংষা পোষণ করবে। তারা হলো- ১. যে ব্যক্তি প্রতিটি রাত-দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আহ্বান (মুয়াজ্জিন) করবে।
২. যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের (নামাজের) ইমামতি করে এবং তারা তার (ওই ইমামের) ওপর সন্তুষ্ট থাকে।
৩. যে গোলাম আল্লাহর হক আদায় করে এবং মালিকের হকও (কর্মস্থলের দায়িত্ব যথাযথ) আদায় করে। (তিরমিজি)
এ ছাড়াও আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার কথা বলেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে আরও এসেছে-
১. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তি এমন যাদেরকে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন। তারা হলো- যে ব্যক্তি রাতে নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে।যে ব্যক্তি (এমন) গোপনে আল্লাহর পথে ডান হাতে দান-সাদকা করেন যে, বাম হাতও তা টের পায় না এবং
যে ব্যক্তি কোনো যুদ্ধাভিযান দলে শরিক হয় আর তার সঙ্গী-সাথীরা হেরে যাওয়ার পরও সে শত্রুর দিকে অগ্রসর হয়। অর্থাৎ যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে না। ২. হজরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ৩ ব্যক্তি এমন রয়েছে; যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন। আর তিন ব্যক্তি এমন আছে যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ঘৃণা করেন। যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন তাদের মধ্যে- যে ব্যক্তি এমন ব্যক্তিকে দান করে, যে কোনো সম্প্রদায়ের কাছে এসে কোনো আত্মীয়তার ওসিলায় না বরং আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু প্রার্থনা করে; আর সবাই কোনো কিছু দান না ওই ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেয়। তখন তাদের মাঝ থেকে এক ব্যক্তি সবাইকে পেছনে ফেলে ওঠে দাঁড়ায় এবং ওই প্রার্থনাকারীকে এমন গোপনে দান করে যে দানগ্রহীতা ও আল্লাহ ছাড়া আর কেউ এ দান সম্পর্কে জানে না।
এমন ব্যক্তি, এক সম্প্রদায় রাতের সফরে চলছে। শেষে ঘুম যখন তাদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুতে পরিণত হয় আর সবাই বালিশে মাথা রেখে দেয়; কিন্তু তখন এক ব্যক্তি নামাজে দাঁড়ায় এবং আমার কাছে কাকুতি-মিনতি ও রোনাজারি করে আর আমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করে।এমন ব্যক্তি; যে ব্যক্তি যুদ্ধাভিযানে অংশগ্রহণ করে শুত্রুর মুখোমুখি হয় এবং হেরে যায়। কিন্তু এমতাবস্থায়ও সেই ব্যক্তি শহিদ বা বিজয় লাভ না হওয়া পর্যন্ত বুক পেতে সামনে অগ্রসর হতে থাকে।
মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তাআলা ৩ ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন। যাদের চেহারার দিকে তাকাবেন মহান আল্লাহ। তারা হলো-
১. বৃদ্ধ ব্যভিচারী।
২. অহংকারী ভিক্ষুক।
এবং ৩. অত্যাচারী ধনি। (তিরমিজি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরকালের বিশেষ নেয়ামত লাভে উল্লেখিত কাজগুলো করার তাওফিক দান করুন। পরকালে আল্লাহর ভালোবাসা ও মর্যাদা লাভ করার তাওফিক দান করুন। পাশাপাশি যে ৩ শ্রেণীর মানুষের প্রতি আল্লাহ তাআলা ঘৃণা, সে সব লোকদের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদেরকে হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।